পাচারকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধারে কিছু দেশের অসহযোগিতায় আইনমন্ত্রীর উদ্বেগ

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। ছবি: সংগৃহীত

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, দুর্নীতি একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ, যা থেকে পৃথিবীর কোনো দেশই মুক্ত নয় এবং এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আন্তর্জাতিক ইসলামী সংস্থার (ওআইসি) সদস্য দেশগুলোর দুর্নীতিবিরোধী আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের প্রথম মন্ত্রী পর্যায়ের দুদিনব্যাপী সম্মেলনে আজ মঙ্গলবার এ কথা বলেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, 'বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশকেও দুর্নীতির ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান এবং জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে।'

স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় ওআইসি এবং এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে কাজ করতে বাংলাদেশের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।

আজ সকালে সৌদি আরবের জেদ্দায় শুরু হয়েছে এই সম্মেলন। এসময় সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ওআইসির স্থায়ী প্রতিনিধি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী উপস্থিত ছিলেন।

সম্মেলনে আইনমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের গৃহীত বিভিন্ন ব্যবস্থা তুলে ধরে বলেন, 'বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়, ব্যাংকিং ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য উন্নত নিয়ন্ত্রণ কাঠামো ও তদারকি ব্যবস্থা, বিভিন্ন স্তরে জাতীয় দুর্নীতি প্রতিরোধ কাঠামো, উন্নত শাসন ব্যবস্থা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণসচেতনতা তৈরির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক এবং কমিউনিটি পর্যায়ে বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সততা ইউনিট, সততার দোকান ও সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার জন্য গণশুনানির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।'

আনিসুল হক বলেন, 'আমরা ইতোমধ্যে সর্বস্তরে দুর্নীতি প্রতিরোধে ফৌজদারি আইন, স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন, তথ্যের অধিকার নিশ্চিতে তথ্য কমিশন, মানিলন্ডারিং আইন, সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধ, সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধে পারস্পরিক আইনি সহায়তা, সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ এবং ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম প্রতিরোধসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।'

ওআইসির সভায় আইনমন্ত্রী বলেন, 'আমরা অবৈধ আর্থিক প্রবাহ রোধ করা এবং বাজেয়াপ্ত সম্পদ পুনরুদ্ধার এবং ফেরত দেওয়ার মাধ্যমে একটি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারি।'

এ বিষয়ে জাতিসংঘের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কনভেনশনের সুস্পষ্ট বিধান থাকা সত্ত্বেও দুর্নীতি ও মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অবৈধভাবে পাচারকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধারে কিছু কিছু দেশের বিভিন্ন ধরনের অসহযোগিতায় আইনমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

দুর্নীতি নেটওয়ার্কের অপতৎপরতা মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী কাঠামোর মূল দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে এবং তা মোকাবিলায় যুগোপযোগী উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতা, কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধি, দক্ষ জনবল ও উন্নত প্রশিক্ষণ কার্যকরী ভূমিকা রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি বিশ্বাস করি- ওআইসির দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশন রাষ্ট্রগুলোকে এর উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য বৃহত্তর এবং দ্রুত সহযোগিতার সুযোগ দেবে।'

দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সমাজের সবাইকে সম্পৃক্ত করে আমাদের একটি ব্যাপক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে বলেও জানান আইনমন্ত্রী।

সভায় সভাপতিত্ব করেন সৌদি আরবের দুর্নীতিবিরোধী কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাজিন ইব্রাহিম আলকাহমুস। এই সভায় ওআইসি মহাসচিব হিসেন ব্রাহিম তাহা, জাতিসংঘের ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম অফিসের নির্বাহী পরিচালক, ইন্টারপোলের মহাসচিবসহ ওআইসির সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। সভা শেষে সর্বসম্মতিক্রমে ওআইসি দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশন গৃহীত হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Public admin reforms: Cluster system may be proposed for ministries

The Public Administration Reform Commission is likely to recommend reducing the number of ministries and divisions to 30 from 55 to improve coordination and slash the government’s operational cost.

7h ago