অ্যান্ড্রয়েডের যে ৬ অ্যাপ জনপ্রিয় হলেও বিপজ্জনক

অ্যান্ড্রয়েডের যে ৬ অ্যাপ জনপ্রিয় হলেও বিপজ্জনক

ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষায় এবং নিত্যদিনের ব্যবহার্য অ্যান্ড্রয়েড ফোনটিকে নিরাপদ রাখার জন্য সতর্ক থাকাটা জরুরি। এমন অনেক অ্যাপই রয়েছে, যা হয়তো জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে বেশ তুঙ্গে কিন্তু ফোনের জন্য অনিরাপদ। 

আজকের এ লেখায় এমনই ৬টি অ্যাপ সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। 

ইউসি ব্রাউজার 

বিশেষত ভারত ও চীনে বহুল ব্যবহৃত ও অন্যতম জনপ্রিয় ইউসি ব্রাউজার। এই ব্রাউজারটি দাবি করে দ্রুতগতির ব্রাউজিংয়ের। ডেটা কমপ্রেশনের কারণে এই সুবিধাটি পাওয়া গেলেও সমস্যা সৃষ্টি হয় অন্য জায়গায়। 

ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে ইউসি ব্রাউজার একেবারেই সচেতন নয়। সব সার্চ কুয়েরি কোনো এনক্রিপশন ছাড়াই পাঠিয়ে দেওয়া হয় ইয়াহু ইন্ডিয়া ও গুগলের কাছে। একজন ব্যবহারকারীর আইমএসআই-আইএমইয়াই নাম্বার, অ্যান্ড্রয়েড আইডি এবং ওয়াইফাই ম্যাক অ্যাড্রেস, ইত্যাদি সব তথ্যই চলে যায় উমেং নামের একটি আলিবাবা অ্যানালিটিক টুলের কাছে। 

এ ছাড়া লংগিচিউড-ল্যাটিচিউড এমনকি রাস্তার নাম্বারসহ ব্যবহারকারীর লোকেশন সংক্রান্ত সব তথ্যই জমা হয় আলিবাবার ম্যাপিং টুল অ্যামাপ-এর কাছে। এ কারণে ইউসি ব্রাউজারকে মোটেও নিরাপদ কোনো ব্রাউজার বলা চলে না। 

ডলফিন ব্রাউজার

কোনো বিজ্ঞাপন নেই, ফ্ল্যাশ সাপোর্ট রয়েছে এমন ব্রাউজার সকলেরই পছন্দের তালিকায় উপরের দিকে থাকে। ৫০ মিলিয়নেরও বেশিবার ডাউনলোড করা হয়েছে– এমনই একটি ব্রাউজিং অ্যাপ হচ্ছে ডলফিন ব্রাউজার। তবে পূর্বোল্লিখিত ইউসি ব্রাউজারের মতোই এরও রয়েছে ব্যবহারকারীকে 'ট্র্যাক' করার বাতিক। এমনকি ইনকগনিটো মোডে গিয়েও বাঁচা যাবে না এ ব্রাউজারে, কেন না সেই মোডের ভিজিটকৃত সব তথ্যই ফোনের একটি ফাইলে জমা করা থাকে। এ ছাড়া ভিপিএন ব্যবহারের সময় এই ব্রাউজারটি আইএসপি অ্যাসাইনড অ্যাড্রেসও খোলাসা করে দেয়। তাই চটকপূর্ণ বিজ্ঞাপন দেখে এই ব্রাউজারটি ব্যবহার না করাই ভালো। 

সুপার ভিপিএন 

অ্যান্ড্রয়েডের ভিপিএন অ্যাপগুলোর মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় হচ্ছে সুপার ভিপিএন। এর রয়েছে ১০০ মিলিয়নেরও বেশিবার ডাউনলোডের রেকর্ড। তবে সম্প্রতি সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা এই অ্যাপের দুর্বলতাগুলোর দিকে নজর দেন, যার ফলে ফোন হ্যাক হওয়াও সম্ভব। ক্রেডিট কার্ড নাম্বার, ছবি এবং ব্যক্তিগত কথোপকথনের মতো সংবেদনশীল সব তথ্য পাচার হয়ে যেতে পারে এই অ্যাপটির মাধ্যমে। বিভিন্ন ঝামেলাপূর্ণ ওয়েবসাইটে রিডিরেক্ট করে ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার জন্য বিশেষ হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে এটি। 

