আন্তর্জাতিক নারী দিবস

যে জেলার ৭ ইউএনওর প্রত্যেকেই নারী

বা থেকে নাটোর সদর উপজেলার ইউএনও সারমিনা সাত্তার, বাগাতিপাড়ার নীলুফা সরকার, সিংড়ার মাহমুদা খাতুন, লালপুরের শামীমা সুলতানা, নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ, বড়াইগ্রামের মারিয়াম খাতুন, গুরুদাসপুরের শ্রাবণী রায় এবং নলডাঙ্গার রোজিনা আক্তার। ছবি: সংগৃহীত

আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,

আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন।

বনলতা সেন কবি জীবনানন্দ দাসকে সত্যিই দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিলেন কি না, তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তবে নাটোরের জেলার ৭ উপজেলার সাধারণ মানুষকে সেবা দিয়ে হৃদয় জয় করছেন ৭ জন নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।

বাংলাদেশের প্রথম জেলা নাটোর, যেখানে প্রতিটি উপজেলায় ইউএনওর দায়িত্বে রয়েছেন নারীরা।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি সিংড়া উপজেলায় মাহমুদা খাতুনের পদায়নের মাধ্যমে নাটোরে শতভাগ উপজেলা পায় নারী ইউএনও।

মাহমুদা খাতুনের পাশাপাশি নাটোর সদর উপজেলায় সারমিনা সাত্তার, নলডাঙ্গায় রোজিনা আক্তার, বাগাতিপাড়ায় নীলুফা সরকার, লালপুরে শামীমা সুলতানা, বড়াইগ্রামে মারিয়াম খাতুন এবং গুরুদাসপুরে শ্রাবণী রায় দায়িত্ব পালন করছেন।

নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, 'নারীর ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রী নানান উদ্যোগ নিয়েছেন। সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবেই নাটোর পেয়েছে ৭ জন নারী ইউএনও। বাংলাদেশের প্রথম জেলা নাটোর, যেখানে সবগুলো উপজেলাতেই নারী ইউএনও দায়িত্ব পালন করছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'মেধা, দক্ষতা ও চ্যালেঞ্জ গ্রহণের একাগ্রতা নিয়ে পুরুষের সঙ্গে সমতালে কাজ করে যাচ্ছেন নারীরা। জেলা প্রশাসক হিসেবে এখানে কাজ করার সুযোগ পাওয়াটা আমার জন্য আনন্দের। কারণ, এটা ইতিহাসের অংশ হয়ে গেল।'

লালপুরের ইউএনও শামীমা সুলতানা বলেন, 'অনেকেই মনে করেন, নারী কর্মকর্তা এক ধরনের দুর্বলতা। কিন্তু আমি মনে করি, নারী কর্মকর্তা মানেই একটি ইতিবাচক ও শক্তিশালী শব্দ।'

নাটোর সদর উপজেলার ইউএনও সারমিনা সাত্তার বলেন, 'এটা নিশ্চই আমাদের জন্য সৌভাগ্য। অসহায় নারীরা যখন বিশ্বাস নিয়ে আমাদের কাছে আসেন, আমাদেরকে আপন মনে করে তাদের সব সমস্যার কথা অকপটে খুলে বলেন এবং ভরসা করেন ন্যায়বিচার পাওয়ার, তখন একজন নারী কর্মকর্তা হিসেবে প্রশান্তি পাই এবং সকল পরিশ্রম সার্থক বলে মনে হয়।'

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট নাটোর জেলা কমিটির সভাপতি উম্মে খাইরুন নাহার বিজলী বলেন, 'এক সময় নাটোরের মেয়েরা কেবল ঘরের কোনেই বন্দি থেকেছেন। রান্না করা, ঘরের অন্যান্য কাজ করা, গোবর তোলা—এসবই যেন ছিল নাটোরের মেয়েদের কাজ। এখন সময় বদলেছে। এর পাশাপাশি এই ৭ জন ইউএনওকে দেখে তরুণীরা আরও উজ্জীবিত হবে। মেয়েরা দেশ গড়ার কাজে আরও অবদান রাখতে অনুপ্রাণিত হবে।'

নাটোরের মহিলা পরিষদ সভানেত্রী শ্যামা বসাক বলেন, 'নারীদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সফলভাবে পালন করতে দেখলে প্রাণ ভরে যায়। মনে হয়, আমাদের আন্দোলন সফল হয়েছে।'

শুধু এই ৭ ইউএনওই নন, নাটোরের সিভিল সার্জন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, বিচারক এমনকি ২টি পৌরসভার মেয়র হিসেবেও সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা।

Comments

The Daily Star  | English

Enforced disappearances: Eight secret detention centres discovered

The commission raised concerns about "attempts to destroy evidence" linked to these secret cells

10m ago