‘যেখানে উন্নত দেশ হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আমাদের তো ভুগতেই হবে’

রোববার একাদশ জাতীয় সংসদের ২০তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'যেখানে উন্নত দেশ হিমশিম খাচ্ছে সেখানে আমাদের তো ভুগতেই হবে। আমি তো বলেছি, আমাদের তৈরি থাকতে হবে যে কোনো অবস্থায়।'

আজ রোববার একাদশ জাতীয় সংসদের ২০তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, 'অর্থনীতি ধরে রাখতে সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে এর সঙ্গে প্রত্যেকেরই কিছুটা কৃচ্ছতা সাধন করতে হবে।'

তিনি বলেন, 'আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে ডলার সংকটের চাপ যেন কেটে যায়, সেদিকে সরকার বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছে। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার একটা চাপ তৈরি হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ঋণপত্র খোলার বাড়তি চাপ শেষ হবে।'

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'সামনে কী হতে যাচ্ছে সেটা একটা আশঙ্কার ব্যাপার। প্রতিনিয়ত বিষয়টি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। বিলাসদ্রব্যের আমদানি কমাতে হবে।'

আঙুর–আপেলের মতো বিদেশি ফলের পরিবর্তে আমড়া–তরমুজের মতো দেশি ফল খাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

মন্দা পরিস্থিতির কারণে বিভিন্ন খাতে সরকারের ভর্তুকির পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে উল্লেখ করে সংসদ নেতা বলেন, 'বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি, পরিবহন খরচ বাড়ায় ভর্তুকির চাহিদা বেড়েছে। বিদ্যুৎখাতে ভর্তুকি ধরা হয়েছিল ১৭ হাজার কোটি টাকা। এখন সেখানে অতিরিক্ত চাহিদা তৈরি হয়েছে ৩২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ দিতে হলে এই ভর্তুকি দিতে হবে।'

'জ্বালানি তেলে অতিরিক্ত ভর্তুকি লাগছে ১৯ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা। খাদ্য আমদানিতে লাগছে ৪ হাজার কোটি টাকা। টিসিবিসহ জনবান্ধব কর্মসূচিতে অতিরিক্ত দিতে হচ্ছে ৯ হাজার কোটি টাকা, যোগ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, '১ কোটি মানুষকে কার্ড দেওয়া হয়েছে। স্বল্পমূল্যে তাদের খাদ্য দেওয়া হচ্ছে। কৃষিখাতে অতিরিক্ত ভর্তুকি লাগছে ৪০ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার ১০৫ কোটি টাকা শুধু ভর্তুকি চাহিদা বেড়েছে।'

বৈদেশিক ঋণের বিষয়ে তিনি বলেন, 'সরকারি ঋণ জিডিপির মাত্র ৩৬ শতাংশ। বৈদেশিক ঋণ ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ। সরকার কখনো ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়নি। ভবিষ্যতেও হবে না।'

বিভিন্ন সরকারের আমলে রিজার্ভের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বর্তমান সরকারের সময় রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়নের কাছাকাছি গিয়েছিল। করোনা সংক্রমণ কমে যাওয়ার পর সব কিছু উন্মুক্ত হওয়ায় আমদানি বাড়তে থাকে, সঙ্গে সঙ্গে রিজার্ভ কমতে থাকে।'

গত ৩ নভেম্বরে রিজার্ভ ৩৫ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এটি দিয়ে অন্তত ৫ মাসের আমদানি করা সম্ভব। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ৩ মাসের আমদানি করার মতো রিজার্ভ থাকলেই যথেষ্ট।'

রিজার্ভ কমে যাওয়া নিয়ে সমালোচনার জবাবে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, 'রিজার্ভ গেল কোথায়? শুধু বললে তো হবে না। আমরা বিনা পয়সায় করোনার ভ্যাকসিন দিয়েছি। এই ভ্যাকসিন কিন্তু ডলার দিয়ে কিনতে হয়েছে। সিরিঞ্জ কিনতে হয়েছে। করোনাকালে চিকিৎসাকর্মীদের আলাদা ভাতা দিয়েছি।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'চলতি অর্থবছরে (জুলাই-অক্টোবর) রপ্তানি আয় হয়েছে ১৬ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরে (জুলাই-অক্টোবর) রেমিট্যান্স এসেছে ৭ দশমিক ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা গত বছরের একই সময়ে থেকে ২ শতাংশ বেশি। একই সময়ে আমদানি ঋণ খোলা হয়েছে ২২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৭ শতাংশ কম।'

রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার প্রভাবের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'পণ্য আমদানিতে খরচ বাড়ছে, পণ্য পাওয়া মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।'

'অর্থনৈতিকভাবে সারা বিশ্ব বিপর্যস্ত। বাংলাদেশ তার থেকে আলাদা না। তার ফলাফল বাংলাদেশকেও ভোগ করতে হচ্ছে,' বলেন তিনি।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি সবাইকে ঘরে ঘরে ডেঙ্গুর বিষয়ে সুরক্ষা নিতে হবে। নিজের ঘরে যেন ডেঙ্গু উৎপন্ন না হয়। মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে।'

বিএনপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পরিবহন ধর্মঘটের প্রসঙ্গ টেনে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, 'বাস মালিকরা যদি বাস না চালায় তাহলে আমরা কী করতে পারি?'

২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে জ্বালাও পোড়াওয়ের তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'তারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে। জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। এই যাদের অবস্থা, তাদের কি জনগণ ভোট দেবে?'

Comments

The Daily Star  | English

For the poor, inflation means a daily struggle

As inflation greets Bangladeshis at breakfast time, even the humble paratha becomes a symbol of struggle. Once hearty and filling, it now arrives thinner and lighter -- a daily reminder of the unending calculations between hunger and affordability.

8h ago