বেনজেমার হ্যাটট্রিকে বার্সেলোনাকে গুঁড়িয়ে ফাইনালে রিয়াল

ছবি: এএফপি

নিজেদের মাঠে প্রথম লেগে হারায় জয়ের কোনো বিকল্প ছিল না রিয়াল মাদ্রিদের সামনে। ফাইনাল নিশ্চিত করতে সেই সঙ্গে অন্তত দুই গোলের ব্যবধান রাখার চাহিদা ছিল লস ব্লাঙ্কোদের। করিম বেনজেমার দ্বিতীয়ার্ধের হ্যাটট্রিকে ঘুরে দাঁড়ানোর আরেকটি দুর্দান্ত কাব্য লিখে সব সমীকরণ মিলিয়ে ফেলল তারা।

বুধবার রাতে কোপা দেল রের সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে তেজদীপ্ত ফুটবল উপহার দিয়েছে রিয়াল। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনাকে তাদের মাঠ ক্যাম্প ন্যুতেই ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যরা। দুই লেগ মিলিয়ে ৪-১ অগ্রগামিতায় জিতে তারা জায়গা করে নিয়েছে আসরের শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে। সেখানে তাদের অপেক্ষায় আছে ওসাসুনা।

আগের লেগে প্রতিপক্ষের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ১-০ গোলে জিতেছিল বার্সা। তবে এদিন নিজেদের ডেরায় তাদেরকে পুরোপুরি নাস্তানাবুদ করে ছাড়ে রিয়াল। ফরাসি স্ট্রাইকার বেনজেমার অসাধারণ হ্যাটট্রিকের আগে প্রথমার্ধে সফরকারীদের এগিয়ে দেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র।

২০১৩-১৪ মৌসুমের পর এবারই প্রথম কোপার ফাইনালে উঠল প্রতিযোগিতার ১৯ বারের চ্যাম্পিয়ন রিয়াল। ওইবার তারা শিরোপা জিতেছিল বার্সেলোনাকেই ফাইনালে ২-১ গোলে হারিয়ে। আর ওসাসুনা মাত্র দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালের টিকিট পেয়েছে। এর আগে ২০০৪-০৫ মৌসুমে তারা হয়েছিল রানার্সআপ। এবার আসরের আরেক সেমিতে দুই লেগ মিলিয়ে অ্যাথলেতিক বিলবাওকে ২-১ গোলে হারায় তারা।

টানা দ্বিতীয় ম্যাচে হ্যাটট্রিকের স্বাদ নিলেন বেনজেমা। লা লিগায় রিয়ালের সবশেষ খেলায় বার্নাব্যুতে হ্যাটট্রিক করেছিলেন ৩৫ বছর বয়সী তারকা। চলমান মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৩১ ম্যাচে তার গোল বেড়ে হলো ২৫টি।

উত্তেজনাপূর্ণ লড়াইয়ে বেশ কয়েক দফা তর্কাতর্কি ও ধাক্কাধাক্কিতে জড়িয়ে পড়েন দুই দলের খেলোয়াড়রা। সব মিলিয়ে মোট ১২টি হলুদ কার্ড দেখান রেফারি। এর মধ্যে কোচ জাভি হার্নান্দেজসহ বার্সার আটজন ও রিয়ালের চারজন কার্ড পান।

বল দখলে কিছুটা এগিয়ে ছিল স্বাগতিকরা। তাদের পায়ে ৫৩ শতাংশ সময় ছিল বল। তবে আক্রমণে কার্যকারিতা দেখাতে পারেনি তারা। অন্যদিকে, রিয়াল যতবার উপরে উঠছিল, তার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তৈরি হচ্ছিল বিপজ্জনক পরিস্থিতি। প্রতিপক্ষে গোলমুখে নয়টি শট নিয়ে তারা লক্ষ্যে রাখে সাতটি।

