রাশিয়া-ইউক্রেন এখন বাংলাদেশের গমের প্রধান উৎস

স্টার ফাইল ছবি

ভারত গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর বাংলাদেশের জন্য এই খাদ্য শস্যের প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় হওয়া শস্য চুক্তির অধীনে ইউক্রেন থেকে কৃষ্ণ সাগরের ওপর দিয়ে ইউক্রেনের গম রপ্তানি হচ্ছে।

আমদানিকারকরা বলছেন, গত বছরের জুলাইয়ে চুক্তির কয়েক মাস পরে তারা উভয় দেশ থেকেই গম আমদানি শুরু করেছেন। গত বছরের মে মাসে ভারত গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া ফলে যে আমদানি ঘাটতি তৈরি হয়েছিল, তা পূরণ হয়েছে।

মার্কিন কৃষি বিভাগ বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি প্রতিবেদনে বলেছিল, আমদানিতে সময় কম লাগা, কম পরিবহন খরচ ও ভৌগোলিক নৈকট্যের কারণে আমদানি সুবিধাজনক হওয়ায় প্রতিবেশী দেশটি বাংলাদেশের জন্য গমের প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০২১-২২ বিপণন বছরে বাংলাদেশের মোট আমদানি করা গমের ৬৭ শতাংশ আসে ভারত থেকে। এরপর রয়েছে কানাডা, ইউক্রেন, অস্ট্রেলিয়া ও রাশিয়া।

চট্টগ্রামভিত্তিক পণ্য আমদানিকারক বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বাশার চৌধুরী বলেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর কয়েক মাস ধরে কৃষ্ণ সাগর অঞ্চল দিয়ে আমাদের আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।

তিনি বলেন, 'এখন, ইউক্রেন ও রাশিয়া ধীরে ধীরে গমের প্রধান উৎস হয়ে উঠছে।'

বাংলাদেশে বার্ষিক ৭৫ লাখ টন গমের চাহিদার বিপরীতে প্রায় ১১ লাখ টন উৎপাদিত হয়। বাকিটা আমদানি করা হয়।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৪০ দশমিক ১২ লাখ টন গম আমদানি করেছে এবং চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আমদানি করা হয়েছে মোট ১৭ দশমিক ৫৭ লাখ টন গম।

গম আমদানিকারক নাবিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, কৃষ্ণ সাগর চুক্তির পর রাশিয়া, ইউক্রেন ও কানাডা এখন গমের প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে।

তিনি জানান, চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত এই ৩টি দেশ থেকে সামগ্রিকভাবে আমদানি প্রায় ১৪ লাখ টন।

তিনি বলেন, 'গম পেতে এখন আর কোনো সমস্যা নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে যথেষ্ট সরবরাহ রয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, ''ডলার ঘাটতির কারণে এখন সমস্যা এলসি খোলা। এই সমস্যা কেটে গেলে গম আমদানি বাড়বে।'

রয়টার্স জানিয়েছে, জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় 'ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভে'র কল্যাণে গত জুলাইয়ে ইউক্রেনের ৩টি বন্দর থেকে শস্য রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

এই চুক্তি নভেম্বরে ১২০ দিনের জন্য বাড়ানো হয় এবং আগামী মার্চে আবার বাড়ানোর কথা রয়েছে।

মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র সহকারী মহাব্যবস্থাপক তসলিম শাহরিয়ার বলেন, 'পথে বেশ কিছু চেক থাকায় ইউক্রেন থেকে গম আমদানি করতে এখন বেশি সময় লাগছে। যুদ্ধ শেষ হলে সময় কম লাগবে।'

তিনি বলেন, 'ইউক্রেন-রাশিয়া অঞ্চলের পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই অঞ্চলটি বাংলাদেশের জন্য গমের প্রধান উৎস। বাংলাদেশে গম সরবরাহের জন্য কৃষ্ণ সাগরের শস্য চুক্তির মেয়াদ আরও বাড়ানোটি গুরুত্বপূর্ণ।'

ইউক্রেনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে গত শুক্রবার রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই চুক্তি বাড়ানোর বিষয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে আলোচনা শুরু হবে।

নাবিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, 'এই চুক্তি নবায়ন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তা না হলে আমাদের জন্যও সমস্যা হবে।

চলতি বছরে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টন গম আমদানি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

আমিনুল ইসলাম জানান, ২০২২ সালে তার প্রতিষ্ঠান ১৮ লাখ টন শস্য আমদানি করেছে।

Comments

The Daily Star  | English

PSC announces major changes to ease BCS recruitment process

The PSC chairman says they want to complete the entire process — from prelims to recruitment — in 12 months

2h ago