এক উচ্চশিক্ষিত দম্পতির উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প

উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প
নিজের খামারে মাহবুবুল আলম নাঈম। সোহরাব হোসেন/স্টার

পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর এলাকার সিকদার সড়ক এলাকার বাসিন্দা মাহবুবুল আলম নাঈম (৪০) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইনফরমেশন সায়েন্স ও লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্টে স্নাতক। তার স্ত্রী উম্মে হানী তামান্না ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক থেকে কম্পিউটার বিভাগ থেকে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

উচ্চশিক্ষিত এ দম্পতি চাকরির পেছনে না ছুটে হয়েছেন উদ্যোক্তা। এখন তারা মাসে আয় করছেন প্রায় ৩ লাখ টাকা।

নাঈম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি একটি বিদেশি এনজিওতে চাকরি করতেন। ২০১৭ সালে সরকার দেশকে 'মধ্যম আয়ের দেশ' ঘোষণা করলে ওই এনজিওর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। চাকরি হারিয়ে তিনি ঠিক করেন আর চাকরির পেছনে না ছুটে নিজে কিছু করবেন।

স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে প্রথমে করেন ছাগলের খামার। কিন্তু সুবিধা করতে পারেননি। পরে সিদ্ধান্ত নেন কোয়েলের খামার করার।

নাঈম ২০২০ সালে ৩০০ কোয়েলের বাচ্চা সংগ্রহ করে শুরু করেন কোয়েল পালন। পেয়ে যান সফলতা। লাভবান হওয়ায় পরের বছর আরও ১ হাজার কোয়েল দিয়ে পরিসর বাড়ান খামারের।

বর্তমানে তার খামারের ৩টি শেডে আছে ৩ হাজার কোয়েল পাখি। এ খামার থেকে তিনি প্রতিদিন সংগ্রহ করছেন ৩ হাজার ডিম। প্রতিটি ডিম পাইকারি বিক্রি করেন ৩ টাকায়। খুচরা বাজারে একেকটি ডিম বিক্রি হয় সাড়ে ৩ টাকায়।

শুধু কোয়েলের ডিম বিক্রি করে এই দম্পতি মাসে আয় করেন ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় মাহবুবুল আলম নাঈম ও তার স্ত্রী উম্মে হানী তামান্নার কোয়েলের খামার। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

কোয়েল পালনের পাশাপাশি নাঈম কিছু সোনালি, লেয়ার ও টারকি মুরগি পালন করছেন। মুরগির মাংস ও ডিম বিক্রি থেকেও প্রায় ৩০ হাজার টাকা আয় করেন মাসে।

নাঈম বলেন, 'স্ত্রী তামান্না ও আমি খামারে কাজ করি। চাকরির পেছনে না ছুটে এ খামার গড়ে তুলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি নিজেরাই উদ্যোক্তা হতে পেরেছি।'

'পাইকাররা খামার থেকেই ডিম ও মুরগি কিনে নিয়ে যান,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্পে চীনারা কাজ করেন। কোয়েলের ডিম ও মাংস তাদের প্রিয়। আমার খামারে উৎপাদিত কোয়েলের ডিমের প্রধান ক্রেতা তারা।'

উম্মে তামান্না ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কম্পিউটারে ডিগ্রি নিয়ে চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেরাই খামার গড়ে লাভবান হয়েছি। অনেকেই আমাদের খামার ঘুরে দেখছেন। অনেককে কোয়েল খামার গড়ে তোলার পরামর্শ দিচ্ছি।'

এ দম্পতির সফলতা দেখে কোয়েল পাখি পালনে আগ্রহী হচ্ছেন এলাকার বেশ কয়েকজন।

স্থানীয় মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী জব্বার হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নাঈম ভাই সফল কোয়েল খামারি। তার কাছ থেকে কোয়েলের ১০০ বাচ্চা সংগ্রহ করেছি। পড়াশোনার পাশাপাশি কোয়েল পাখি পালন করছি। আশা করছি আমিও তার মতো লাভবান হতে পারব।'

একই এলাকার মাদ্রাসা শিক্ষক জয়নাল মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নাঈমের পরামর্শে ২০০ কোয়েল পাখি সংগ্রহ করে লালন-পালন শুরু করেছি। শিক্ষকতার পাশাপাশি কোয়েল পালন করছি। এতে তেমন খরচ বা কষ্ট হচ্ছে না। বর্তমানে ৫০টি কোয়েলে ডিম দিচ্ছে।'

কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. জোনায়েদ খান লেলিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কোয়েলের ডিম সাধারণত প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিংক, ফলেট, ভিটামিন-এ, ই ও ডি সমৃদ্ধ। মানবদেহে এসব উপাদানের চাহিদা পূরণে এই পাখির ডিম অপরিহার্য।'

অপুষ্টির শিকার শিশুদের কোয়েলের ডিম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Titumir students block Mohakhali rail tracks

Students of Titumir College waged protest to press home their demand for upgradation of their institution as a university

22m ago