এগিয়ে থেকে খেলতে নামা বার্সার শুরুটা ছিল উজ্জ্বল। ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই রিয়ালের রক্ষণে হানা দেয় তারা। স্প্যানিশ মিডফিল্ডার গাভির ভয়ঙ্কর ক্রস রাফিনহার কাছে পৌঁছানোর আগেই স্লাইড করে বাধা দেন এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা। দুই মিনিট পর গাভির শট ডি-বক্সের ভেতরে ডেভিড আলাবার হাতে লাগলে পেনাল্টির আবেদন করে বার্সেলোনা। তবে মেলেনি রেফারির সাড়া। দশম মিনিটে সার্জি রবার্তোর শট ব্লক করেন অস্ট্রিয়ান ডিফেন্ডার আলাবা।

১২তম মিনিটে সুযোগ আসে রিয়ালের। রদ্রিগো দারুণ ক্ষিপ্রতায় আক্রমণে উঠে দূরের পোস্টে বল বাড়ান ব্রাজিলিয়ান সতীর্থ ভিনিসিয়ুসের উদ্দেশ্য। ছুটে গিয়ে বল ক্লিয়ার করেন রোনালদ আরাউহো। দুই মিনিট পর বার্সা পরীক্ষায় ফেলে প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়াকে। আলেহান্দ্রো বালদের ক্রসে রাফিনহার জোরালো হেড লুফে নেন বেলজিয়ান তারকা।

গোলশূন্যভাবে যখন প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার উপক্রম, তখনই আসে গোল। রবার্ত লেভানদভস্কির শট দারুণ দক্ষতায় আটকে দেন কর্তোয়া। এরপর পাল্টা আক্রমণে বার্সার জাল কাঁপায় রিয়াল। বেনজেমার সঙ্গে বল আদান-প্রদান করে ডি-বক্সের ভেতরে ভিনিসিয়ুস নেন ডান পায়ে শট। ফরাসি ডিফেন্ডার জুলস কুন্দের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বল পেরিয়ে যায় গোললাইন।

দুই লেগ মিলিয়ে সমতায় ফেরার আত্মবিশ্বাস নিয়ে বিরতির পর উজ্জীবিত পারফরম্যান্স দেখায় রিয়াল। দ্বিতীয়ার্ধের পঞ্চম মিনিটে তারা ব্যবধান দ্বিগুণ করে যায় ফাইনালের পথে এগিয়ে। ক্রোয়েশিয়ান অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার লুকা মদ্রিচের দর্শনীয় পাসে দূরের পোস্টে লক্ষ্যভেদ করেন বেনজেমা। দুই মিনিট পর বালদের শট ঠেকিয়ে দলের জাল অক্ষত রাখেন কর্তোয়া।

৫৮তম মিনিটে বার্সেলোনার ফেরার আশা ক্ষীণ হয়ে যায়। স্পট-কিক থেকে ফের প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগেনকে পরাস্ত করেন বেনজেমা। ভিনিসিয়ুসকে ডি-বক্সের মধ্যে ফ্রাঙ্ক কেসিয়ে ফাউল করায় রেফারি বাজান পেনাল্টির বাঁশি। দুই মিনিট পরই আবার গোলের উল্লাস করতে পারত রিয়াল। মদ্রিচ ছয় গজের বক্সের মধ্যে বল ফেললেও ফাঁকা জালে তা ঠেলে দেওয়ার জন্য সময়মতো পৌঁছাতে পারেননি রদ্রিগো।

বদলি নামা মার্কো আসেনসিওকে ৭৮তম মিনিটে কর্নারের বিনিময়ে গোলবঞ্চিত করেন টের স্টেগেন। তবে দুই মিনিট পর ২০২২ সালের ব্যালন ডি'অর জয়ী বেনজেমার হ্যাটট্রিক আটকাতে পারেননি জার্মান গোলরক্ষক। ভিনিসিয়ুসের পাসে জাল খুঁজে নেন তিনি। এই স্কোরলাইন ধরে রেখে ফাইনালে ওঠার আনন্দ নিয়ে মাঠ ছাড়ে আনচেলত্তির দল।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh alleges border abuse by BSF

Those pushed-in allege torture, abuses in India

A Bangladeshi woman has alleged that India’s Border Security Force (BSF) tied empty plastic bottles to her and her three daughters to keep them afloat, then pushed them into the Feni river along the Tripura border in the dark of night, in a chilling account of abuse at the border.

3h ago