বর্ণিল আয়োজনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩২ বছর পূর্তি উদযাপন

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস : বর্ণিল আয়োজনে ৩২ বছর পূর্তি উদযাপন
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে ক্যাম্পাসে শোভাযাত্রা। ছবি: সংগৃহীত

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশের অন্যতম প্রধান বধ্যভূমি খুলনার গল্লামারিতে প্রতিষ্ঠিত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষা কার্যক্রমের ৩২ বছর পূর্ণ করেছে।

আজ শুক্রবার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। দিবসটি যথাযথভাবে পালনের জন্য সকাল সোয়া ১০টায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়।

এ ছাড়াও, অন্যান্য অনুষ্ঠানের মধ্যে আছে কালজয়ী মুজিব ম্যুরাল ও শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ, সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের উদ্বোধন, বিকেল ৪টায় মুক্তমঞ্চে ডিসিপ্লিনগুলোর অর্জন ও পরিকল্পনা উপস্থাপন, কৃতি শিক্ষার্থীদের সম্মাননা ও বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

ইতোমধ্যে প্রধান ফটক, একাডেমিক ভবন ও হলগুলোয় আলোকসজ্জা করা হয়েছে।

মাত্র ৪ ডিসিপ্লিনে ৮০ শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হওয়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এক অনন্য বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে, বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কুলের (অনুষদ) সংখ্যা ৮ এবং ডিসিপ্লিনের সংখ্যা ২৯।

২১ বিদেশিসহ শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার। শিক্ষক রয়েছেন ৫ শতাধিক। এর এক-তৃতীয়াংশ পিএইচডি ডিগ্রিধারী। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১ দশমিক ১২, যা বিশ্বমানের। ছাত্র-ছাত্রীর অনুপাত ৫৪ দশমিক ৪৬, যা দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ে এ পর্যন্ত ৬টি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রায় ১৫ হাজার গ্রাজুয়েটকে আনুষ্ঠানিকভাবে সনদপত্র দেওয়া হয়েছে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস : বর্ণিল আয়োজনে ৩২ বছর পূর্তি উদযাপন
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপনের অনুষ্ঠান উদ্বোধন। ছবি: সংগৃহীত

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আপামর মানুষের দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল হিসেবে ১৯৮৭ সালের ৪ জানুয়ারি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাসংক্রান্ত সরকারি সিদ্ধান্ত গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। ১৯৮৯ সালের ৯ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়।

১৯৯০ সালের জুলাইয়ে জাতীয় সংসদে 'খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আইন-১৯৯০' পাস হয়, যা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয় সেই বছরের ৩১ জুলাই।

১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষে মাত্র ৪ ডিসিপ্লিনে ৮০ শিক্ষার্থী নিয়ে ১৯৯১ সালের ৩১ আগস্ট ক্লাস শুরু হয়। শিক্ষা কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় ওই বছরের ২৫ নভেম্বর।

প্রতিষ্ঠাকালের বিবেচনায় দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান নবম। শান্ত-পরিচ্ছন্ন ও ভাবগম্ভীর পরিবেশ ক্যাম্পাসের প্রধান আকর্ষণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুউচ্চ ম্যুরাল। এর গায়ে উৎকীর্ণ আছে ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ।

আরও আছে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ প্রশাসন ভবন, ড. সত্যেন্দ্রনাথ বসু একাডেমিক ভবন, আচার্য জগদীশচন্দ্র একাডেমিক ভবন ও কবি জীবনানন্দ দাশ একাডেমিক ভবন।

বঙ্গমাতা হলে আছে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ম্যুরাল। আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ শিক্ষার্থীর করুণ মৃত্যুর স্মৃতিতে তৈরি কটকা স্মৃতিস্তম্ভ।

অপূর্ব স্থাপত্যশৈলীর কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ভবন। এর ছাদ টেনসাইল মেমব্রেনে তৈরি।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পরই ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স ক্রেডিট পদ্ধতি চালু হয়। দেশের মধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিন, ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লিন, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিন এবং ঢাকার বাইরে স্থাপত্য ডিসিপ্লিন ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিন প্রথম চালু হয়।

দেশের মধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় হিসেবে ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিন চালু হয়। সুন্দরবন ও উপকূল নিয়ে গবেষণার জন্য এখানে আছে ইনস্টিটিউট ফর ইন্টিগ্রেটেড স্টাডিজ অন দ্য সুন্দরবানস অ্যান্ড কোস্টাল ইকোসিস্টেম (আইআইএসএসসিই)।

এখানে স্থাপিত হয়েছে দেশের প্রথম সয়েল আর্কাইভ। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের মাটির ২০ ফুট গভীরে সুরম্যভাবে স্থাপিত এই আর্কাইভ। এখানে সংগৃহীত আছে দেশের ৫ জোনের ১ হাজার ৮৫৮ প্লটের ৫ হাজারের বেশি মাটির নমুনা।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট নেই। ছাত্র রাজনীতিও নেই। তবে ৩২টি সাংস্কৃতিক সংগঠন আছে। এ সংগঠনগুলো সারা বছর ক্যাম্পাসকে উৎসবমুখর করে রাখে।

শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বিতর্ক প্রতিযোগিতা, রক্তদানে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, খেলাধুলার জন্য আন্তঃডিসিপ্লিন ক্রিকেট, ফুটবল টুর্নামেন্ট ছাড়াও অ্যাথলেট প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। আছে দৃষ্টিনন্দন লেকওয়ে।

গবেষণা কার্যক্রম বৃদ্ধি তথা নবীন-প্রবীণদের গবেষণায় আগ্রহী করে তুলতে অনুদান বাড়ানো হয়েছে। গত বছর ৬২ গবেষণা প্রকল্পে ২ কোটি টাকার অনুদান দেওয়া হয়। চলতি বছর এই বরাদ্দ ২ কোটি ৭০ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে।

মাস্টার্স, এমফিল ও পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণা অনুদান চালু হয়েছে। কেন্দ্রীয় গবেষণাগার ছাড়াও আছে প্রত্যেকটি ডিসিপ্লিনের নিজস্ব গবেষণাগার। কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে সেন্ট্রাল কম্পিউটিং ল্যাব স্থাপনের কাজ চলেছে। গবেষণার পাশাপাশি উদ্ভাবনী সুযোগ সৃষ্টিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় কেন্দ্রীয় ইনোভেশন হাব তৈরির কাজও চলমান।

উপাচার্য ড. মাহমুদ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেশের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে আস্থা তৈরিতে সক্ষম হয়েছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রায় সব শাখার সম্মিলনে বিশ্ববিদ্যালয়টি পূর্ণাঙ্গরূপ পাওয়ার পথে।'

বিশ্ববিদ্যালয়টি শিগগির শিক্ষা, গবেষণা ও উদ্ভাবনে বিশ্বসারণীতে স্থান করে নেবে বলে আশা করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Beximco workers' protest turns violent in Gazipur

Demonstrators set fire to Grameen Fabrics factory, vehicles; properties vandalised

3h ago