ভায়োলেন্স যদি করে থাকে, সেটা আ. লীগ করেছে: খন্দকার মোশাররফ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, 'গতকাল প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে আমরা নাকি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য সমাবেশ করি। আমরা নাকি ভায়োলেন্স করতে চাই। ভায়োলেন্স যদি এ দেশে কেউ করে থাকে, তাহলে সেটা আওয়ামী লীগ করেছে।'
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এ কথা বলেছেন।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, 'আপনারা সবাই জানেন যে সরকারের বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও আমাদের ১০টি বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল হয়েছে। সমাবেশগুলোতে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন। আজ যখন দেশের মানুষ সমাবেশগুলোর মাধ্যমে বার্তা দিয়েছে তাদের (আওয়ামী লীগ) মানুষ আর চায় না, তখন তারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় ও দিশেহারা হয়ে নানা রকমের কথা বলছে।'
তিনি বলেন, 'আমাদের ১০টি সমাবেশে প্রমাণ করেছি যে আমরা শান্তিপূর্ণ রাজনীতিতে বিশ্বাস করি, আমরা গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। কোথাও কোনো অরাজকতা, কোনো ভায়োলেন্স, কোনো বিশৃঙ্খলা হয়নি। অথচ গতকাল প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে আমরা নাকি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য সমাবেশ করি।'
বিএনপির এই নেতা বলেন, 'এই সরকার আজ যখন দেখছে যে তাদের দিন শেষ, দেশে-বিদেশে মানুষের সঙ্গে প্রতারণার জন্য তারা বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে, আমাদের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে।'
'আপনারা দেখেছেন, এই সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকার জন্য মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে আজকে পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসকে বিকৃত করে তারা এ দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছে,' বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আমি প্রধানমন্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, গতকাল আপনি অনেক কথা বলেছেন। আপনার সব কথার জবাব আমরা দেবো না। শুধু মনে করিয়ে দিতে চাই, এই আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পরে যখন ক্ষমতায় ছিল, তারা এ দেশে গণতন্ত্র হত্যা করে আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দল বাতিল করে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল, এই আওয়ামী লীগ রক্ষীবাহিনী দিয়ে ২০ হাজারের বেশি মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছিল।'
খন্দকার মোশাররফ বলেন, 'এই আওয়ামী লীগ সেই সময়ে রক্ষীবাহিনী দিয়ে গুম-বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড শুরু করেছিল। এই আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির নামে লুটপাট করে ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করেছে। এই আওয়ামী লীগ সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়ে মত প্রকাশের কণ্ঠরোধ করেছিল। আর আজ তারা বলে বিএনপি নাকি এ দেশে অন্যায় করেছে। আজ তারা নিজেদের অন্যায়কে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য মিথ্যাচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায়।'
গত ১৪ বছরের সরকারের দুর্নীতি-লুটপাটের চিত্র তুলে ধরে খন্দকার মোশাররফ বলেন, 'আজ তাদের (সরকার) লুটপাটের কারণে দেশের অর্থনীতি ধ্বংসপ্রাপ্ত, দেশে একটা দুর্ভিক্ষ অবস্থা বিরাজমান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ খেতে পাচ্ছে না, মানুষ দিশেহারা। দেশ এক চরম সংকটে পড়েছে।'
তিনি বলেন, 'গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আমরা ১০ দফা দাবি উত্থাপন করেছি। এটা শুধু আমাদের দাবি নয়, এটা জনগণের দাবি। আমরা এই দাবির সমর্থনে এই সরকারকে বিদায় করতে যে সব দল কাজ করবে, তাদের আমাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের আহ্বান জানিয়েছি।'
'আজকে আবার আমরা আহ্বান জানাতে চাই এ দেশের দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী এবং গণতন্ত্রমনা সব ব্যক্তি, সংগঠন, দলের প্রতি। আসুন আমরা সবাই ইস্পাত কঠিন গণঐক্য সৃষ্টি করে এই সরকারের হাত থেকে দেশকে বাঁচাই, আমাদের গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করি, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরে এসে স্বাধীনভাবে রাজনীতি করার পরিবেশ সৃষ্টি করে দেই,' বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'আপনারা অতীতে প্রমাণ করেছেন, আমরা পারি। অতীতে পেরেছি, আগামীতেও পারব। সরকারের হুমকি-ধামকি, রক্তচক্ষুকে আমরা পাত্তা না দিয়ে সেটাকে জয় করে এ দেশে জনগণের আকাঙ্ক্ষা আমরা পূরণ করবো, এটাই হোক আজকের বিজয় র্যালির শপথ,' বলেন তিনি।
সমাবেশের আগে বিজয় র্যালি করে বিএনপি। নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বিকাল ৩টায় র্যালি শুরু হয়। কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ মোড়ে ঘুরে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে র্যালি শেষ হয়।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, শাহাজাদা মিয়াসহ কেন্দ্রীয় নেতারা র্যালিতে অংশ নেন।
Comments