ক্লিন ইট 

মূলত জাংক ফাইল পরিষ্কার করার জন্যই এই অ্যাপটি ইনস্টল করা হয়েছে ১০ মিলিয়ন সংখ্যক বার। এমনকি এর ৮৫ শতাংশই আবার ৫ তারকা রিভিউ। কিন্তু এত জনপ্রিয় এই অ্যাপটি মোটেও ভালো নয় ফোন বা ব্যবহারকারী– কারো জন্যই। এর চটকদার বিজ্ঞাপনের অধিকাংশই ফোনের জন্য ক্ষতিকর। যেমন, ক্যাশে ডেটা পরিষ্কারের মাধ্যমে এটি ফোনের গতি কমিয়ে দেয়, র‍্যাম পরিষ্কার করার মাধ্যমে ব্যাটারি ব্যবহারের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং রানিং অ্যাপগুলোকে মুছে ফেলা আদতে ব্যাটারিকে রক্ষাও করে না। 

অ্যান্টি-ভাইরাস অ্যাপ

প্লে-স্টোরে বিভিন্ন অ্যান্টি-ভাইরাস বা ভাইরাস ক্লিনার দেখা যায়। এগুলো সরাসরি ক্ষতিকর না হলেও বেশ অপ্রয়োজনীয় বটে। তবে কেউ যদি গুগল প্লে স্টোর ব্যতীত কোনো থার্ড-পার্টি সোর্স থেকে ফোনে সফটওয়্যার ইনস্টল করে, তাহলে অ্যান্টি-ভাইরাস অ্যাপগুলোতে নজরে রাখা দরকার। কেন না এতে বিভিন্ন ম্যালওয়্যারের আশঙ্কা থেকে থাকে, যার উপর গুগলের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই ভাইরাসবিরোধী অ্যাপ যদি ভাইরাস ডেকে আনে, তা হবে নিজে থেকে খাল কেটে কুমির আনার মতোই বোকামি।

ডিউ ব্যাটারি সেভার অ্যান্ড ফাস্ট চার্জার

অনেক বেশি ফোন ব্যবহার করার সমস্যা হচ্ছে আমরা সকলেই যত বেশি সময় সম্ভব ব্যাটারির চার্জ ধরে রাখতে চাই। আর এই চিন্তা থেকেই ইনস্টল করা হয় বিভিন্ন ব্যাটারি সেভার কিংবা ফাস্ট চার্জার অ্যাপ। এটিও তেমনই একটি অ্যাপ। ডাউনলোড সংখ্যা আকাশচুম্বী হলেও ফাইভ স্টার রিভিউর দিক দিয়ে অত্যন্ত পিছিয়ে আছে অ্যাপটি। কারণটা বোধহয় এই যে, এটি কথা আর কাজে মোটেও এক নয়। প্রথমত, কোনো অ্যাপের আসলে ফোন দ্রুত চার্জ করার কোনো সামর্থ্য নেই। এবং অতিমাত্রায় বিজ্ঞাপনের কথা তো বলাই বাহুল্য। লক স্ক্রিন হোক বা নোটিফিকেশন বার, এই অ্যাপের বদৌলতে সারাক্ষণই বিজ্ঞাপনে ছেয়ে থাকে ফোনের পর্দা। আকর্ষণীয় সব স্পিড গ্রাফ আর অ্যানিমেশনগুলোও পুরোপুরি ভাঁওতাবাজি। 

 

তথ্যসূত্র: দ্য সেকেন্ড অ্যাঙ্গেল, এমইউও 

গ্রন্থনা: অনিন্দিতা চৌধুরী

 

Comments

The Daily Star  | English

65pc of suicide victims among students are teens: survey

Teenagers (aged 13-19) made up 65.7% of 310 students who died by suicide in 2024, according to a survey by Aachol Foundation.

1h ago