চট্টগ্রামে সিনেমার হালচাল ও প্রেক্ষাগৃহের বর্তমান অবস্থা

সর্বশেষ করোনার প্রথম ধাপে চটগ্রামের কাজীর দেওড়ি এলাকায় বন্ধ হয়ে যায় ‘আলমাস’ সিনেমাহলটি। একই চত্বরে অবস্থিত ‘দিনার’ সিনেমাহলটি বন্ধ হয়েছিল বেশ আগেই। ছবি: স্টার

বাণিজ্যিক শহর চট্টগ্রামে বর্তমানে সিনেমা হলের সংখ্যা হাতেগোনা মাত্র ৪টি।

এই হলগুলোর তালিকায় রয়েছে সিলভার স্ক্রিন, সিনেমা প্যালেস, সুগন্ধা সিনেমা ও স্টার সিনেপ্লেক্স। এর মধ্যে গত ২ ডিসেম্বর স্টার সিনেপ্লেক্স চালু হয়েছে।

শহরের চকবাজার এলাকায় (নবাব সিরাজ উদ্দিন রোড) বালি আর্কেড শপিং কমপ্লেক্সে মাল্টিপ্লেক্স এই সিনেমা হল অবস্থিত। এই মাল্টিপ্লেক্সে মোট ৩টি হল রয়েছে। 

এক সময় চট্টগ্রামে মোট ২৭টি সিনেমাহল ছিল। প্রতিটা হলে বাংলা সিনেমা রমরমিয়ে ব্যবসা করতো। এই হলগুলো হলো- মেলোডি, সঙ্গীত, নূপুর, সাগরিকা, উপহার, আকাশ, গুলজার, রঙ্গম, উজালা, জলসা, লায়ন, বনানী, সানাই, রিদম, চাঁদনী ও কর্ণফুলী। ২০০০ সালের পর একে একে বন্ধ হতে থাকে সিনেমাহলগুলো। সিনেমাহল ভেঙে গড়ে ওঠে বহুতল মার্কেট। সর্বশেষ করোনার প্রথম ধাপে চটগ্রামের কাজীর দেওড়ি এলাকায় বন্ধ হয়ে যায় 'আলমাস'  সিনেমাহলটি। একই চত্বরে অবস্থিত 'দিনার' সিনেমাহলটি বন্ধ হয়েছিল বেশ আগেই।

সিনেমা হল দুটির মালিকানা বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের। হল দুটি ভেঙে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে বলে জানা গেছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া হলের মালিকদের অনেকেই সিনেমার ব্যবসা ছেড়ে জীবিকার টানে চলে গেছেন অন্য ব্যবসায়।

স্টার সিনেপ্লেক্সের চেয়ারম্যান মাহবুব রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'করোনা মহামারিতে অন্যদের মতো আমরাও অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলাম। করোনা পরবর্তী সময়ে 'পরান' ও 'হাওয়া' সিনেমা দুটি চালিয়ে সিনেপ্লেক্সে আমাদের ব্যবসা ফিরেছে। ভালো সিনেমা নির্মিত হলে মানুষ সিনেমা হলে এসে অবশ্যই সিনেমা দেখবে। সেই কারণে চট্টগ্রামে সিনেপ্লেক্সে করার সাহস দেখিয়েছি।'

'ওটিটি প্ল্যাটফর্মে আমাদের দেশের যে সিনেমাগুলো মুক্তি পাচ্ছে সেই সিনেমাগুলো যদি দু'এক মাস যদি প্রথমে সিনেমা হলে মুক্তি পায় তাহলে আমার বিশ্বাস এই সিনেমাগুলো ভালো ব্যবসা করবে,' বলেন তিনি।

চট্টগ্রামের সুগন্ধা সিনেমার মালিক শাহাদাত দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সিনেমা হলের পরিবেশ আগে ভালো হতে হবে। এখন ৫০০ সিটের হল বানিয়ে লাভ নেই। কমসংখক মানুষের জন্য মানস্মমত হল বানাতে হবে। আমাদের এখানে সেটা করার চেষ্টা করেছি। এখানকার পরিবেশ অনেক উন্নত। সব বয়সী দর্শক এখানে সিনেমা দেখতে আসেন। শুধু সিনেমা বানালে হবেনা সিনেমার সাথে প্রচারণার বিষয়গুলো তারকাদের মাথায় রাখতে হবে। ভালো গল্প, প্রচারণা, সিনেমাহলের পরিবেশ ভালো হলে মানুষ সিনেমা দেখতে আসবে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের এখানে আরিফিন শুভ অভিনীত 'মিশন এক্সট্রিম' মীর সাব্বির পরিচালিত 'রাত জাগা ফুল', আজমেরি হক বাঁধন অভিনীত 'রেহানা মরিয়ম নূর'- এর মতো সিনেমাগুলো ভালো ব্যবসা করেছে। 'হাওয়া'র মতো সিনেমা তো সবসময় হয়না। 'হাওয়া' ও 'পরাণ' সিনেমাগুলো ভালো ব্যবসা করেছে আমাদের হলে। চট্টগামের আঞ্চলিক ভাষার সিনেমা 'মেইড ইন চিটাগং' আমাদের হলে ভালো ব্যবসা করেছে আমাদের এখানে। পার্থ বড়ুয়া অভিনীত এই  সিনেমাটি হাউজফুল চলেছে আমাদের সিনেমাহলে। এছাড়া শাকিব খান অভিনীত সিনেমাগুলো মুক্তি পেলে মানুষ এমনিতেও হলে আসে।'

'সিনেমা প্যালেস'- এর গৌরপদ চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অনেক সমস্যার মধ্যে আমরা এখন টিকে আছি। মাঝেমধ্যে দু'একটি সিনেমা ভালো ব্যবসা করে। তবে এই ধারাবাহিকতা রাখা প্রয়োজন। তানাহলে সিনেমা ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবেনা।'

চট্টগ্রামের বাসিন্দা সালাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সিনেমা হলগুলোর পরিবেশ ভালো হলে মানুষ অবশ্যই সিনেমা দেখতে যাবে। যে হলগুলোর পরিবেশ ভালো না চেয়ার ফ্যান, এসি নাই সেইসব হলে মানুষ কেন সিনেমা দেখতে যাবে? এখন কিছু সিনেমাহল হচ্ছে সেগুলো মানসম্মত। ভালোমানের সিনেমাহলের পাশাপাশি যদি ভালো গল্প, নায়ক, নায়িকাদের নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করা হয় অবশ্যই মানুষ সিনেমা দেখবে। তার প্রমাণ আমরা দেখেছি 'হাওয়া', 'পরাণ', 'দেবী', 'মেইড ইন চিটাগং' সিনেমাগুলোর মাধ্যমে। ভালো সিনেমা হলে মানুষ হলে আসে।'

Comments

The Daily Star  | English

Man killed as oil tanker crashes into car showroom in Natun Bazar

The deceased, whose identity could not be confirmed, was approximately 25-26 years old, said police

48m ago