তাজরীন ট্রাজেডির ১০ বছর: মামলার অগ্রগতিতে হতাশা

আজ বৃহস্পতিবার তাজরীন ট্র্যাজেডিতে নিহতদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন নিহতদের স্বজন, আহত শ্রমিক ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। ছবি: আকলাকুর রহমান আকাশ/ স্টার

সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় ২০১২ সালের আজকের এই দিনে তাজরীন ফ্যাশন লিমিটেডে অগ্নিকাণ্ডে ১১৭ জন পোশাক-কর্মী নিহত হন। আহত হয়েছিলেন ২ শতাধিক।

আজ বৃহস্পতিবার তাজরীন ট্র্যাজেডির ১০ বছর উপলক্ষে কারখানাটির সামনে নিহতদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন নিহতদের স্বজন, আহত শ্রমিক ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। আজ প্রথম প্রহরে কারখানা ফটকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা।

গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি, টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ শ্রম ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পোশাক-শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন, গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স টেইলার্স লীগসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সে সময় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও নীরবতা পালন করা হয় এবং মোনাজাত করা হয়।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা বলেন, তাজরীন ট্র্যাজেডির ১০ বছরেও এখন পর্যন্ত আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা হয়নি, শ্রমিকদের পুনর্বাসন করা হয়নি, যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি এবং তাজরীন ফ্যাশনের মালিকসহ দোষীদের বিচারকার্য শেষ করা হয়নি।

৮ তলা ভবনের ৫ তলায় কাজ করতেন আঞ্জুয়ারা। অগ্নিকাণ্ডের সময় ৫তলা থেকে কোনোভাবে প্রাণে বাঁচলেও কোমরে ও মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।

আঞ্জুয়ারা বলেন, কারখানা কর্তৃপক্ষের গাফলতিতে এতগুলো শ্রমিকের প্রাণ গেল এবং আমরা আহত হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়েছি। কিন্তু আমাদের পুনর্বাসন, ক্ষতিপূরণ ও দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসার ব্যবস্থা আজ পর্যন্ত সরকার নিশ্চিত করেনি।

দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি এখনো নিশ্চিত হয়নি। তাজরীনে অগ্নিকাণ্ডের পর আমাদেরকে নামমাত্র কিছু টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছিল। আমরা আহত প্রায় শতাধিক শ্রমিক দীর্ঘদিন যাবৎ মানবেতর জীবনযাপন করছি, তিনি বলেন।

তাজরীন ট্র্যাজেডিতে আহত শ্রমিক সুমি আক্তার বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ আমারা দাবি জানিয়ে আসছি আমাদের পুনর্বাসন, ক্ষতিপূরণ ও দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসার ব্যবস্থা হোক। কিন্তু, আমাদের কোনো দাবি আজ পর্যন্ত পূরণ হলো না।

অবিলম্বে কারখানার মালিক দেলোয়ারসহ দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।

গার্মেন্টস-শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, '২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আগুন লাগার পর কারখানা কর্তৃপক্ষ গেটে তালা লাগিয়ে শতাধিক শ্রমিককে পুড়িয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনার ১০ বছর পার হলেও এখনো দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হয়নি। এতে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট। এ কারণে পরবর্তীতে রানা প্লাজা ধসে আবারও হতাহতের ঘটনা ঘটে। অবিলম্বে তাজরীনের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার এবং পুড়ে যাওয়া ভবনটি সংস্কার করে শ্রমিকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করাতে হবে।

মামলার অগ্রগতি নিয়ে হতাশা

তাজরীন ট্র্যাজিডির ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে কারখানা মালিক দেলোয়ারসহ কয়েকজন কারখানা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় ২টি আলাদা মামলা দায়ের করেন। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে পুলিশ কারখানা মালিক দেলোয়ারসহ মোট ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলা ২টি বর্তমানে ঢাকার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-১ এ চলমান রয়েছে। লাগাতার শ্রমিক নেতাদের দাবির মুখে এখন পর্যন্ত মামলায় ১০৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। মামলার আসামিরা সবাই জামিনে জেলের বাইরে আছেন।

মামলার অগ্রগতি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি অরবিন্দু বেপারী (বিন্দু) ডেইলি স্টারকে বলেন, দীর্ঘ ১০ বছরেও তাজরীন হত্যাকাণ্ডের মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। ভবন মালিক দেলোয়ার হোসেনসহ সব অপরাধীরাই ঘুরে বেড়াচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক। দেলোয়ারকে শাস্তির বদলে সরকার পুরস্কৃত করেছে। তাকে কোনো একটি এলাকার আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, দীর্ঘ ১০ বছরেও সরকার, বিজিএমইএ আহত ও নিহত শ্রমিকদের পরিবারের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে পারেনি। এটাও দুঃখজনক।

আমরা আগেও যে দাবিগুলো করেছি এখনো ঠিক সেই দাবি করছি। বিশেষ ট্রাইবুন্যাল গঠনের মাধ্যমে দ্রুত আইনে মামলা নিষ্পত্তি করা হোক। দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক, যোগ করেন অরবিন্দু বেপারী।

গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান শ্রমিকনেতা তাসলিমা আখতার বলেন, ১০ বছর পার হয়েছে। মামলায় দীর্ঘসূত্রিতা, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও স্বজনপ্রীতির দোষে আজও শাস্তি হয়নি তাজরীনের মালিক দেলোয়ার হোসেনসহ অন্যদের। ক্ষতিপূরণ আইন বদল করতে হবে। দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English
compensation for uprising martyrs families

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

7h ago