আমি মোল্লা নজরুলের বিরুদ্ধে কথা বলেছি, পুলিশের বিরুদ্ধে নয়: মাহি

মাহিয়া মাহি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে চান্দিনা চৌরাস্তা এলাকায় তার স্বামী রকিব সরকারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ছবি: সংগৃহীত

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পুলিশ ও এক ব্যবসায়ীর মামলায় দুপুরে গ্রেপ্তার হয়ে সন্ধ্যায় জামিনে কারামুক্ত হয়েছেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। মুক্তি পেয়ে তিনি বলেছেন, 'আমি শুধু মোল্লা নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। আমি পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলিনি।'

মোল্লা নজরুল ইসলাম গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার।

শনিবার সন্ধ্যায় গাজীপুর জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে মাহি চান্দিনা চৌরাস্তা এলাকায় তার স্বামী রকিব সরকারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান 'সনি রাজ কার সেন্টার' এ যান। সেখানেই তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগের কথা বলেন।

মাহি বলেন, 'আমি পুলিশ নিয়ে কোনো কথা বলিনি। বিভিন্ন সময় আমার অনেক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। আমি সামনে থেকে পুলিশ প্রধানকে দেখেছি। বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা জানেন মানুষকে কীভাবে সম্মান করতে হয়। আমি শুধু ব্যক্তি মোল্লা নজরুলের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। আমি পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলিনি।'

মাহি বলেন, আমি কোনো রাষ্ট্রদ্রোহী না। আমি কেবলমাত্র একজনের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। সে ডিজিটাল আইনে মামলা করেছে। আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। আমি সুপরিচিত হওয়ার পরও আমার সঙ্গে যে নির্যাতন হয়েছে এতে আমি ভীত সন্ত্রস্ত। যখন গাড়িতে করে আমাকে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন আমি বার বার বলছিলাম আমার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। তারা বলতেছে এভাবেই যেতে হবে। আমি পানি চাইছিলাম। একটু পানি দিতে তাদের এক ঘণ্টা লেগেছে। একজন অন্তঃসত্ত্বা নারী হিসেবে আমার সঙ্গে মানবিক আচরণ করা হয়নি।

'আমাকে বিমানবন্দরে গ্রেপ্তারের পর থেকে গাজীপুরের পুলিশ যে ব্যবহার করেছে সেই অভিজ্ঞতা খুব খারাপ। তাদের ব্যবহার দেখে মনে হয়েছে আমি একজন যুদ্ধাপরাধী। আমার মামা ও অন্য স্বজনরা গিয়েছিলেন এয়ারপোর্টে। তাদের সঙ্গে আমাকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। মামাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। পুরো এয়ারপোর্ট ফাঁকা করে ফেলেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমাকে যখন আদালতে নেওয়া হয়েছে, বিচারক একটা কথাও জিজ্ঞাসা করেনি। আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের একটা সুযোগতো দেবেন। বিচারক শুধু চেয়ারে বসলেন আর উঠলেন। বিচারককেও কোনো কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। শুধু বলা হলো, মাহিয়া মাহি উপস্থিত হয়েছেন। কোর্ট শুরু করা হলো। আবার সঙ্গে সঙ্গে বলা হলো, মাহিয়া মাহি কারাগারে যাচ্ছেন, কোর্ট মূলতবি ঘোষণা করা হলো। ওনাকে কারাগারে পাঠাও। এটা কী ধরনের বিচার?'

'আমি যখন আদালতে ছিলাম, তখন বারবার পুলিশ বলছিল, উনাকে রিমান্ডে নিতে হবে। আমি একজন ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আমাকে রিমান্ডে নিয়ে তারা কী বের করবে? এমন পরিস্থিতিতে আমি আমার স্বামীকে নিয়ে ভীত। আমাকে যেমন মানসিক, শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। সে দেশে আসলে তাকেও রিমান্ডে নেওয়া হবে, তাকেও নির্যাতন করা হবে।'

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় চিত্রনায়িকা মাহিকে শনিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ।

পরে দুপুর সোয়া ১টার দিকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইকবাল হোসেনের আদালতে নিয়ে মাহির ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। সেসময় মাহির পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। এ কারণে আদালতের বিচারক রিমান্ড মঞ্জুর না করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে তাকে গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

পরে পরিবারের সদস্যরা মাহির জন্য আইনজীবী নিয়োগ করেন। বিকেল ৫টার দিকে একই আদালতে মাহির জামিন চেয়ে আবেদন করেন আইনজীবীরা। সেই আবেদন বিবেচনা করে তাকে দুটি মামলাতেই জামিন দেন আদালত।

ফেসবুক লাইভে মাহি ও তার স্বামী রকিব সরকার মানহানিকর তথ্য প্রচার করে আইনশৃঙ্খলা অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করেছেন, এমন অভিযোগে পুলিশ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে। গাজীপুর মেট্রোপলিটনের বাসন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ রোকন মিয়া বাদী হয়ে শুক্রবার রাত ৯টার দিকে মামলাটি করেন। একই দিনে তাদের আসামি করে গাজীপুরের এক ব্যবসায়ী আরেকটি মামলা করেন।

মাহি ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাপারে জিএমপি কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম শুক্রবার ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন, 'ফেসবুকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তোলেন মাহি। পুলিশের বিরুদ্ধে ঢালাও অভিযোগ করেছেন তিনি। তারা পুলিশকে বিতর্কিত করার মিশনে নেমেছেন। অথচ মাহি বা তার স্বামী জমিজমা সংক্রান্ত কোনো বিষয় নিয়ে আমার কাছে আসেননি। যাদের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ করেছেন, তাদেরও আমি চিনি না। পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ।'

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

12h ago