জমি সংকটে ৬ এলাকায় সীমাবদ্ধ চট্টগ্রামের ‘ওয়াটার এটিএম’ সেবা

স্বল্প খরচে সুপেয় পানি সরবরাহের লক্ষ্য নিয়ে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম শহরে প্রথমবারের মতো শুরু হওয়া ‘ওয়াটার এটিএম’ পরিষেবা জমি সংকটের কারণে সম্প্রসারণ করা যাচ্ছে না।
চট্টগ্রামের ফিরোজ শাহ এলাকায় এটিএম বুথ থেকে পানি সংগ্রহ করছেন একজন গ্রাহক। ছবি: স্টার

স্বল্প খরচে সুপেয় পানি সরবরাহের লক্ষ্য নিয়ে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম শহরে প্রথমবারের মতো শুরু হওয়া 'ওয়াটার এটিএম' পরিষেবা জমি সংকটের কারণে সম্প্রসারণ করা যাচ্ছে না।

চট্টগ্রাম ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যুয়ারেজ অথরিটি (ওয়াসা) সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি খুলশী এলাকায় প্রথম ওয়াটার এটিএম বুথ চালু করার পর দুই বছরে প্রতিষ্ঠানটি নগরীর মাত্র ৬টি এলাকায় এই সেবা চালু করতে পেরেছে।

২০১৯ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পটি শুরুর সময় চট্টগ্রাম ওয়াসা ১০০টি ওয়াটার এটিএম বুথ স্থাপনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। এর জন্য প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি ড্রিংকওয়েলের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করে।

ওয়াসা সূত্র জানায়, পাইলট প্রকল্পের আওতায় ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিনে খুলশী ১ নম্বর সড়ক এলাকায় প্রথম ওয়াটার এটিএম বুথ চালু করা হয়। পরে ফিরোজ শাহ কলোনি, ওয়াসা মোড়, হালিশহর নয়াবাজার, হালিশহর এ ব্লক ও সদরঘাট সাহেব বাজার এলাকায় এই সেবা সম্প্রসারণ করা হয়।

এখান থেকে ৬০ পয়সায় প্রতি লিটার বিশুদ্ধ পানি কেনা যায়। যেখানে এক লিটার বোতলজাত পানির ব্র্যান্ডভেদে দাম রাখা হয় ১৫-২০ টাকা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় প্রতিটি ওয়াটার এটিএম বুথে দুটি আউটলেট আছে। বুথ থেকে একই সময়ে দুইজন পানি পেতে পারেন। প্রতিটি আউটলেটে এটিএম কার্ড ব্যবহারের ব্যবস্থা রয়েছে। নির্ধারিত মেশিনে কার্ড রাখার সঙ্গে সঙ্গে পাইপ দিয়ে ভিতর থেকে পানি আসতে শুরু করে। একটি যন্ত্রের মাধ্যমে ওয়াসার পানি বিশুদ্ধ হয়ে এখানে আসে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পুরো প্রক্রিয়াটি কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত।

ফিরোজ শাহ এলাকার বস্তির বাসিন্দা আমানা বেগম বলেন, আগে খাবার পানি সংগ্রহ করতে সমস্যা হতো। 'আমাদের বিভিন্ন জায়গা থেকে পানি সংগ্রহের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো। তার ওপর বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যেত না। এ কারণে শিশুদের প্রায়ই পেটের রোগ হতো। এখানে আমরা খুব সস্তায় পানি পাচ্ছি।'

পতেঙ্গা এলাকার বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, ওয়াসা পানির সংযোগ না দেওয়ায় পতেঙ্গার বাসিন্দাদের নলকূপের পানি ব্যবহার করতে হয়।

'নলকূপের পানিতে লবণাক্ততা এবং আয়রন আছে। এ কারণে পানির জার কিনতে হতো। জারের প্রতি লিটার পানির দাম পড়ে ৫ টাকা। পতেঙ্গা এলাকায় ওয়াটার এটিএম স্থাপন করা হলে খুব সস্তায় পানি পাওয়া যেত।'

নগরীতে কেন এই সেবা সম্প্রসারণ করা যাচ্ছে না জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, জমি সংকটে এই সেবা সম্প্রসারণ করা যাচ্ছে না।

'আমরা বিভিন্ন এলাকায় আমাদের নিজস্ব জমিতে ছয়টি এটিএম বুথ স্থাপন করেছি। কিন্তু অন্য এলাকায় আমাদের নিজস্ব জমি না থাকায় আমরা সম্প্রসারণের জন্য যেতে পারিনি।'

তিনি আরও বলেন, 'যে কোম্পানির সঙ্গে আমরা প্রকল্প পরিচালনার জন্য এমওইউ সই করেছি, ওই কোম্পানি শিগগির চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাছে এটিএম বুথ স্থাপনের জন্য জমি চেয়ে আবেদন করবে।'

এটিএম পরিষেবার মাধ্যমে সরবরাহ করা পানির বিশুদ্ধতা সম্পর্কে জানতে চাইলে ফজলুল্লাহ বলেন, 'ওয়াসা ট্রিটমেন্টের পর পানি সরবরাহ করে। এই পানি পানের জন্য নিরাপদ বলে মনে করা হলেও আমরা এটা ১০০ ভাগ নিশ্চিত করতে পারি না। কারণ অনেক এলাকায় ওয়াসার পাইপলাইন ফুটো হয়ে পানি দূষিত হতে পারে। এটিএম বুথে কোম্পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র স্থাপন করেছে। ওই যন্ত্রে ওয়াসার পানি আবার বিশুদ্ধ করা হয়।'

যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রামের ড্রিংকওয়েলের এরিয়া ম্যানেজার মঞ্জুর আলম বলেন, আগামী শনিবার ঢাকায় এলজিআরডি মন্ত্রী, চসিক মেয়র এবং চট্টগ্রাম ওয়াসা ও ড্রিংকওয়েলের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি সভা হবে। জমি সংকটের বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে।'

এটিএম বুথ থেকে পানি কেনার প্রক্রিয়া সম্পর্কে মঞ্জুর বলেন, একজন গ্রাহক ২০০ টাকায় একটি কার্ড কিনতে পারবেন, এর মধ্যে ১০০ টাকা রেজিস্ট্রেশনের জন্য এবং বাকি ১০০ টাকায় গ্রাহক ১৬৬ লিটার পানি পাবেন। গ্রাহক ব্যালেন্স শেষ করার পরে ন্যূনতম ৫০ টাকা দিয়ে কার্ডটি রিচার্জ করতে পারবেন।

কার্ডের রেজিস্ট্রেশনের জন্য দুই কপি ছবি এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা নেওয়া হয়। এখন ওয়াটার এটিএম বুথ থেকেই এই কার্ডটি বিক্রি করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে নির্দিষ্ট এলাকায় কিছু নির্দিষ্ট দোকানে কার্ড কেনা ও রিচার্জ করা যাবে।

এ ব্যাপারে মন্তব্যের জন্য চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladeshi-Americans eager to help build new Bangladesh

July uprising and some thoughts of Bangladeshi-Americans

NRBs gathered in New Jersey showed eagerness to assist in the journey of the new Bangladesh forward.

4h ago