‘নিম্নমানের বালু’ দিয়ে তৈরি হচ্ছে তিস্তার তীর রক্ষায় সিসি ব্লক

গোবর্ধান এলাকায় তিস্তার বালু দিয়েই তৈরি হচ্ছে তিস্তা নদীর তীর রক্ষা প্রকল্পের সিসি ব্লক। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

তিস্তার তীর রক্ষার জন্য ব্যবহৃত সিসি ব্লক তৈরি হচ্ছে তিস্তা নদীর 'নিম্নমানের বালু' দিয়ে। এ ছাড়া, নিম্নমানের সিমেন্ট ও পাথর ব্যবহারেরও অভিযোগ রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় মহিষখোঁচা ইউনিয়নে তিস্তা নদীর ২ হাজার ৪৫০ মিটার তীর রক্ষার কাজ চলছে। ৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮টি প্যাকেজে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

তিস্তাপাড়ে নদী ভাঙনকবলিত মানুষের অভিযোগ, তিস্তার বালুর সঙ্গে নিম্নমানের সিমেন্ট ও পাথর মিশিয়ে সিসি ব্লক তৈরি করা হচ্ছে। পানির স্রোতে এসব সিসি ব্লক টিকতে পারবে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকেন, এ বিষয়ে অবগত রয়েছেন, কিন্তু কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছেন না।

তারা জানান, তিস্তার বালু দিয়ে সিসি ব্লক তৈরি করায় ঠিকাদাররা বালুতে ১ কোটি টাকার বেশি খরচ সাশ্রয় করছেন। তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজটি নিয়ন্ত্রণ করছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের এপিএস ও আদিতমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান। তার বাড়ি মহিষখোঁচাতে। তার পক্ষে তার ছোট ভাই এরশাদ হোসেন কাজের তদারকি করছেন।

প্রকল্পটি সিডিউল মোতাবেক বাস্তবায়ন করার দাবি তিস্তাপাড়ের মানুষের। কিন্তু হয়রানির ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ কথা বলার সাহস পান না।

সিসি ব্লক নির্মাণ শ্রমিকরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সিমেন্ট এক ভাগ, বালু আড়াই ভাগ ও পাথর ৫ ভাগ ব্যবহার করে সিসি ব্লক নির্মাণ করার কথা থাকলেও বালুর পরিমাণ ৪-৫ ভাগ দেওয়া হচ্ছে। ক্রাসিং পাথরের সঙ্গে স্থানীয় পাথর মিশ্রণ করা হচ্ছে। বাজারের সবচেয়ে কম দামের সিমেন্ট ব্যবহার করে এই সিসি ব্লকগুলো তৈরি হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, তিস্তার তীর রক্ষার কাজে প্রতিটি ২৫০ কেজি ওজনের বালুভর্তি এক লাখ ৩০ হাজার জিও ব্যাগ, ৪৫ বর্গ সেমি সাইজের ১ লাখ ৫১ হাজার ১০৮টি, ৩৫ বর্গ সেমি সাইজের ২ লাখ ১৫ হাজার ৮৮টি ও ৪০ বর্গ সেমি সাইজের ৮৮ হাজার ৩৯৪টি সিসি ব্লক নির্মাণ করা হচ্ছে। সিসি ব্লক নির্মাণ সম্পন্ন হলে মার্চ মাস থেকে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে সিসি ব্লকগুলো ব্যবহার করা হবে। আগামী বর্ষার আগেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের এপিএস ও আদিতমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমানের সঙ্গে এই অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই কাজ করছে।'

তার ছোট ভাই এরশাদ হোসেন দাবি করেন, 'তিস্তার বালু টেস্ট করে ১ দশমিক ৫ এফএম পাওয়া গেছে। তাই এই বালু দিয়ে সিসি ব্লক তৈরি হচ্ছে। মাঝে মাঝে তিস্তার বালুর সঙ্গে পাটগ্রাম থেকে আনা উন্নতমানের বালু মিশ্রণ করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীদের নজরদারিতে সঠিক নিয়মে সব উপকরণ মিশ্রণ করে সিসি ব্লক তৈরি হচ্ছে।'

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সিসি ব্লক তৈরিতে বালুর ফাইননেস মুডুলাস কমপক্ষে ১ দশমিক ৫ হতে হবে, কিন্তু তিস্তার বালুতে ১ দশমিক ৩ পর্যন্ত পাওয়া গেছে। সেই হিসাবে তিস্তার বালু নিম্নমানের। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নজরদারিকে ফাঁকি দিয়ে তিস্তার বালু দিয়ে সিসি ব্লক তৈরি হলে তা টেস্টে ধরা পড়বে। টেস্টে সিসি ব্লকে নিম্নমান ধরা পড়লে সেগুলো বাতিল করা হবে। এতে ঠিকাদারই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। টেস্ট ছাড়া কোনো সিসি ব্লক ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে না।'

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda acquitted in Zia Charitable Trust graft case

The HC scraped the trial court verdict that sentenced Khaleda and two others in the same case.

1h ago