লালমনিরহাট: বিশেষ প্রকল্পের ৮ কোটি টাকা খরচ হলো কোথায়

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

২০২১ সালে লালমনিরহাটে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে অতিদরিদ্রদের জন্য ৮ কোটি টাকার একটি বিশেষ প্রকল্পের বাস্তবায়ন দেখানো হয়েছে। কিন্তু কোথায়, কীভাবে এই প্রকল্পের টাকা ব্যয় করা হয়েছে, এর উপকারভোগীই বা কারা- সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারছে না অধিদপ্তর ও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা।

এমনকি এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালকও সন্তোষজনক কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।

বিপরীতে একাংশের অভিযোগ, এই প্রকল্পের আওতায় 'রাজনৈতিক বিবেচনায়' নামমাত্র কিছু মানুষকে প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সুবিধা দিয়ে বাকি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, 'অতি দরিদ্রদের নানাবিধ প্রশিক্ষণের মাধ্যম কর্মমূখী করা' শীর্ষক এই প্রকল্পটির অনুমোদন দিয়েছিলেন লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ।

লালমনিরহাট জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক করা হয়েছিল লালমনিরহাট সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) এম এ মতিনকে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছিল 'পুষ্প বাংলাদেশ' নামের রংপুরের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে। এম এ মতিন একইসঙ্গে রংপুর জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।

লালমনিরহাট সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, প্রকল্প পরিচালক হিসেবে এম এ মতিন একাই প্রকল্পটি দেখভাল করতেন। লালমনিরহাট সমাজসেবা অধিদপ্তরের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এই প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কোন তথ্যই লালমনিরহাট সমাজসেবা অধিদপ্তরে সংরক্ষিত নেই।

এ বিষয়ে আদিতমারী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রওশান আলী মণ্ডল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই প্রকল্পের উপকারভোগী কারা, কীভাবে প্রকল্পের টাকা ব্যয় করা হয়েছে এ বিষয়ক কোনো তথ্যই আমাদের জানা নেই।'

একই কথা জানিয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় আমাদের কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। প্রকল্প পরিচালক নিজেই এটি মনিটর করেছিলেন।'

প্রকল্পের একজন উপকারভোগী পাটগ্রাম উপজেলার আমিনুল ইসলামের ভাষ্য, এই প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার কথা ছিল অতিদরিদ্র মানুষের। কম্পিউটার ও সেলাই প্রশিক্ষণ এবং গবাদি পশুপালনের প্রশিক্ষণ দিয়ে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কথা ছিল এই প্রকল্পের মাধ্যমে। কিন্তু অতিদরিদ্রদের কেউই এই সুবিধা পাননি।

আমিনুল ইসলামের অভিযোগ, পাটগ্রামে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ও স্বচ্ছল পরিবারের কিছু মানুষকে এই প্রকল্পে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। তাদের ৪০ দিন প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা থাকলেও ৫-৬ দিনের বেশি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলেনি।

তিনি বলেন, 'গোপনে কিছু মানুষকে আর্থিক সুবিধা দিয়ে বাস্তবায়নকারী সংস্থার লোকজন রাতারাতি পালিয়ে যায়। আমরা এ ব্যাপারে সমাজসেবা অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছি। কিন্তু আজও এর সুরাহা মেলেনি।'

এদিকে বাস্তবায়নকারী সংস্থা হয়েও 'পুষ্প বাংলাদেশ'-এর নির্বাহী পরিচালক নিশাত জাহান বলছেন, এই প্রকল্পের কোনো তথ্যই তাদের কাছে নেই। আছে সমাজসেবা অধিদপ্তরে।

ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'উপকারভোগীদের নামের তালিকা থেকে শুরু করে আর্থিক সহযাগিতা প্রদান- এর সবকিছু করেছিলেন প্রকল্প পরিচালক এম এম মতিন। আমরা কেবল প্রশিক্ষণ দিয়েছিলাম।'

প্রকল্প পরিচালক এম এ মতিনের দাবি, এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৩ হাজার উপকারভোগী প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছেন। উপকারভোগীদের নামের তালিকা আছে বাস্তবায়নকারী সংস্থার কাছে।

প্রকল্প পরিচালক হিসেবে তিনি কেবল সার্বিক বিষয় 'মনিটরিং' করেছিলেন জানিয়ে এম এ মতিন দাবি করেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হওয়া অন্য যেকোনো প্রকল্পের চেয়ে এই প্রকল্পটি বেশি সফল।

Comments

The Daily Star  | English

S Alam threatens int'l legal action against govt over asset freezing: FT

Alam says his family's bank accounts were frozen, they were subjected to travel bans, and they lost control of their companies, all while facing investigations for alleged money laundering without formal notification.

45m ago