বিদেশি কর্মী নিয়োগে ‘এজেন্সি’ বন্ধের নির্দেশনা মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর

মালয়েশিয়ায় কর্মরত অভিবাসী কর্মী। ছবি: সংগৃহীত

বিদেশি কর্মী নিয়োগে তৃতীয় পক্ষের (এজেন্সি) হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে চান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম।

গতকাল বুধবার দেশটির মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, 'মালয়েশিয়ায় কর্মী হিসেবে আসতে নেপালের শ্রমিকদের খরচ মাত্র ৩ হাজার ৭০০ রিঙ্গিত। কিন্তু বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার শ্রমিকদের জন্য তা ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার রিঙ্গিত।'

তিনি বলেন, এজেন্টদের এই উচ্চ ফি 'আধুনিক দাসত্বের' সমতুল্য।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর অতিরিক্ত খরচের হাত থেকে বিদেশি কর্মীরা রেহাই পাবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে মালয়েশিয়া মর্যাদাবান হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশটির প্রধানমন্ত্রীর এমন সদিচ্ছায় সন্তুষ্টিও জানিয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

মালয়েশিয়ায় কাজ করতে আসা বিদেশি কর্মীদের বর্ধিত খরচের জন্য দায়ী করা হয় রিক্রুটিং এজেন্টদের। তাদের নেওয়া উচ্চ ফি এর কারণে শ্রমিকদের প্রায়ই উচ্চ সুদে ঋণ নিতে বা জমি বন্ধক রাখতে বাধ্য হতে হয়।

আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা অভিবাসী কর্মীদের বিদেশ যেতে অনাকাঙ্ক্ষিত উচ্চ খরচ হওয়াকে 'দাসের শ্রম' বা ফোর্স লেবার এবং মানবপাচার হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই ২টি অভিযোগে মালয়েশিয়া থেকে আমেরিকা ও ইউরোপের মার্কেটে মালয়েশিয়ান পণ্য প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

বেশ কয়েকটি স্থানীয় হ্যান্ড গ্লোভ প্রস্তুতকারক কোম্পানি তাদের বর্তমান ও সাবেক বিদেশি কর্মীর অতিরিক্ত অভিবাসন খরচ ফেরত দিয়ে সেই অভিযোগ থেকে মুক্ত হতে পেরেছে। কেননা কোম্পানি ও কর্মী উভয়ই এই উচ্চ খরচের পদ্ধতি মেনে নিতে বাধ্য হয়।

সম্প্রতি মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল বাংলাদেশ ও নেপাল সরকারের সঙ্গে অভিবাসন খরচ ও প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন।

মালয়েশিয়ান নিয়োগকর্তারা নামমাত্র বা শূন্য খরচে কর্মী নিয়োগ করার ইচ্ছা বিভিন্ন সময় সরকারকে জানিয়েছে। তারা নিশ্চয়তা চেয়েছে, উৎস দেশের কর্মীর অতিরিক্ত কোনো খরচ হবে না।

গত ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন মানবসম্পদ মন্ত্রী এম সারাভানান নিয়োগকর্তাদের বলেছিলেন, যারা বিদেশি কর্মী নিয়োগ করতে চান তারা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে না করে যেন সরাসরি মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে।

সারাভানান আরও বলেছিলেন, নিয়োগকারী সংস্থাগুলোর আবেদন অবিলম্বে প্রত্যাখ্যান করা হবে।

২০১৮ সালে তার পূর্বসূরি এম কুলাসেগারন বলেছিলেন, মন্ত্রণালয় নিয়োগকারী এজেন্টদের ভূমিকা পর্যালোচনা করবে।

কিন্তু সবশেষ ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার মধ্যকার সমঝোতা স্মারকে উভয় দেশের বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির কাজ করার সুযোগ রাখা হয়েছে। আগে জিটুজি প্লাসের সময় মাত্র ১০টি বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী প্রেরণ করার সুযোগ পেলেও এবার প্রায় ১০০ রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী পাঠাচ্ছে। কিন্তু সেখানে সমঝোতা স্মারকে উল্লিখিত অভিবাসন খরচের সীমা অতিক্রম করেছে।

সরকারকে ফাঁকি দিয়ে লাগামহীন খরচ আদায় করা হচ্ছে।  ফলে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী আগমনের পরিমাণ নেপালের তুলনায় খুবই কম।

মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তারা অধিক খরচের কর্মী এনে 'দাসের শ্রম', মানবপাচার এবং অর্থ ফেরত প্রেরণের দায় গ্রহণ করতে ইচ্ছুক নয়। এমনকি, খরচের অর্থ ফেরত পেতে অনেক কারখানায় বাংলাদেশি কর্মীদের অসন্তোষের ঘটনাও ঘটেছে।

লেখক: মালয়েশিয়াপ্রবাসী সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

DMC suspends MBBS classes amid student protest, orders to vacate halls

The authorities also directed all students to vacate their hostels by 12:00pm tomorrow

32m ago