অর্থপাচারের পরিমাণ নির্ধারণ অত্যন্ত দুরূহ বিষয়: অর্থমন্ত্রী

জাতীয় বাজেট ২০২৩-২৪ : অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ফাইল ছবি

সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে আইনগত কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

তিনি বলেন, পাচারকৃত অর্থ উদ্ধার অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া। বিভিন্ন পদ্ধতিগত ও আইনি জটিলতার কারণে অর্থ উদ্ধারে দীর্ঘ সময় পার হয়ে যায়। অর্থপাচারের পরিমাণ নির্ধারণ অত্যন্ত দুরূহ বিষয় বলেও মন্ত্রী উল্লেখ করেন।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গাঁর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আজকের সংসদের বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর পর্ব টেবিলে উত্থাপিত হয়।

অর্থপাচারের পরিমাণ নির্ধারণ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা, গবেষণা সংস্থা বিভিন্ন ধরনের মেথোডলজি ব্যবহার করে পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ সম্পর্কে প্রাক্কলন করে, যার যথার্থতা ওইসব প্রতিষ্ঠানও দাবি করে না। এসব সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে বাংলাদেশ হতে কী পরিমাণ অর্থপাচার হয় সে বিষয়ে পরস্পরবিরোধী তথ্য পরিলক্ষিত হয়। বস্তুত, অর্থপাচারের পরিমাণ নির্ধারণ অত্যন্ত দুরূহ বিষয়। তবে দেশ থেকে অর্থপাচারের মাত্রা বা পরিমাণ যাই হোক না কেন, পাচারের সম্ভাব্য উৎসগুলো বন্ধ করার পাশাপাশি অর্থপাচার রোধ এবং পাচারকৃত অর্থ বাংলাদেশে ফেরত আনার বিষয়ে সরকার বদ্ধপরিকর। এ লক্ষ্যে সরকারের সব সংস্থা একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।

অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, সরকারের পদক্ষেপে অবৈধ অর্থপাচার আগামীতে অনেকাংশে কমে আসবে। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারের কিছু সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের আইনগত কার্যক্রম চলমান আছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) পাচারকারী বা পাচারকৃত অর্থের বিষয়ে বিদেশি আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ পুলিশের সিআইডি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থাকে সরবরাহ করে আসছে। বিদেশে (সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, হংকং, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ইত্যাদি) ফ্ল্যাট বা বাড়ি কেনা অথবা অন্য কোনো পদ্ধতিতে অর্থপাচার বিষয়ক বেশকিছু মামলা বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তনাধীন। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) দায়েরকৃত পাচার সংশ্লিষ্ট বেশকিছু মামলা চলমান রয়েছে। অন্যদিকে, বিদেশে পাচারকৃত সম্পদ বাংলাদেশে ফেরত আনার লক্ষ্যে অ্যাটর্নি জেনারেলের নেতৃত্বে আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে কাজ করছে। এছাড়া, বিভিন্ন দেশের সাথে পারস্পরিক আইনগত সহযোগিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পরিক সহায়তা দিতে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্ধারণ করা হয়েছে।

ওয়ার্কার্স পার্টির বেগম লুৎফুন নেসা খানের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বৈদেশিক ঋণ জিডিপির শতকরা হার অনুযায়ী বাংলাদেশ ঝুঁকিসীমার অনেক নিচে অবস্থান করছে। 

তিনি বলেন, বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঝুঁকিমুক্ত ও সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে।

অর্থমন্ত্রী দাবি করেন, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে বড় কোনো ঝুকিঁর আশঙ্কা নেই। আইএমএফের প্রতিবেদনের উদ্বৃতি দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ২০৩২ সাল পর্যন্ত দেশীয় ঋণসহ বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ঝুকিঁমুক্ত।

ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্য বেগম লুৎফুন নেসা খানের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের মেয়াদে ঋণখেলাপির দায়ে ২১৭ জনকে জেলে পাঠানো হয়েছে। ঋণখেলাপির দায়ে ১২ কৃষককে জেলে নেয়ার ঘটনাটি (পাবনায়) বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লি. এর। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতাভুক্ত কোনো তফসিলি ব্যাংক নয়। আদালতের এখতিয়ারভুক্ত ঋণ খেলাপির দায়ে জেলে পাঠানোর ঘটনার বিষয়ে মন্তব্য করা সমীচীন নয়।

Comments

The Daily Star  | English
health reform

Priorities for Bangladesh’s health sector

Crucial steps are needed in the health sector for lasting change.

11h ago