১১ মার্চ বিভাগীয় শহরে গণতন্ত্র মঞ্চের মানববন্ধন

পদযাত্রার আগে গণতন্ত্র মঞ্চের সংক্ষিপ্ত সমাবেশ। ছবি: সংগৃহীত

সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ১১ মার্চ ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে মানববন্ধন করবে গণতন্ত্র মঞ্চ।

আজ শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পদযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, 'গণতন্ত্র মঞ্চের পরিবর্তী কর্মসূচি হবে আগামী ১১ মার্চ ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগে মানববন্ধন। এই মঞ্চের সব শরিক সংগঠনগুলোকে অনুরোধ করব, আপনারা বিভিন্ন বিভাগের নেতাদের জানিয়ে দিন ঢাকাসহ বিভাগীয় মানববন্ধন সফল করার জন্য।'

'গণতন্ত্র মঞ্চকে আরও শক্তিশালী হয়ে মাঠে নামতে হবে। এজন্য সবাই প্রস্তুতি নিন', বলেনি তিনি।

সকাল সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের কাছে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাকর্মীরা সমবেত হন। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে তারা কাকরাইলে নাইটিঙ্গেল রেস্তোরাঁ মোড়ে পদযাত্রা শেষ করেন।

যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপিসহ সমমনা জোট ও দলগুলো শনিবার সারাদেশে থানায় থানায় পদযাত্রা করছে।

সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, 'তথাকথিত সংলাপের কথা-বার্তা বাজারে ছাড়ছেন। কার সঙ্গে সংলাপ? যিনি আমাদের ডেকে নিয়ে সংলাপে (২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে) বললেন, তার স্বর্গীয় পিতার উদ্ধৃতি দিয়ে বললেন, তার কসম খেয়ে বললেন, আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, আমি মিথ্যা কথা বলতে পারি না। আমি বলছি আপনারা নির্বাচনে আসেন। আমরা এই নির্বাচন সম্পূর্ণ গ্রহণযোগ্য, সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত করব।'

'সেই নির্বাচনের ফলাফল আপনারা (জনগণ) দেখেছেন। অতএব যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি না যাচ্ছেন, তার এই সব কোনো কথাই বিশ্বাস করছি না। যদি সংলাপ করতে চান আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেন। তারপর আমাদের কথা আছে। আমরা কী হলে সত্যি সত্যি আপনাদের মতো মিথ্যুকদের সঙ্গে কথা বলতে পারি, সেই কথা ঠিক করব', যোগ করেন তিনি।

মান্না বলেন, 'আমরা স্পষ্ট করে বলি, আমরা এখন পর্যন্ত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ মেনে আন্দোলন করছি। কিন্তু এই সময়েরও একটা সীমা আছে। সেই সীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা যদি থাকে, তাহলে প্রয়োজনে গলায় গামছা বেঁধে যাতে আমাদের দাবি আদায় করতে পারি আমরা সেই চেষ্টা করব।'

'আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের দাবি আদায় করতে চাই। সেই লক্ষ্যে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। সেটা করতে থাকব। আমরা বিজয় অর্জন করব- এই প্রত্যয় আমরা করি', বলেন তিনি।

ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল বলেন, 'সরকার অনেক খেলাধুলা শুরু করেছে। ইতোমধ্যে সরকার সংলাপ নিয়ে কথা-বার্তা বলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা এর আগেও বলেছি, সংলাপ হতে পারে একটি শর্তে, সেটা হলো- আপনারা কীভাবে পদত্যাগ করবেন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে আপনাদের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে। আগে আপনাদের ঘোষণা দিতে হবে নির্বাচনের পূর্বে আপনারা ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াবেন।'

'কারণ আমাদের স্পষ্ট ঘোষণা, গণতন্ত্র মঞ্চ কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। সরকার পদত্যাগের ঘোষণা আগে দিলে তখন আমরা বিবেচনা করে দেখব, সংলাপে যাব কি যাব না', বলেন তিনি।

