কক্সবাজারে উপচে পড়া ভিড়

শনিবার বিকেলে কক্সবাজারের সুগন্ধা পয়েন্ট সৈকতে পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়। ছবি: সংগৃহীত

টানা ৩দিনের ছুটিতে বিপুল পর্যটকের আগমনে মুখর হয়ে উঠেছে পর্যটন শহর কক্সবাজার।

সাপ্তাহিক শুক্র ও শনিবার ছুটির সঙ্গে আগামীকাল রোববার বড়দিনের ছুটি যোগ হওয়ায় দেশের নানা প্রান্ত থেকে ভ্রমনপিপাসু পর্যটকেরা জড়ো হয়েছে কক্সবাজারে।  অনেকেই স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষে সপরিবারে পাড়ি জমিয়েছেন সৈকতের তীরে।

আজ শনিবার সকাল থেকেই সমুদ্র সৈকতের কক্সবাজার শহর ও শহরতলী সংলগ্ন ৪ কিলোমিটার বেলাভূমি পর্যটকদের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে ওঠে।

বিশেষ করে লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত ২ কিলোমিটার এলাকায় ছিল পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। একই সঙ্গে ইনানী, পাটুয়ারটেক, দরিয়ানগর, সেন্টমার্টিন, মহেশখালী, বার্মিজ মার্কেট, বৌদ্ধ মন্দিরসহ অন্যান্য পর্যটন স্পটেও ছিল পর্যটকের ভিড়।

কুমিল্লা থেকে আসা  রফিকুল আলম বলেন, 'দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ছাড়াও কক্সবাজারে অনেক পর্যটন স্পট উন্মুক্ত। তাই বরাবরের মতোই প্রকৃতির ইশারায় কক্সবাজার চলে আসে ভ্রমনপিপাসু মানুষ। এবার বাচ্চাদের পরীক্ষা শেষ হওয়ায় ৩ দিনের ছুটিতে এসেছি। ভালো লাগছে।'

এদিকে পর্যটকের বাড়তি চাপে কক্সবাজারে কোনো হোটেল-মোটেলে কক্ষ খালি না পেয়ে দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনায় পড়েছেন অনেকেই। কেউ কেউ স্থানীয়দের বাসা-বাড়িতে রাত কাটিয়েছেন।

চট্টগ্রাম থেকে আসা মাহিনুর আক্তার বলেন, 'কক্সবাজার এসে বিভিন্ন হোটেলে রুম ভাড়ার জন্য ঘুরছি। কোথাও রুম না পেয়ে বাহারছড়া এলাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় উঠেছি।'

জানতে চাইলে আবাসিক হোটেল রিগ্যাল প্যালেসের স্বত্বাধিকারী মো. আরকান বলেন, 'টানা ৩ দিন সরকারি ছুটি। এরপরও  এই মাসের শেষ পর্যন্ত হোটেলে কোনো রুম খালি নেই।'

 হোটেল অস্টার ইকোর মহা-ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ রিয়াদ বলেন, '৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসি, নন এসি কোনো রুমই খালি নেই হোটেলে। পর্যটকেরা আগাম বুকিং দিয়ে রেখেছেন। নতুন করে অনেক পর্যটক আসলেও তাদের রুম ভাড়া দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।'
ভ্রমন আনন্দে পর্যটকদের জন্য প্রশাসনের বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সন্তোষ জানিয়েছেন পর্যটকেরা।

সৈকতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সি সেইফ লাইফ গার্ডের কর্মী জয়নাল আবেদীন ভুট্টো বলেন, 'সমুদ্র পাড়ে সকাল থেকে পর্যটকদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। বাড়তি পর্যটকের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে লাইফগার্ড সদস্যদের। নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ঘাটতি নেই। সমুদ্রে গোসলে নেমে যাতে কোনো দুর্ঘটনায় পড়তে না হয় সেজন্য সৈকতের সব কটি পয়েন্টেই কঠোর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।'
এদিকে ব্যাপক পর্যটক আগমনে কলাতলী হোটেল-মোটেল জোন এলাকা হতে কক্সবাজার শহরের সড়কগুলোতে ও সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক গাজী মিজানুর রহমান বলেন, 'বিপুল সংখ্যক পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে এসেছেন। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ টহল বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি সাদা পোশাকেও নজরদারি করা হচ্ছে। পর্যটকদের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন।'
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, 'পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় মাঠে রয়েছে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। পাশাপাশি পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের সঙ্গে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছে।'

দূরপাল্লায় চলাচলকারী কোচের মালিক নিরূপম পাল নীরু বলেন, 'গত বৃহস্পতিবার থেকে যাত্রীদের চাপ বেড়ে গেছে। ওই চাপ এ মাসের শেষ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। অনেকেই অগ্রিম টিকেট সংগ্রহ করে রাখছে।'

পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়ে আশার আলো দেখছেন ব্যবসায়ীরা। লাবনী পয়েন্টের ঝিনুক মার্কেটের ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন বলেন, 'কক্সবাজারে বিপুল পরিমাণ পর্যটক আসায় বেচাবিক্রিও অনেক ভাল। পর্যটকদের নিরাপত্তায় কোনো সমস্যা না হলে আগামীতেও আশাতীত পর্যটকের সমাগম ঘটবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Killing of trader in old Dhaka: Protests erupt on campuses

Protests were held on campuses and in some districts last night demanding swift trial and exemplary punishment for those involved in the brutal murder of Lal Chand, alias Sohag, in Old Dhaka’s Mitford area.

5h ago