বিশ্ববাজারে কমেছে সয়াবিন তেলের দাম, কমেনি দেশের বাজারে

সয়াবিন তেলের দাম
ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমলেও দেশের বাজারে ভোক্তারা এখনো এর সুফল পাচ্ছে না।

বিশ্বব্যাংকের নিত্যপণ্যের দাম সংক্রান্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে প্রতি টন সয়াবিন তেল ১ হাজার ২৩৬ ডলারে বিক্রি হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে এই দাম ছিল ১ হাজার ৬৭৪ ডলার। সেই হিসাবে দাম কমেছে ২৬ শতাংশ।

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় বাজারে একই সময়ে ভোজ্যতেলের দাম কমেনি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটার প্রতি ১৮৭ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা ২০২২ সালের জানুয়ারিতে বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়।

ফেব্রুয়ারিতেও সয়াবিন তেলের খুচরা দাম ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির দামের চেয়ে বেশি ছিল।

মার্চে বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৯ শতাংশ বেশি। ২০২২ সালের মার্চে এর দাম ছিল ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা।

বিশ্ববাজারে এ সময়ে সয়াবিন তেলের দাম কমতে থাকলেও বাংলাদেশের ভোক্তাদের কাছে সুফল পৌঁছায়নি।

বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দাম সমন্বয় করতে দেরি করায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সমালোচনা করেছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

তবে নিত্যপণ্য ব্যবসায়ীরা দাম না কমার জন্য উচ্চ আমদানি খরচ ও ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নকে দায়ী করেছেন।

জ্বালানি ও পরিবহন ব্যয়ও বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও দেশে সে অনুযায়ী কমছে না বলে দাবি করেছেন মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের জ্যেষ্ঠ সহকারী মহাব্যবস্থাপক তসলিম শাহরিয়ার।

তিনি জানান, গত বছরের জুনে সয়াবিন তেলের দাম ছিল লিটার প্রতি ২০৫ টাকা, এখন তা ১৮০ টাকা।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত কমে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ বছরে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য প্রায় ২৫ শতাংশ কমেছে। আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবমূল্যায়ন হয়েছে।

ভোগ্যপণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার গত ২ মাস ধরে স্থিতিশীল রয়েছে এবং দামও কমছে। সুতরাং প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ৮৫ টাকা হলে ভোক্তারা আন্তর্জাতিক বাজারের দাম কমার সুফল পুরোপুরি পেত।

পণ্য আমদানিকারক ও বিপণনকারী আরেকটি বড় প্রতিষ্ঠান টিকে গ্রুপের ফাইন্যান্স অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগের পরিচালক শফিউল আথের তসলিম বলেন, 'বর্তমানে আমাদেরকে প্রতি ডলার ১১৭ থেকে ১১৮ টাকায় কিনতে হচ্ছে।'

তিনি জানান, তারা সম্প্রতি প্রতি টন গড়ে ১ হাজার ৩০০ ডলার দরে সয়াবিন তেল কিনেছেন। ঈদের পর এ পণ্যগুলো বাংলাদেশে আসবে বলে তিনি যোগ করেন।

তসলিম আরও বলেন, 'এখন পর্যন্ত স্থানীয় বাজার স্থিতিশীল রয়েছে এবং পণ্যের (ভোজ্যতেল) কোনো সংকট নেই। এটি একটি বিশাল অর্জন, কারণ কয়েক দিন আগেও ঋণপত্র (এলসি) খোলার পর ১৮০ দিনের মাঝে ব্যাংক পেমেন্ট করত। কিন্তু এখন সেই সময়সীমা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭০ থেকে ৩৬০ দিন।'

তিনি আরও বলেন, ফেব্রুয়ারিতে তাদের গ্যাস বিল ছিল ১ কোটি টাকা। মার্চে বিল বেড়ে সাড়ে ৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ভোক্তারা কীভাবে দাম কমার সুবিধা পাবে?

বাংলাদেশে যখন কোনো পণ্যের দাম বাড়ে, তখন তা খুব দ্রুত বেড়ে যায়। কিন্তু দাম কমে গেলে ব্যবসায়ীরা তা সমন্বয় করতে অনেক সময় নেয়। প্রায়ই দেখা যায়, বেশি মুনাফা করতে তারা দাম পুরোপুরি সমন্বয়ও করে না।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, 'এখানে বড় আকারে মুনাফা অর্জনের প্রবণতা গড়ে উঠেছে।'

তাই সরকারকে সরাসরি বাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। তা না হলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমানোর সুফল ভোক্তারা কখনোই পাবে না।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশে সয়াবিন তেল আমদানি বড় তিন-চার জন ব্যবসায়ীর ওপর নির্ভরশীল। বাজারে তাদের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ আছে।

এখানে সরকারের খতিয়ে দেখা উচিত, তারা বর্তমান পরিস্থিতিতে বেশি মুনাফা করছেন কি না, বলেন তিনি।

মোয়াজ্জেম বলেন, ডলারের দাম বৃদ্ধি ও ঘাটতির কারণে ব্যবসায়ীরা চাহিদামত এলসি খুলতে পারছেন না। ফলে আমদানিকারকদের মধ্যে ভবিষ্যতের কথা ভেবে বাজারে ধীরগতিতে পণ্য সরবরাহের একটা প্রবণতা থাকতে পারে। সেকারণে দামের ওপর চাপ থাকতে পারে।

তাই আন্তর্জাতিক বাজারে যতটা দাম কমেছে তার পুরোপুরি প্রভাব দেশের বাজারে পড়েনি, যোগ করেন তিনি।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Effective tariff for RMG exports to US climbs to 36.5%: BGMEA

The tariff will be a bit less if 20% of the cotton used in garment production is sourced from the USA

1h ago