ম্রোদের ওপর হামলা, আগুন ও লুটপাটের সত্যতা মিলেছে: জাতীয় মানবাধিকার কমিশন

বান্দরবান, ম্রো পাড়া, তদন্ত দল, পরিদর্শন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন,
বান্দরবানের লামায় রেঙয়েন ম্রো পাড়ায় ম্রোদের ওপর হামলার ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত দল আজ বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। ছবি: মংসিং হাই মারমা/ স্টার

বান্দরবানের লামায় রেঙয়েন ম্রো পাড়ায় ম্রোদের ওপর হামলার ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

আজ বৃহস্পতিবার লামা উপজেলায় সরই ইউনিয়নের ম্রো পাড়ায় পৌঁছান কমিশনের চার সদস্যের তদন্তদল।

কমিশনের তদন্ত দলের প্রধান কংজরী চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, ম্রোদের ওপর হামলা, তাদের ঘরে আগুন দেওয়া এবং লুটপাটের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। তারা ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কমিশনে তারা তাদের তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবেন।

কমিশনের সদস্য কংজরী চৌধুরীর নেতৃত্বে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) ও (জেলা ও দায়রা জজ)  মো. আশরাফুল আলম, উপপরিচালক মোহাম্মদ গাজী সালাউদ্দিন এবং রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রবিউল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও ভুক্তভোগী ও ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন।

কংজরী চৌধুরী বলেন, ম্রোদের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, হামলা ও লুটপাটের ঘটনার সত্যতা যাচাই ও প্রকৃত ঘটনা জানতে সকালে লামা উপজেলায় সরই ইউনিয়নের ম্রো পাড়ায় এসে পৌঁছান তারা।

রেঙয়েন ম্রো কারবারী (পাড়া প্রধান) তদন্ত কমিটির কাছে বলেন, গত রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় রাবার কোম্পানির ছয়টি গাড়িতে শতাধিক লোকজন পাড়ায় এসে তিনটি ঘরে আগুন দেয়, ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে। তারা এখনো মামলাও করতে পারেন নাই, হাটে বাজারেও যেতে পারছেন না। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানান।

ক্ষতিগ্রস্ত চিংচ্যং ম্রো (৩৫) কমিশনকে অভিযোগ করে বলেন, রাবার কোম্পানির লোকজন বার বার বাগান পুড়িয়ে দিচ্ছে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে আমরা কোথায় যাব। আমরা নিরুপায়।

ভুক্তভোগী নারী চংলে ম্রো জানান, তারা এখন রাতদিন আতঙ্কে আছেন।

রুংধিজন ত্রিপুরা অভিযোগ করেন, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের নামে ৮০ ও ৯০ এর দশকে ডলুছড়ি ও সরাই এই দুই মৌজার মোট ১ হাজার ৬০০ একর জমি ইজারা দেওয়া হয়। লামা সরই ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির অভিযোগ, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিজ নেওয়া জমির সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত অস্পষ্টতার সুযোগ নিয়ে বাস্তবে ৩ হাজার একরেরও বেশি জমিতে তারা  রাবার বাগান করেছেন। আর এখন যে ৪০০ একর জমি থেকে ম্রো ও ত্রিপুরাদের উচ্ছেদ করতে চাইছে, সেটাও ইজারার আওতার বাইরের জমি।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য কংজরী চৌধুরী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রধান সমস্যা ভূমি সমস্যা। পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন যদি সঠিকভাবে কাজ করতে পারত তাহলে ভূমি সমস্যা অনেকটাই সমাধান হয়ে যেত।

তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চুক্তির ধারার অনুযায়ী ভূমি কমিশন যখনি কোনো মিটিং ডাকে তখনই পার্বত্য এলাকার কিছু লোক হরতাল ডেকে বসেন। যারা হরতাল ডাকেন তারা কি সরকার, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী? আলোচনার মাধ্যমেই অনেক কঠিন পরিস্থিতি ও সমস্যার সমাধান হয়।

ম্রোদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আজ তদন্ত দলের কথা হলেও এ বিষয়ে সাংবাদিকদের কিছু জানায়নি তদন্ত দল।

লামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান ম্রো পাড়া নজরদারিতে আছে। পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে।

গত বছর ২৬ এপ্রিল লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রি কোম্পানির বিরুদ্ধে রেঙয়েনপাড়া, লাংকমপাড়া ও জয় চন্দ্রপাড়ার ৪০০ একর জুমচাষের জমির মধ্যে ৩৫০ একর জুমের গাছ ও ফসল কেটে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।

তবে হামলাসহ ম্রোদের অভিযোগ অস্বীকার করেছে লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজ কর্তৃপক্ষ।

 

Comments

The Daily Star  | English

Around 100 injured in clash between students in Jatrabari

Scores of people were injured as students of three colleges clashed at Dhaka's Jatrabari today, turning the area into a battlefield

5h ago