বাসে ই-টিকিটে নির্ধারিত ভাড়ার পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংযোজনের দাবি যাত্রী কল্যাণ সমিতির

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘ঢাকা সিটিবাস সার্ভিসে ই-টিকিটিং যাত্রীদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত আলোচনা সভায় কথা বলছেন বক্তারা। ছবি:দীপন নন্দী/ স্টার

পরিবহন খাতে দীর্ঘ দিনের পুঞ্জিভূত সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি এই খাতের আমূল সংস্কার করা না গেলে ই-টিকেটিং সিস্টেমে সিটিবাস সার্ভিস ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।

আধুনিক গণপরিবহন সেবায় ই-টিকেটিং ব্যবস্থাকে স্বাগত জানিয়ে আজ বৃহস্পতিবার যাত্রী কল্যাণ সমিতির নেতারা এই দাবি করেন।

তাদের মতে, ই-টিকিটে দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া আদায় নিশ্চিত করায় যাত্রীর ভাড়া কমে আসছে। এর ফলে বাস মালিকের আয়ও কমে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন বাসে কোম্পানির জিপি ও অদৃশ্য খাতের খরচ বন্ধ করা না গেলে অনেক পরিবহন মালিককে লোকসান দিয়ে বাস চালাতে হবে। যানজট, চাঁদাবাজিসহ নানা কারণে দীর্ঘদিন যাবৎ সিটি সার্ভিসের বাস খাতে নতুন বিনিয়োগ আসছে না। লোকসানের সম্ভাবনায় এই খাতে আগামী দিনে গভীর সংকট তৈরির শঙ্কা রয়েছে।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে 'ঢাকা সিটিবাস সার্ভিসে ই-টিকিটিং যাত্রীদের প্রত্যাশা' শীর্ষক বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব মন্তব্য করেন।

সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, 'টিকিট মানে সেবা মূল্যের রশিদ। আন্তর্জাতিক ক্রেতা-ভোক্তা অধিকার আইন অনুযায়ী, প্রতিটি পণ্য বা সেবামূল্যের রশিদ প্রদানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দীর্ঘদিন পর নগরীর সিটি সার্ভিসের বাসে ই-টিকিটিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে এটি পূরণে এগিয়ে আসায় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রতিটি টিকিটে টিকিট প্রদানকারী বাসের নাম, বাসের নিবন্ধন নম্বর, যাত্রা ও গন্তব্যের নাম, দূরত্ব, ভাড়া, ভ্রমণ তারিখ ও অভিযোগ কেন্দ্রের নম্বর থাকার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত এর সব তথ্য দেওয়া হয় না। কোনো কোনো টিকিটে শুধুমাত্র ভাড়া লেখা রয়েছে। যাত্রা ও গন্তব্যের নাম, বাসের নাম ও নম্বর না থাকায় এসব টিকিট দিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হলে যাত্রীদের প্রতিকার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই৷'

তিনি আরও বলেন, 'ভাড়া নির্ধারণের শর্ত অনুযায়ী চালক-সহকারীর নিয়োগপত্র, বেতন ও ওভারটাইম নিশ্চিত করা জরুরি। লক্কড়-ঝক্কড় বাস উচ্ছেদ করে বাসের সার্বিক পরিবেশ উন্নত করা, আধুনিক বিশ্বের আদলে সিটি সার্ভিস গড়ে তোলা, সরকার নির্ধারিত ভাড়া কার্যকর করে বাসের জন্য আলাদা ডেডিকেটেড লেইনের ব্যবস্থাসহ নানামুখী সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হলে মানুষ ধীরে ধীরে বাসমুখী হবে। মোটরসাইকেলসহ ছোট পরিবহনের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে। এতে করে যানজট ও মানুষের যাতায়াত ব্যয় কমে আসবে।'

সংগঠনের এক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, শুরুতেই ই-টিকেটিং নিয়ে যাত্রী, বাস মালিক-শ্রমিকের মধ্যে নানা মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। ই-টিকেটিং চালুর পর বিভিন্ন রুটে মালিকরা বাসের সংখ্যা কমিয়ে দেন। ই-টিকিটিংয়ে চলাচলকারী বাসে দূরত্বের ব্যবধানে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেন নগরীর যাত্রী সাধারণ।

এতে আরও বলা হয়, কোনো কোনো পথে ভাড়া কমে আসার নজিরও রয়েছে। যেমন: খিলক্ষেত থেকে মিরপুর-১১ রুটে নিয়মিত যাত্রীরা আগে ৩০ টাকায় যাতায়াত করলেও ই-টিকেটিং চালুর পর থেকে নিয়মিত ২২ টাকা ভাড়ায় যাতায়াত করছেন। আসাদগেট থেকে মিরপুর-১ পর্যন্ত আগে ২৫ টাকা ভাড়া নেওয়া হলেও ই-টিকিটিংয়ে এই পথের ভাড়া ১৩ টাকায় নেমে এসেছে। শেওড়াপাড়া থেকে ধানমন্ডি-২৭ পর্যন্ত আগে ২০ টাকা ভাড়া নেওয়া হলেও এ পথে এখন ১৩ টাকা ভাড়া নেমে এসেছে। রামপুরা থেকে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত আগে ২০ টাকা ভাড়া আদায় করা হলেও ই-টিকিটিংয়ে নেওয়া হচ্ছে ১৫ টাকা। মিরপুর-১ থেকে গাবতলি পর্যন্ত আগে ভাড়া ছিল ২০ টাকা, যা ই-টিকিটিংয়ে নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা। মিরপুর-১ থেকে সাভার পর্যন্ত আগের ভাড়া ৪০ টাকা হলেও বর্তমানে ৩০ টাকায় নেমে এসেছে৷

আলোচনা সভায় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি কর্তৃক বাসে বাসে প্রদানকৃত ই-টিকিটের ছবি ও যাত্রী কল্যাণ সমিতি প্রস্তাবিত ই-টিকিটের নমুনা প্রদর্শন করা হয়।

Comments

The Daily Star  | English
rally demanding ban on awami league in Dhaka

Blockade at Shahbagh demanding AL ban

The demonstration follows a sit-in that began around 10:00pm last night in front of the Chief Adviser's residence

4h ago