ছবির কোয়ালিটি বাড়ানোর ৫ উপায়

ছবি: সংগৃহীত

ভালো ছবি তোলার জন্য ফটোগ্রাফির প্রধান বিষয়গুলো আয়ত্ত করা সত্ত্বেও যদি কাঙ্ক্ষিত ছবি না পাওয়া যায়, তাহলে ক্যামেরার সক্ষমতা অনুযায়ী সেটিংস পরিবর্তন করার সময় এখনই। কারণ ছবির কোয়ালিটি বেশিরভাগ সময় ক্যামেরার 'সুইট স্পট' অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। এসব সেটিংস ক্যামেরার কাঠামো, মডেল বা স্পেসিফিকেশন নির্বিশেষে সর্বোচ্চ ভালো মানের ছবি দেওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। এ ক্ষেত্রে কিছু টিপস জানা থাকলে ক্যামেরার কোয়ালিটি নিজের মতো করে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

ফোকাস নির্ধারণ করা 

ঝাপসা ছবি এড়াতে বিষয়বস্তুর ওপর সঠিকভাবে ফোকাস করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। নিখুঁতভাবে ফোকাস নির্ধারণ করতে অবশ্য ক্যামেরার সক্ষমতা ও অনুশীলন থাকা প্রয়োজন। বেশিরভাগ ক্যামেরায় বিভিন্ন ধরনের ফোকাস মোড থাকে। স্থির বিষয়বস্তুর জন্য যেমন একক ফোকাস মোড যথেষ্ট, তেমনি চলমান বিষয়বস্তুর জন্য নিরবচ্ছিন্ন ফোকাস মোড উপযুক্ত। 

এ ছাড়াও, ক্যামেরায় থাকে স্বয়ংক্রিয় ফোকাস মোড, যা নিজ থেকেই বিষয়বস্তুর গতি সেন্সর করে স্থির এবং চলমান ফোকাস নির্ধারণ করে। তবে ব্যবহারকারী তার চাহিদা মোতাবেক ফোকাস সেট করলে উত্তম। এজন্য প্রথমে ছবির নির্দিষ্ট স্থান বাছাই করতে হবে। ছবিতে একাধিক বিষয়বস্তু ও একদম পিনপয়েন্ট স্থান চিহ্নিত করতে স্পট ফোকাস ভালো কাজ করে।  
                                                                                                                                                       
আলোর ভিন্নতায় ক্যামেরার ফোকাসের কার্যকারিতা সম্পর্কে ধারনা পাওয়ার জন্য বাইরে শুটিং করা যেতে পারে। যদি স্বল্প আলোতে ছবি এক টোনে সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলে ক্যামেরার ফোকাস খুঁজে পাওয়া কঠিন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে পছন্দসই ফোকাস পয়েন্টের কাছাকাছি অন্য একটি বিষয়বস্তু এনে শার্প কন্ট্রাস্ট বা নির্দিষ্ট প্রান্ত নির্ধারণ করে ফোকাস রাখার চেষ্টা করতে হবে।                         

ছোট অ্যাপারচার ব্যবহার করা 

ক্যামেরার লেন্সের প্রবেশদ্বারের মাধ্যমে আলোর পরিমাণ কমানো বা বাড়ানোর কাজ করে অ্যাপারচার। এটিকে এফ-স্টপে প্রকাশ করা হয়। এফ/২.৮ বা এফ/৩.৫ এর একটি এফ-স্টপ লেন্স নির্দিষ্ট দূরত্বের ওপর ফোকাস করে। আর ফোকাল পয়েন্টের সামনে বা পিছনের সবকিছু ঝাপসা হয়ে যায়। 

ফোকাস আরও কার্যকরী করতে এফ/৮ বা এফ/১১ এর মতো ছোট অ্যাপারচার ব্যবহার করা যেতে পারে। ল্যান্ডস্কেপ ছবিতে ফোকাসের জন্য এফ/১৪ অ্যাপারচার ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে সেটি লেন্সের 'স্টপ ডাউন' বা সক্ষমতার বাইরে যেন না যায়।

লেন্সের যান্ত্রিক নকশার কারণে অ্যাপারচারের সর্বোচ্চ প্রান্তে ত্রুটি দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে এফ/২২ এর ক্ষুদ্র প্রবেশদ্বার একবার ব্যবহার করলেই সমস্যার সৃষ্টি হয়। লেন্সের কাঠামো এবং মূল্যের ওপর নির্ভর করে ছবির গুণমান প্রভাবিত হয়। 

