চট্টগ্রামে দিনে ‘অন্তত ৫ ঘণ্টা’ লোডশেডিং
সারাদেশে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে। তার ওপর চট্টগ্রামে ঘন ঘন লোডশেডিং সেই দুর্ভোগ দ্বিগুণ করেছে।
গতকাল সোমবার দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন রেকর্ড গড়লেও গত ৩ দিন ধরে লোডশেডিংয়ের কারণে প্রচণ্ড গরমে দুর্ভোগে পড়েছেন চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্য অনুযায়ী, সোমবার বাংলাদেশে পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো ১৫ হাজার ৬০৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে, যা নতুন রেকর্ড।
তবে দিন ও রাতে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের ভোগান্তিতে চট্টগ্রামের মানুষ এর সুফল পাচ্ছে না।
বন্দর নগরীর অধিকাংশ এলাকায় দিনে ৮ থেকে ১০ বার বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা ঘটেছে। মধ্যরাতেও লোডশেডিং হওয়ায় প্রচণ্ড গরমে বাসিন্দারা রাতে ঘুমাতে পারছেন না। জানা গেছে, গ্রামাঞ্চলে একই অবস্থা। একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে সহজে আসছে না।
পিডিবি সিস্টেম কন্ট্রোল সূত্র জানিয়েছে, সোমবার চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১ হাজার ৪৯৫ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে জাতীয় গ্রিড থেকে পাওয়া গেছে ১ হাজার ২৬৩ মেগাওয়াট। ফলে সোমবার চট্টগ্রামে লোডশেডিং হয়েছে ২৩২ মেগাওয়াট।
স্থানীয়দের ভাষ্য, দৈনিক অন্তত ৫ ঘণ্টা বন্দর নগরীতে বিদ্যুৎ থাকছে না।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা হারুন-উর-রশিদ জানান, গতকাল সোমবার নগরীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সোমবার বাতাসের আর্দ্রতা ৮০ শতাংশ রেকর্ড করা হয়েছিল, যেখানে মঙ্গলবার এটি ছিল ৭৮ শতাংশ।
'বাতাসে আর্দ্রতা যত বেশি হবে, মানুষ শরীরে তত বেশি তাপ অনুভব করবে', তিনি বলেন।
নগরীর আসকার দীঘির পাড় এলাকার বাসিন্দা শুভেচ্ছা ঘোষ বলেন, 'প্রচণ্ড গরমে পড়ার জন্য টেবিলে বসতে পারি না। মাঝরাতে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে রাতেও ঘুমাতে পারি না।'
চট্টগ্রাম কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে বর্তমানে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন শুভেচ্ছা। তিনি বলেন, 'আমি সোমবার টেলিভিশনে দেখেছি দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছে। কিন্তু আমরা কেন ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটে কষ্ট পাচ্ছি বুঝতে পারছি না।'
শুভেচ্ছার মতো নগরীর হালিশহর, বহদ্দারহাট, অক্সিজেন, আগ্রাবাদ, চকবাজার, ব্যাটারির গলি, আসকার দীঘির পাড়, আন্দরকিল্লা, শুলকবহর, পাঁচলাইশ, মুরাদপুর ও বিবিরহাট এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় গত ৩ দিন ধরে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন বহু মানুষ।
মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) নেতারা জাতীয় গ্রিড থেকে আরও বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে চট্টগ্রামে লোডশেডিং বন্ধ করতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে ক্যাব নেতারা বলেন, প্রচণ্ড গরমে স্বাভাবিক জনজীবন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে, আর লোডশেডিং এই দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
চট্টগ্রামের মানুষ বেশ কিছু দিন ধরে লোডশেডিংয়ে কষ্ট পাচ্ছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, বিভিন্ন স্থানে দিনে ৭ থেকে ৮ বার বিদ্যুৎ আসা যাওয়া করছে।
যোগাযোগ করা হলে ক্যাবের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, 'রমজানের আগে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের আশ্বস্ত করে যে রমজানে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের কোনো ঘাটতি থাকবে না। কিন্তু এখন বিদ্যুৎ ও পানির সংকটে বন্দরনগরীতে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। দৈনিক অন্তত ৫ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। চট্টগ্রাম যেন লোডশেডিংয়ের নগরে পরিণত হয়েছে।'
'আমরা শুনেছি যে চট্টগ্রামের কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। সেক্ষেত্রে সরকারের উচিত জাতীয় গ্রিড থেকে চট্টগ্রামে আরও বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা', যোগ করেন তিনি।
যোগাযোগ করা হলে পিডিবি চট্টগ্রামের সহকারী প্রধান প্রকৌশলী শম্পা নন্দী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে পিডিবি চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বিভিন্ন কারণে কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হলেও চট্টগ্রামে লোডশেডিংয়ের কারণ এটি নয়।
'আমরা সর্বদা জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ পাই', উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'আমাদের পাওয়ার স্টেশনগুলো জাতীয় গ্রিডে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরবরাহ করে, যা গ্রিড থেকে সারা দেশে বিতরণ করা হয়।'
তিনি বলেন, চট্টগ্রামে বর্তমানে দৈনিক চাহিদা প্রায় ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট হলেও জাতীয় গ্রিড থেকে প্রায় ১ হাজার ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে, যে কারণে বাধ্য হয়ে পিডিবিকে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
যোগাযোগ করা হলে পিডিবি চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, চট্টগ্রাম জাতীয় গ্রিড থেকে দৈনিক চাহিদার তুলনায় প্রায় ৩০০ মেগাওয়াট কম বিদ্যুৎ পাচ্ছে, তাই লোডশেডিং না করে কোনো উপায় নেই। তবে লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা তারা করে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
Comments