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, 'আমাদের কর্মসূচির দিনে আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশের নাম করে দেশে একটা অশান্তি সৃষ্টি করার পায়তারা করছে। ভয় ও আতঙ্কের কারণে ইতোমধ্যে মানুষ এর নাম দিয়েছে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ।'

'এই শান্তি সমাবেশ কার্যত একটা নার্ভাস সমাবেশে পর্যবসিত হয়েছে। কখন কী হয়? শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে ওরা ভয় পাচ্ছে। আমাদের গণতন্ত্র মঞ্চের দলগুলোর ওপর হামলা করছে। আওয়ামী লীগ প্রমাণ করছে তারা গণতান্ত্রিক ধারার রাজনৈতিক দল থেকে এখন পুরোপুরি একটা সন্ত্রাসী রাজনৈতিক দলে পর্যবসিত হয়েছে। সন্ত্রাস না করে আওয়ামী লীগের পক্ষে অবৈধ ক্ষমতায় আজকে টিকে থাকা সম্ভব না। সেজন্য তারা প্রতিনিয়ত বিরোধীদলের ওপর হামলা করছে, মামলা করছে, গ্রেপ্তার করছে, বলেন তিনি।

ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নিয়ন্ত্রণহীন দৌরাত্ম্য-সন্ত্রাস এবং কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর ওপর নির্মম নির্যাতনের কঠোর সমালোচনা করেন তিনি।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকি বলেন, 'আজকে নির্লজ্জের মতো একটা সরকার যখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে, কীভাবে মানুষকে স্বস্তি দেওয়া যায় তার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে বরং এই দ্রব্যমূল্য যারা বাড়াচ্ছে, কীভাবে আরও সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্য বাড়ানো যায়, আরও টাকা হাতিয়ে নেওয়া যায়, হাজার হাজার টাকা লুট করা যায় তার ব্যবস্থা করছে। আর সেখান থেকে কীভাবে ভাগ বসানো যায়, সেই কাজে ব্যস্ত মন্ত্রী-আমলাসহ সরকারের সব লোকেরা।'

'এভাবে তারা জনগণের জীবনকে আরও দুর্দশার মধ্যে ঠেলে দিয়ে, তাদের জীবনের নাভিশ্বাস তুলে কীভাবে টাকা কামিয়ে নেওয়া যায়, আর বিদেশে পাচার করা যায় তার ব্যবস্থা করছে। কারণ এদের কোনো চিন্তা নেই। এরা মনে করছে দ্রব্যমূল্য যতই বাড়ুক আমাদের হাতে দুটি অস্ত্র আছে, সেই অস্ত্র দিয়ে আমরা ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখব। একটা হচ্ছে- আমরা দেশের মানুষকে ভয় দেখাব। আরেকটা- ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য বিদেশি প্রভুদের খুশি করা', বলেন তিনি।

জুনায়েদ সাকি বলেন, 'আমরা পরিষ্কার করে বলে দিতে চাই, যেভাবে লুটপাট করে দেশকে ফোকলা বানিয়ে দিয়েছে, এটা জনগণ পরিষ্কারভাবে বুঝে গেছে। এই লুটপাটের জমিদারি রক্ষা করার জন্যই আপনারা ক্ষমতাকে আঁকড়ে রাখতে চান।'

'কাজেই এবার আর দমনপীড়ন আর বিদেশিদের খুশি করে আপনারা রেহাই পাবেন না। জনগণ আপনাদের রেহাই দেবে না। সারাদেশে মানুষ রাজপথ দখলে নিয়ে আপনাদের গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা থেকে নামাবে। সেই লড়াইয়ের এখন প্রস্তুতি চলছে', যোগ করেন তিনি।

ভাসানী অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজুর সঞ্চালনায় সমাবেশে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন এবং বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

5h ago