খুব ইচ্ছে করে অভিনয় করতে কিন্তু পারি না: মাসুদ আলী খান
কালজয়ী বহু নাটকে অভিনয় করেছেন খ্যাতিমান অভিনেতা মাসুদ আলী খান। সাড়া জাগানো নাটক 'কূল নাই কিনার নাই', 'এইসব দিনরাত্রি', 'কোথাও কেউ নেই' তাকে দিয়েছে ব্যাপক খ্যাতি ও দর্শকপ্রিয়তা।
প্রশংসিত কয়েকটি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। একটা সময় মঞ্চে অভিনয় করেছেন। কিন্ত এখন অভিনয় থেকে দূরে আছেন তিনি। আসছে ১ ডিসেম্বর ৯৩ বছরে পা দেবেন বরেণ্য এই শিল্পী। দ্য ডেলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন মাসুমদ আলী খান।
পাওয়া না পাওয়া নিয়ে কোনো দুঃখবোধ কাজ করে কি?
না, না। দুঃখবোধ নেই আমার। পাওয়া না পাওয়া নিয়ে ভাবি না। আমি মনে করি আল্লাহ আমাকে বিপুল মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত করেছেন। এটা কজন পায়? এটুকুই শিল্পী জীবনের সেরা প্রাপ্তি। এখনো আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন এজন্য কৃতজ্ঞ মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি। মানুষ ভালোবাসে, সম্মান করে তাই তো অনেক।
কত বছর হলো অভিনয় করতে পারছেন না?
৪ বছর ধরে অভিনয় করতে পারি না। সবশেষ ইত্যাদিতে অংশ নিয়েছিলাম একবছর আগে। কিন্ত নাটক করা হয় না ৪ বছর। খুব ইচ্ছে করে অভিনয় করতে, কিন্ত পারি না। একটা জীবন কাটিয়ে দিলাম অভিনয় করে, সেখানে অভিনয় থেকে, চেনা মানুষদের থেকে দূরে থাকা অবশ্যই কষ্টের। খারাপও লাগে অভিনয় না করতে পারার জন্য।
সময় কাটে কীভাবে?
৮ বছর আগে পড়ে গিয়ে কোমর ভেঙে গিয়েছিল। তারপর থেকেই অনেকটা ঘরে পড়ে আছি। কোথাও যাই না। ঘরেই সময় কাটাই। কয়েক মাস পর পর একটু বাসার নিচে যাই। এ ছাড়া বেশিরভাগ সময় বাসায় থাকি। বই পড়ি, টেলিভিশন দেখি, পত্রিকা পড়ি, গানও শুনি। অনেক প্রিয় লেখক আছেন। কোনো কোনো লেখকের বই দ্বিতীয়বার করে পড়ছি। এভাবেই সময় কেটে যায়।
এমন কোনো সংগীত শিল্পী আছে, যার গান বার বার শোনেন?
আছেন তো। মান্না দে আমার খুব প্রিয় শিল্পী। মান্নাদের সব গানই আমার ভালো লাগে। তার অনেক গান বার বার শুনি। বহুকাল ধরেই মান্না দের গান আমাকে টানে। খুব করে টানে।
১ ডিসেম্বর আপনার জন্মদিন, জীবন থেকে ৯২ বছর কেটে গেল, কীভাবে দেখেন বিষয়টি?
বয়সটাকে তোয়াক্কা করি না। আমি বেঁচে আছি এটাই বড় কথা। আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন এটাই বড় বিষয়। বয়স নিয়ে ভাবলে কষ্ট বাড়বে। চলে তো যেতেই হবে। সবাই একসময় চলে যাবেন। জন্ম যার হয়েছে তার মৃত্যু হবেই। কিন্ত আমি বয়সের চিন্তা থেকে দূরে থাকি।
গ্রামে যাওয়া হয়?
দীর্ঘ দিন পরে গ্রামে গিয়েছিলাম। মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইরের খান বানিয়া গ্রামটি আমার। গ্রামে গিয়েছিলাম ভালো লাগার জন্য। কিন্তু গিয়ে আরও খারাপ লাগে। খেলার সাথীদের কেউ আর বেঁচে নেই। আমার বয়সী কেউ বেঁচে নেই। বন্ধুরা নেই। আত্মীয়রাও নেই। গ্রামে মুজিবুর মিয়া নামে একজন আছেন। তাকে পেয়েছিলাম। আমার এক বছরের বড়। গ্রাম সম্পর্কের ভাই তিনি। তাকে পেয়েছিলাম। তাকে পেয়ে অনেক গল্প করেছি। সত্যি কথা বলতে যাদের কথা মনে করি কেউই নেই।
অনেক কালজয়ী নাটকে অভিনয় করেছেন, সেসব দেখা হয়?
মাঝে মাঝে দেখি। দেখার পর স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি।
অভিনয় শিল্পী সংঘের কেউ খোঁজ নেন?
নেয় তো। আমি এই সংগঠনের সদস্য। কোনো অনুষ্ঠান হলে আমাকে আমন্ত্রণ করে। কিন্ত শরীরের জন্য যেতে পারি না। তবে, যেতে ইচ্ছে করে।
Comments