গরমে বেড়েছে এসি বিক্রি

এসি
সারা দেশে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে গত বছরের একই মৌসুমের তুলনায় এ বছর এয়ার কন্ডিশনারের চাহিদা ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেড়েছে বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ছবিটি গতকাল খুলনা নগরীর কেডিএ অ্যাভিনিউয়ের একটি শোরুমে তোলা। ছবি: হাবিবুর রহমান/ স্টার

সারা দেশেই চলছে দাবদাহ। তীব্র গরম থেকে স্বস্তি পেতে অনেকেই ছুটছেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ (এসি) যন্ত্র কিনতে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন গত কয়েকদিনে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে এসি বিক্রি। বিক্রি ভালো হওয়ায় বিক্রেতাদের মধ্যেও স্বস্তি ফিরেছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত শনিবার ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ৫৮ বছরের মধ্যে শনিবার ছিল সবচেয়ে গরমের দিন।

রাজধানীতে সবশেষ ১৯৬৫ সালে এমন তাপমাত্রা দেখা গিয়েছিল। তখন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তবে বাতাসে কম আদ্রতার কারণে এসময় গরম অনুভূত হয় তারচেয়েও বেশি।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ বছর এসির চাহিদা ২০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ বেড়েছে।

তবে এসি বিক্রির নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান পাওয়া কঠিন।

এই শিল্পখাত সংশ্লিষ্টদের মতে, বাসাবাড়ির জন্য গত বছর ৪ লাখ এসি বিক্রি হয়েছিল।  এই বছর তা বেড়ে ৫ লাখে দাঁড়াবে।

আবাসিক ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে প্রতি বছর গড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার এসি বিক্রি হয়।

মার্চ থেকে তাপমাত্রা বাড়তে থাকায় এপ্রিল, মে এবং জুন মাস এসি বিক্রি হয় সবচেয়ে বেশি।  বছরের ৯০ শতাংশ বিক্রি হয় এই সময়ের মধ্যে।

ইলেক্ট্রো মার্ট লিমিটেডের (ইএমএল) উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আফসার বলেন, 'দাবদাহের কারণে গত ১০ দিনে ঢাকাসহ সারা দেশে এসির বিক্রি বেড়েছে।'

তিনি বলেন, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এসি বিক্রি বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ।

তিনি দাবি করেন, 'যুক্তিসঙ্গত মূল্যে মানসম্পন্ন পণ্য' সরবরাহের জন্য স্থানীয়ভাবে নির্মিত এসির ক্ষেত্রে ইএমএলের কমপক্ষে ৬০ শতাংশ মার্কেট শেয়ার রয়েছে।

নুরুল আফসার জানান, প্রতিবছর তারা ইনভার্টারসহ ও ইনভার্টার ছাড়া ৩ লাখের বেশি এসি তৈরি করতে পারেন।

প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ এবং কম বিদ্যুৎ খরচ হয় বলে বর্তমানে মোট বিক্রির ৬৫ শতাংশই ইনভার্টার এসি। মাত্র তিন বছর আগেও ঘটনা ঠিক উল্টো ছিল বলে জানান তিনি।

ইনভার্টারসহ এসির চাহিদার কারণে আগামী কয়েক বছরে বাজার থেকে নন ইনভার্টার এসিগুলো বিলুপ্ত হবে বলেও মনে করেন তিনি।

ট্রান্সকম ডিজিটালের হেড অব বিজনেস রিতেশ রঞ্জন বলেন, 'তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে মার্চের মাঝামাঝি থেকে এয়ার কন্ডিশনার বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।'

উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বাজারে অন্যান্য ইলেকট্রনিক হোম অ্যাপ্লায়েন্সের চাহিদা কম ছিল বলে তিনি জানান।

ট্রান্সকম ডিজিটাল স্যামসাং, হিটাচি, ওয়ার্লপুল, ট্রান্সটেক এবং ডাইকিনের মতো বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এসি খুচরা বিক্রি করে থাকে।

রিতেশ রঞ্জনের মতে, আবাসিক ব্যবহারে চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশই ১.৫ টনের ইনভার্টার এসি।

ট্রান্সকমের মতো প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ভিশন ইলেকট্রনিক্সের এসি বিক্রিও বেড়েছে।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এসির চাহিদা বৃদ্ধির কারণে এর বাজারও দ্রুত বাড়ছে।

তিনি জানান, তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ২০২৩ সাল থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে এসির বাজার ২৫ শতাংশ কম্পাউন্ড অ্যানুয়াল গ্রোথ রেট (সিএজিআর) বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

'আমরা গত বছরের তুলনায় এ বছর ৩০ শতাংশ বেশি বিক্রির আশা করছি, বলেন তিনি।

তার মতে, ভিশন ইলেকট্রনিক্সের বার্ষিক প্রায় ৫০ হাজার ইউনিট এসি উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে।

জাপানি ইলেকট্রনিক ব্র্যান্ড জেনারেল এবং শার্পের পণ্যের একমাত্র পরিবেশক এসকোয়ায়ার ইলেকট্রনিক্সের মহাব্যবস্থাপক মোঃ মনজুরুল করিম জানান, তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে এসি বিক্রিও বেড়েছে।

তিনি বলেন, অন্যান্য হোম অ্যাপ্লায়েন্স বিক্রির মন্দাভাব কাটিয়ে তুলবে এসি বিক্রি।

ওয়ালটন এয়ার কন্ডিশনারের সিইও তানভীর রহমান বলেন, তাপপ্রবাহ চলমান থাকায় এসির চাহিদা আগের বছরের তুলনায় অনেক বেড়েছে।

তিনি বলেন, শনিবার ওয়ালটন একদিনে রেকর্ড সংখ্যক এয়ার কন্ডিশনার বিক্রি করেছে যা প্রমাণ করে যে বর্তমান পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার প্রচেষ্টায় এসির চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে।

তাদের নিজস্ব বাজার সমীক্ষা অনুসারে, ২০২২ সালে এসির বাজার ৩০ শতাংশেরও বেশি ছিল এবং ২০২৩ সালে প্রায় ১৫-২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আশা করেছিলেন।

তিনি বলেন, 'ইতোমধ্যেই এসির বিক্রি অনেক বেড়েছে। আমরা আশা করছি ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ প্রায় ৫ লাখ ইউনিট এসি বিক্রি হবে।

দেশের অন্যতম বৃহৎ এসি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা দুই লাখ ইউনিট।

Comments

The Daily Star  | English

July 5, 2024: Nationwide protests persist despite holiday

Even on a holiday, the quota reform protests show no sign of slowing. Students across Bangladesh take to the streets, block roads, form human chains, and voice their rejection of the reinstated quota system in government jobs.

6h ago