চ্যাটজিপিটি যেসব কারণে ইতালিতে নিষিদ্ধ

ছবি: সংগৃহীত

গত ৩০ মার্চ ইতালির তথ্য সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ 'জিপিডিপি' দেশটিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। দেশটি বলছে, চ্যাটজিপিটি যতক্ষণ না পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) তথ্য সুরক্ষা আইন (জিডিপিআর) মেনে চলবে, ততদিন পর্যন্ত এটি নিষিদ্ধ থাকবে।

ইতালির কর্তৃপক্ষ বলছে, চ্যাটজিপিটি বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে ইইউর তথ্য সুরক্ষা আইনের বরখেলাপ করেছে।

চ্যাটজিপিটি নিয়ে জিপিডিপির উদ্বেগগুলোকে ৫ ভাগে ভাগ করা যায়।

ব্যক্তিগত সুরক্ষা আইনের লঙ্ঘন

প্রতিষ্ঠানটির সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হচ্ছে, চ্যাটজপিটি ক্রমাগত ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে। এটি তাদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইনের লঙ্ঘন। চালু করার আগেই চ্যাটজিপিটিকে বিভিন্ন বিষয়ে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। তারপরও এটি যথাযথ উত্তর দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের কিছু তথ্য ব্যবহার করে। ইতালির সরকার চায় যারা গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে কাজ করে তারা যাতে ইইউর প্রাইভেসি আইন অনুসরণ করে। এখানেই ওপেনএআইয়ের (চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান) ঘাটতি আছে।

অহেতুক ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ

প্রাইভেসি আইন লঙ্ঘনের পাশাপাশি ইতালির সরকার দাবি করছে, চ্যাটজিপিটির অ্যালগরিদমকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ওপেনএআই যে বিশাল পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবহার করেছে, তার কোনো আইনি যৌক্তিকতা নেই। ইতালির কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, চ্যাটজিপিটির উত্তরে মাঝেমাঝে তথ্যগত ভুল হয়। তাই চ্যাটজিপিটি ভুল তথ্য সংগ্রহ করে থাকতে পারে, এমন সন্দেহ থেকে যায়।

তথ্য সংগ্রহে স্বচ্ছতার অভাব

এসবের বাইরেও চ্যাটজিপিটি কোন ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ করছে, সেটি গ্রাহককে জানায় না। এটি ইইউর গোপনীয়তা নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

বয়স যাচাইকরণ ব্যবস্থার অভাব

ইতালির কর্তৃপক্ষ বলছে, ১৩ বছরের কম ব্যবহারকারীদের 'অনুপযোগী' তথ্য সরবরাহ করছে চ্যাটজিপিটি। কারণ এখানে ব্যবহারকারীর বয়স যাচাইকরণের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই। এটি ইইউর নিয়মের আরেকটি লঙ্ঘন। ইইউর নিয়মে বলা আছে, ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবহারের জন্য গ্রাহকের স্পষ্ট অনুমতি লাগবে এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে তারা নিজেরা নিজেদের তথ্য সংগ্রহের ব্যাপারে অনুমতি দিতে পারবে না।

তথ্য ফাঁসের ঝুঁকি

চলতি বছরের ২০ মার্চ চ্যাটজিপিটির তথ্য ফাঁসের একটি ঘটনাকে উদ্ধৃত করে ইতালির কর্তৃপক্ষ উদ্বেগ জানিয়েছে যে, এই চ্যাটবটটি থেকে তথ্য ফাঁসের ঝুঁকি রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ইউরোপোলও সম্প্রতি চ্যাটজিপিটির সাহায্যে অপরাধীদের প্রতারণা ও সাইবার ক্রাইম  করার আশঙ্কা আছে বলে উদ্বেগ জানিয়েছে।

ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোও কী ইতালিকে অনুসরণ করবে?

ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিডিপিআরকে বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন গোপনীয়তা সংক্রান্ত আইন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইতালি চ্যাটজিপিটি নিষিদ্ধ করায় এটা বোঝা যায়, ইউরোপে ব্যক্তিগত গোপনীয়তাকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়। আয়ারল্যান্ডের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও ঘোষণা দিয়েছে, তারা জিডিপিডির সিদ্ধান্তটি নিবিড়ভাব পর্যালোচনা করছে। যুক্তরাজ্য বলেছে তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করবে না। তবে এটিকে অবশ্যই তথ্য সুরক্ষা আইনের মধ্যে থাকতে হবে।

এদিকে ইতালি বলছে, চ্যাটজিপিটির বিরুদ্ধে তাদের এই নিষেধাজ্ঞা সাময়িক। দেশটির কর্তৃপক্ষ ওপেনএআইর কাছে এই প্রযুক্তির বিস্তারিত জানতে চেয়েছে। ওপেনএআইয়ের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে কর্তৃপক্ষ দেখবে এটি দেশটির প্রচলিত নিয়ম লঙ্ঘন করে কি না। যদি নিয়ম লঙ্ঘন করে, তাহলে হয়তো এই নিষেধাজ্ঞা স্থায়ী রূপ পেতে পারে।

তথ্যসূত্র: মেকইউজঅব

গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল

 

Comments

The Daily Star  | English
probe committee for past elections in Bangladesh

Govt launches probe into last 3 national polls

The government has formed a committee to investigate allegations of corruption, irregularities, and criminal activities in the three national elections held in 2014, 2018, and 2024.

3h ago