তাপপ্রবাহ চলবে আরও ৭ দিন, মাস শেষে বন্যার আশঙ্কা

উত্তরে ঝরছে আম-লিচুর গুটি, দক্ষিণে তলিয়ে গেছে তরমুজ
রাজধানীতে তীব্র গরমে ক্লান্ত রিকশাচালকের বিশ্রাম। ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার ফাইল ফটো

বিদায় নিচ্ছে ঋতুরাজ বসন্ত। আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রীষ্মের আগমনের আগেই দেশের কয়েকটি অঞ্চলে তীব্র হয়েছে গরম। বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ। এতে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছে কৃষক।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে—রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগ এবং সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

আজ সোমবার দুপুরে আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আরও অন্তত ৭ থেকে ৮ দিন এই পরিস্থিতি চলতে পারে। কয়েকটি জেলায় দিনের তাপমাত্রা বাড়তেও পারে।'

'আগামী ৭ থেকে ৮ দিন পর বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। তখন তাপমাত্রা কমে স্বাভাবিক হবে। সারা দেশেই বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। তবে সিলেট অঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হতে পারে,' যোগ করেন তিনি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ধারণা করা হয়েছিল চলতি এপ্রিলে দেশে ২-৩টি মৃদু (৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থেকে মাঝারি (৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

এই বিষয়ে বজলুর রশিদ বলেন, 'প্রথম তাপপ্রবাহ দীর্ঘায়িত হয়েছে। মাসের শেষ ভাগে আরেকটি তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।'

আজ সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। সর্বনিম্ন ১৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল নীলফামারীর ডিমলায়।

চলতি মাসেই ৩ থেকে ৫ দিন বজ্রসহ মাঝারি ধরনের শিলা বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া, ১ বা ২ দিন তীব্র কালবৈশাখী ঝড়ের সম্ভাবনা আছে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা আরও বলছেন, মাসের শেষে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও এর পাশের উজানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। ধারণা করা হচ্ছে, এর প্রভাবে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে স্বল্প মেয়াদি আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

মার্চের আবহাওয়া পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সারা দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৭৭ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।

গত ১২ মার্চ সীতাকুণ্ড ও রাঙ্গামাটিতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ১ মার্চ ছিল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে শূন্য দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শূন্য দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।

ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা

তাপপ্রবাহ দীর্ঘায়িত হলে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন উত্তরাঞ্চলের চাষিরা।

নওগাঁর পোরশা উপজেলার বাসিন্দা মো. সাজ উদ্দিন শাহী। পোরশায় ১০ বিঘা জমিতে তার আম বাগান। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছরের মতো এবার অত বেশি আম আসেনি। অতিরিক্ত গরমে গুটি ঝরেও যাচ্ছে। প্রয়োজনে জমিতে সেচ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। আমাদের এখানে তেমন ব্যবস্থা নেই। বৃষ্টির ওপর নির্ভর করতে হয়।'

চাঁপাইনবাবগঞ্জের রামচন্দ্রপুর এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রশিদ সুমন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এবার যেমন গরম পড়ছে তাতে গুটি ঝরবেই। গুটি ঝরার পরিমাণ বেশি হলে আমরা ভিটামিন স্প্রে করি।'

এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৭ হাজার ৫৮৮ হেক্টর জমি থেকে ৪ লাখ মেট্রিক টন আম পাওয়া যাবে বলে আশা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার ডেইলি স্টারের সংবাদদাতা রবিউল হাসানকে বলেন, 'এখানে গরমের তীব্রতা বেশি। গতকাল তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে সেই কারণে নয়, স্বাভাবিক নিয়মেই আমের গুটি ঝরছে।'

'আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি—তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে গাছের পাতায়, আমের গুটিতে ঠান্ডা পানি স্প্রে করতে,' বলেন তিনি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক শামসুল ওয়াদুদ ডেইলি স্টারের প্রতিবেদক আনোয়ার আলীকে বলেন, 'আম গাছে ফল ধরেছে। কয়েক দিন আগে বৃষ্টি হওয়ায় তাপপ্রবাহে আমের তেমন ক্ষতির আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে না। তবে এখন ফুল আসছে এমন ধানের জমিতে পানি না থাকলে সমস্যা।'

কৃষকদের এই বিষয়ে সচেতন করতে কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

ডেইলি স্টারের পাবনা সংবাদদাতা আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু জানিয়েছেন, ঈশ্বরদীতে আকস্মিক বৃষ্টির কারণে বেশিরভাগ লিচু গাছে আশানুরূপ সংখ্যক গুটি না আসায় ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তলিয়ে গেছে তরমুজ

বৃষ্টির কারণে তলিয়ে গেছে পটুয়াখালী ও বরগুনার তরমুজ খেত।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছর মোট ২৮ হাজার ৭৪৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। এর মধ্যে বৃষ্টিতে ১ হাজার ২৯৩ হেক্টর জমির তরমুজ খেত নষ্ট হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নজরুল ইসলাম ডেইলি স্টারের সংবাদদাতা সোহরাব হোসেনকে বলেছেন, 'পটুয়াখালীতে প্রায় ৫০ হাজার টন তরমুজ নষ্ট হয়েছে। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা (২০ টাকা কেজি দরে)।'

বরগুনার ১৫ হাজার ৮৩৮ হেক্টর জমির মধ্যে ২৪ হেক্টর জমির তরমুজ বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে।

বরগুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক বদরুল আলম জানিয়েছেন, কৃষকের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২ কোটি টাকা।

প্রায় ৪ একর জমিতে এবার তরমুজ চাষ করেছিলেন বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়া গ্রামের কৃষক মনিরুল ইসলাম।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্যাংক ও স্বজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ৩ লাখ টাকায় এবার তরমুজ চাষ করেছিলাম। বৃষ্টিতে পুরো খেত তলিয়ে গেছে। প্রায় আড়াই লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।'

Comments

The Daily Star  | English

A rush to heal exposed banking wounds

In October, a video on social media showed the manager of Social Islami Bank’s Agargaon branch breaking down in tears after enduring harsh verbal abuse from frustrated customers seeking to withdraw cash.

1h ago