ফেব্রুয়ারিতে ৪৪৭ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪৬৭, আহত ৭৬১
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৪৪৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৬৭ জন নিহত ও ৭৬১ জন আহত হয়েছেন।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌ-পথে দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীর সই করা এক বিবৃতিতে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
তবে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) বলছে, ফেব্রুয়ারি মাসে সারাদেশে ৩০৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩০৩ জন নিহত ও ৪১৬ জন আহত হয়েছেন। বিআরটিএর বিভাগীয় অফিসগুলোর মাধ্যমে সারাদেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আজ মঙ্গলবার একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে সরকারি এই সংস্থা।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেব্রুয়ারিতে রেলপথে ৪৬টি দুর্ঘটনায় ৩৯ জন নিহত ও ৭ জন আহত হয়েছে। নৌপথে ১৪টি দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত ও ২৭ জন আহত হয়েছেন। তবে নৌ দুর্ঘটনায় ১৫ জন নিখোঁজ হয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, সড়ক, রেল ও নৌপথে ফেব্রুয়ারিতে মোট ৫০৭টি দুর্ঘটনায় ৫২২ জন নিহত ও ৭৯৫ জন আহত হয়েছেন। এ মাসে ১৫৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৫৯ জন নিহত ও ৮২ জন আহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত-নিহতদের মধ্যে ১৭২ জন ছিলেন চালক, ৯৩ জন পথচারী, ৩৪ জন পরিবহন কর্মী, ৬২ জন শিক্ষার্থী, ১৪ জন শিক্ষক, ৫ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৯৪ জন নারী, ৬৭ জন শিশু, ১ জন সাংবাদিক, ১ জন আইনজীবী ও ১ জন প্রকৌশলী এবং ৯ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।
এ সময়ে ১৩ দশমিক ৭১ শতাংশ বাস, ২৭ দশমিক ০৯ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ৭ দশমিক ১৯ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস, ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ২৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১২ দশমিক ০৪ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৮ দশমিক ০২ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৫৭ দশমিক ৭১ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ১৯ দশমিক ০১ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ৮ দশমিক ০৫ শতাংশ বিবিধ কারণে ঘটেছে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারিতে সংগঠিত দুর্ঘটনার ৩১ দশমিক ৯৯ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২১ দশমিক ৭০ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৩৮ দশমিক ৯২ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে।
৭ ফেব্রুয়ারি সর্বোচ্চ ২৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত ও ৩৫ জন আহত হন।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে সড়ক দুর্ঘটনার যেসব কারণ উঠে এসেছে, সেগুলো হলো-বেপরোয়া গতি, বিপদজনক ওভারটেকিং, ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা ও বেপরোয়া মনোভাব, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ ও ট্রাফিক আইন অমান্য করা, ছোট যানবাহনের ব্যাপক বৃদ্ধি, রাস্তার পাশে হাট-বাজার, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন রাস্তায় নামানো, চালকের নিয়োগ ও কর্মঘণ্টা সুনির্দিষ্ট না থাকা, দেশব্যাপী নিরাপদ ও আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থার পরিবর্তে টুকটুকি-ইজিবাইক-ব্যাটারিচালিত রিকশা, মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা নির্ভর গণপরিবহন ব্যবস্থার দিকে ধাবিত হওয়া।
Comments