ট্রাইপড ও ভালো শাটার স্পিড ব্যবহার করা 

দীর্ঘসময় ক্যামেরা স্থির রাখার ক্ষেত্রে ধীর শাটার স্পিডের ব্যবহার ঝাপসা ছবির কারণ হতে পারে। এক সেকেন্ডের ১/৮০তম বা ১/৬০তম'র নিচে শাটার আরও বাড়তি সময়ের জন্য উন্মুক্ত রাখার অর্থ ক্যামেরার স্থান পরিবর্তন হবে। এ ক্ষেত্রে হৃৎস্পন্দনও ছবি ঝাপসা করে দিতে পারে। তাই উপযুক্ত শাটার স্পিড বাছাই করার সময় ভুল করলে চলবে না।  

ধীর শাটার স্পিড ব্যবহার করতে হলে ট্রাইপড থাকা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে দামী ও বড় ট্রাইপড না চাইলে ম্যানফ্রোটো পিক্সির মতো ছোট ট্রাইপড ব্যবহার করা যেতে পারে, যা সহজেই ভাঁজ করে পকেটে রাখা যায়। 
 
বিষয়বস্তু যদি দ্রুতগতির হয় এবং শাটার স্পিড ধীর হলেও ছবি ঝাপসা হতে পারে। চলমান বিষয়বস্তুর শুটিং করলে দ্রুতগতির শাটার স্পিড প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে ১/৫০০তম শাটার স্পিড হাঁটা বা ধীরে চলার জন্য উপযুক্ত। আর রেসিং কার এবং ডাইভিং পাখির জন্য ১/৩০০০তম স্পিড প্রয়োজন হবে।

জেপিইজিতে শুট করলে আইএসও বাড়িয়ে দেওয়া  

যেহেতু আরএডব্লিউ ফাইলে যতটা আলোর পরিমাণ পরিবর্তন করা যায়, ততটা জেপিইজেতে সম্ভব হয় না। এজন্য ভালো এক্সপোজার নিশ্চিত করতে হবে। যা আইএসও বাড়িয়ে পাওয়া সম্ভব। 

আলোর প্রতি সেন্সরের সংবেদনশীলতা হলো আইএসও। কিন্তু আইএসও বৃদ্ধি পেলে ছবির গুণমান কমে ঝাপসা হয়ে যেতে পারে। উচ্চমানের আইএসও আরএডব্লিউ ফাইল বিরূপভাবে প্রভাবিত করে, তবে সম্পাদনার সময় কম আলোর ফাইল ঠিক করার জন্য অন্যান্য অক্ষাংশ প্রয়োজন। 

ক্যামেরা অনুযায়ী আইওএসও'র নয়েজের পরিমাণ পরিবর্তিত হয়। ক্যানন ৫ডি মার্ক আইভি ক্যামেরায় যেমন ৬৪০০ আইএসও ভালো, অন্যদিকে সনি মিররলেস মডেলের ক্যামেরাগুলো ১২৮০০ আইএসও-তে ভালো কাজ করে।  

আরএডব্লিউ-তে শুট করা 

ক্যামেরায় ছবির কোয়ালিটির জন্য বিভিন্ন ধরনের সেটিংস থাকে। যার কয়েকটি থাকে জেপিইজের আওতায়, বাকিগুলো আরএডব্লিউর তালিকায়। যখন ক্যামেরা লেন্স ব্যবহার করে একটি ছবি রেকর্ড করে, ফাইলটি মেমোরি কার্ডে সংরক্ষণ করা হয়। 

এ ক্ষেত্রে ছবি জেপিইজে ফরম্যাটে সেভ করলে ছবির স্যাচুরেশন, এক্সপোজার পরিবর্তন হয়ে যায়। কিন্তু আরএডব্লিউ ফরম্যাটে শুট করলে পরবর্তীতে ছবি আরও ভালোভাবে সম্পাদনা করা যায়। 

তথ্যসূত্র: মেইক ইউজ অব, ফটো এনহান্স 
 
গ্রন্থনা: আসরিফা সুলতানা রিয়া 

 

Comments