কর হার না, করদাতার সংখ্যা বাড়াতে চাই: প্রধানমন্ত্রী
বৈশ্বিক অর্থনীতিক মন্দার ধাক্কা সামলাতে করদাতার সংখ্যা বাড়াতে হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, 'আমি মনে করি, এখানে কোনো জোর-জুলুম খাটবে না। মানুষকে কোনো ভয়-ভীতিকর পরিস্থিতিতে ফেলা যাবে না। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।'
আজ রোববার দুপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন এবং রাজস্ব সম্মেলন-২০২৩ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা চাই, আমাদের দেশটা এগিয়ে যাক এবং বাংলাদেশ কারো ওপর নির্ভরশীল থাকবে না, আত্মনির্ভরশীল হবে। আত্মমর্যাদাশীল হবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের এটাই লক্ষ্য। আমি মনে করি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড যুগোপযোগী নীতি প্রণোয়ন করে এই ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।'
তিনি বলেন, 'আমাদের অর্থনীতির গতিশীলতা চমৎকার ছিল। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, এই কোভিড-১৯ এর অতিমারি, সেই সঙ্গে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, স্যাংশন-পাল্টা স্যাংশনের ফলে বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে, মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। তার ধাক্কাটাও আমাদের ওপর এসে পড়েছে। এটা মোকবিলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সেটা যেতে পারবো, আমরা যত বেশি কর আদায় করতে পারবো, দেশের উন্নয়নে কাজ করতে পারবো—তাহলেই এটা সম্ভব।'
'এই ক্ষেত্রে আমি মনে করি, আমাদের কর বৃদ্ধির আরও সুযোগ নিতে হবে। আরও বেশি মানুষ যেন কর দেয় তার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। যেহেতু এখন মূল্যস্ফীতি, আমরা কর হার বৃদ্ধি করতে চাই না কিন্তু করদাতার সংখ্যা আমরা বাড়াতে চাই। সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখা দরকার,' বলেন প্রধানমন্ত্রী।
স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু দায়িত্বভার গ্রহণ করার পরের পরিস্থিতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'সেই সময় কিন্তু আমাদের সরকারি কর্মকর্তাদের পূর্ণ বেতনও দিতে পারতেন না। যে কারণে তাদের করমুক্ত করা হয়েছিল। আমরা দ্বিতীয়বার সরকারে আসার পর যখন আমরা দেখলাম সবার আয় বৃদ্ধি পেয়েছে আর আমরা যারা মেম্বার অব পার্লামেন্টস, আমরা কর মুক্ত ছিলাম। আমি প্রথমে সিদ্ধান্ত নেই, প্রত্যেকটা সংসদ সদস্য আয়কর দেবে। এমনিতে আমাদের সংসদ সদস্যরা ব্যক্তিগতভাবে কর দিত কিন্তু পার্লামেন্ট মেম্বার হিসেবে রেয়াদ ছিল, আমি সেটা পুনরায় চালু করি।'
'প্রথমে নিজেদেরটা করি, এমনকি প্রধানমন্ত্রীকেও কর দিতে হবে। শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতি ছাড়া সবার ক্ষেত্রে। এরপর সরকারি কর্মচারীদের আয়করের আওতায় আনা হয়। তাতে আমাদের করদাতার সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। এখন যেহেতু একটা মূল্যস্ফীতি, প্রতিটা মানুষের ওপর একটা অতিরিক্ত চাপ। এ ক্ষেত্রে কর হার বৃদ্ধি না করে, করহার যৌক্তিক করতে হবে এবং ই-টিআইএনধারীদের রিটার্ন প্রদানে উদ্বুদ্ধ করে করদাতারা যেন ডিজিটাল নেটওয়ার্কে সম্পৃক্ত হয় সেই ব্যবস্থা নেওয়া একান্তভাবে দরকার,' বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, 'আমাদের দেশে আয়কর প্রদানকারীর সংখ্যা এখনো খুবই কম। আসলে অনেক ঝামেলার মধ্যে করতে হয় বলে বা এই সম্পর্কে সচেতনতার অভাব। আমি মনে করি, এখানে কোনো জোর-জুলুম খাটবে না। মানুষকে কোনো ভয়-ভীতিকর পরিস্থিতিতে ফেলা যাবে না। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। মানুষকে জানাতে হবে, আপনি যে কর দেন সেটা আপনার কাজেই লাগে। আজকে রাস্তা-ঘাট, পুল-ব্রিজ বা পোর্ট বা আমাদের কৃষি বা শিক্ষা-স্বাস্থ্য সব ক্ষেত্রে যেগুলো সরকার করে দিচ্ছে সবগুলো সুফল ভোগ করছে জনগণ। যারা সুফল ভোগ করছেন, তাদের তো কিছু দিতে হবে। কারণ রাষ্ট্র তো এমনি এমনি দিতে পারে না। আর অন্যের কাছে আমরা হাত পাতবোও না।'
তিনি বলেন, 'কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা আছে। আমি মনে করি, সব ক্ষেত্রে ডিজিটাল সিস্টেম হয়ে গেলে কেউ আর ফাঁকি দিতে পারবে না। এটা হলো বাস্তব কথা। সেটাও একটা বিরাট সুযোগ এনে দেবে। মানুষ যাতে কর ফাঁকি না দেয় আর করের পরিমাণটাও এমন রাখা, বিশেষ করে আয়করের পরিমাণ এমন রাখা যাতে প্রত্যেকটা মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে দিতে পারে।'
'এখন কিন্তু মানুষের আর্থিক অবস্থা...যদিও করোনা ও যুদ্ধকালীন মানুষ একটু কষ্টে আছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যথেষ্ট উন্নত হচ্ছিল আমাদের দেশের মানুষের আর্থিক অবস্থা। আপনি যদি উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ে যান, যে পরিবর্তনটা হয়েছে গত ১৪ বছরে, এই পরিবর্তনটা আপনারা দেখতে পারেন। এখন কেউ আর কুঁড়ে ঘরে বাস করে না। প্রত্যেককে আমরা একটা বিনা পয়সার ঘর দিচ্ছি। ২ কাঠা করে জমি দিচ্ছি। তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আর্থিক সহায়তা দিচ্ছি। পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে,' বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, 'আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি, যেখানে বিনিয়োগের সুযোগ আছে। একটা উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়েও কিন্তু অর্থনীতি গতিশীল হয়েছে। কারণ আমাদের সরকার, আওয়ামী লীগ সরকারের নীতিটাই হচ্ছে আমাদের উন্নয়নটা তৃণমূল থেকে আসবে। একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি করা। আমি অন্তত এইটুকু বলতে পারি, গত ১৪ বছরে আমূল পরিবর্তন এসেছে। এখন করদাতার সক্ষমতা আমাদের উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত আছে। এমনকি ইউনিয়নেও আছে। প্রচার চালালে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসবে। কারণ মানুষ তো সেবাটা পাচ্ছে।'
'শুধু রাজধানী বা শহরকেন্দ্রিক না, সারা বাংলাদেশের আপামর জনগোষ্ঠীকে বলবো, যাদের কর দেওয়ার সামর্থ আছে, আপনারা দয়া করে কর দেবেন। যেটা আপনাদের সেবায় সরকার কাজে লাগাবে,' আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
Comments