আজ লালমনিরহাট মুক্ত দিবস

লালমনিরহাট মুক্ত দিবস
লালমনিরহাট শহরে রেলওয়ে ওয়্যারলেস কলোনিতে রেলওয়ে অফিসের পাশে গণকবর। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

আজ ৬ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে উত্তরের সীমান্তবর্তী লালমনিরহাট জেলা পাকিস্তানি বাহিনীর দখলমুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধের ৬ নং সেক্টর সদরদপ্তর ছিল লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী হাসরউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়।

উর্দুভাষী বিহারিরা চাকরির সুবাদে রেলওয়ে বিভাগীয় শহর লালমনিরহাটে বসবাস করতেন। পাকিস্তানি সেনা বিহারিদের সহযোগিতায় সহজেই বাঙালিদের ওপর হামলা চালিয়েছিল এবং বাঙালি নারীদের তুলে নিয়ে যেত পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে। সেখানে তাদের ওপর অমানসিক নির্যাতন চালানো হতো।

পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতা করতো তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার ও আলবদর বাহিনী। তারা পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতায় বাঙালির সম্পদ লুট করতো।

মুক্তিযোদ্ধারা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ১৯৭১ সালের ১ এপ্রিল পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী হেলিকপ্টারে লালমনিরহাটে আসে। ওইদিন লালমনিরহাট বিমান ঘাঁটিতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা লালমনিরহাট থানার ওসি মীর মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে যৌথভাবে বাঙালি পুলিশ ও স্থানীয়রা পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ করে।

হামলায় বহু পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা ও অবাঙালি নিহত হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পাকিস্তানি সেনারা উর্দুভাষী বিহারি ও স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় ৪ ও ৫ এপ্রিল লালমনিরহাটে গণহত্যা চালায়। শিশুসহ নিরস্ত্র বাঙালিদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাদের বাড়িঘরে আগুন দেয়। বাঙালি কিশোরী-তরুণীদের তুলে নিয়ে যায়।

লালমনিরহাট সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু বক্কর ডেইলি স্টারকে বলেন, '১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী লালমনিরহাট রেলওয়ে হাসপাতালে হামলা চালিয়ে চিকিৎসাধীন গুলিবিদ্ধ আহত ওসি মীর মোশাররফ হোসেনকে হত্যা করে। হাসপাতালের ৪ চিকিৎসক ডা. এ. রহমান, ডা. এ. মোকতাদির, ডা. এম. রাহমান ও ডা. এ জি আহমেদকে গুলি করে হত্যা করা হয়।'

তিনি জানান, ৫ ও ৬ এপ্রিল রেলওয়ের বেশ কয়েকজন কর্মচারী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের তারা হত্যা করে। নৃশংস গণহত্যায় নিহতদের মরদেহ রেলওয়ে ওয়্যারলেস কলোনিতে রেলওয়ে অফিসের পাশে ঝোপে পুঁতে রাখা হয়।

'লালমনিরহাট উত্তর সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় দেশের নানান এলাকা থেকে পালিয়ে আসা হাজার হাজার বাঙালি লালমনিরহাট শহর ও এর আশপাশে জড়ো হয়েছিলেন নিরাপত্তা ও আশ্রয়ের জন্য। কিন্তু, তাদের মধ্যে বিপুল সংখ্যককে পাকিস্তান বাহিনী ও তাদের সহযোগীরা হত্যা করে,' যোগ করেন তিনি।

লালমনিরহাট জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজবাহ উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, '৬ নম্বর সেক্টর কমান্ডার এয়ার মার্শাল খাদেমুল বাশারের কাছ থেকে বার্তা পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর জেলার কয়েকটি পয়েন্টে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর হামলা চালায়।'

লালমনিরহাট থেকে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের অনুসারীরা পালিয়ে যায় ৫ ডিসেম্বর রাতে ও ৬ ডিসেম্বর ভোরে। পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে যাওয়ার সময় লালমনিরহাটের প্রবেশদ্বার তিস্তা নদীর ওপর তিস্তা রেলওয়ে সেতুর একটি অংশে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত করে। ৬ ডিসেম্বর সকালে লালমনিরহাট শহরে 'জয় বাংলা' স্লোগানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজবাহ উদ্দিন আরও বলেন, 'প্রায় একমাস পর ভারতীয় সেনাদের সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষতিগ্রস্ত তিস্তা রেলওয়ে সেতুটি মেরামতের পাশাপাশি দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে লালমনিরহাটের যোগাযোগ চালু করে।'

Comments

The Daily Star  | English

Container handling rises at New Mooring terminal after Navy takeover

Container handling at the New Mooring Container Terminal (NCT) of Chattogram Port increased in the first week of operational management by Chittagong Dry Dock Limited (CDDL), Bangladesh's sole dry dock currently operating under the Bangladesh Navy..The CDDL started running the NCT at the c

8m ago