নেপালে বিদ্যুৎ রপ্তানি না আমদানি

গত ২৬ এপ্রিল নেপালের জ্বালানি, পানিসম্পদ ও সেচ বিষয়ক মন্ত্রী পাম্পা ভুসালের সঙ্গে বৈঠকে শীতে তাদের দেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। গত ২৫ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারি জানান, তারা বাংলাদেশকে ৪০ তেকে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেবে।

গত ২৬ এপ্রিল নেপালের জ্বালানি, পানিসম্পদ ও সেচ বিষয়ক মন্ত্রী পাম্পা ভুসালের সঙ্গে বৈঠকে শীতে তাদের দেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। গত ২৫ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারি জানান, তারা বাংলাদেশকে ৪০ তেকে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেবে।

৬ মাসে আগে যেখানে বলা হলো বাংলাদেশ নেপালে বিদ্যুৎ রপ্তানি করবে, সেখানে এখন নেপাল বলছে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দেবে। বর্তমানে দেশের বিদ্যুতের যে অবস্থা, বাংলাদেশ নেপালের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করবে, নাকি কিনবে?

বিষয়টি নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) উপদেষ্টা ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পেট্রোলিয়াম প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ম তামিমের সঙ্গে।

নেপালে বিদ্যুৎ রপ্তানি করার কথার কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই বলে উল্লেখ করে অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, 'এ মন্তব্যের ভিত্তি বা যৌক্তিকতা কী? দেশে চরম বিদ্যুৎ সংকট। এখন শীতে এই সংকট নিরসন হয়ে বিদ্যুৎ সারপ্লাস হয়ে যাবে এবং সেই বিদ্যুৎ বাংলাদেশ যে দামে কিনেছে, সেই দামের সঙ্গে খরচ যোগ করে অন্য দেশের কাছে বিক্রি করতে পারবে, আমি মনে করি না যে এসব বিষয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আবার যে দেশ কিনবে, যৌক্তিক দামে তারা কিনতে পারবেন কি না, আবার বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ বিক্রি করার ক্ষমতা আদৌ আমাদের আছে কি না? বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারলেই রপ্তানি করা যাবে, এটাকে এত সরলীকরণ করার কোনো উপায় নেই। কারণ যে দেশ কিনবে, তাদের কাছে সেটা সাশ্রয়ী হতে হবে। আমরা এখনো সাশ্রয়ী খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারিনি। আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনে অযৌক্তিক ব্যয় বৃদ্ধি করেছি।'

'বিদ্যুৎ রপ্তানি করা হবে, এটা বলা মানে অজ্ঞতার পরিচয় দেওয়া। এসব কথাবার্তা দিয়ে বোঝা যায় যে, যিনি এ কথা বলেছেন, এ সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই', বলেন তিনি।

নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনার বিষয়ে এ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, 'আমরা যদি নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনতে চাই, তাহলে ভারত দিয়ে আনতে হবে। এখন ভারতীয় নীতির কারণে নেপাল সরাসরি বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিতে পারবে না। এখানে কোনো দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হওয়ার সুযোগ নেই। হতে হবে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি। এখন ত্রিপাক্ষিক চুক্তির আওতায় বিদ্যুৎ আনাটা কতটা সহজ হবে, সেটা এখনো অনিশ্চিত। ভারতীয় নীতি অনুযায়ী, তারা এ বিদ্যুৎ নেপালের কাছ থেকে কিনে আমাদের কাছে বিক্রি করবে। সরাসরি নেপালের কাছ থেকে আমরা কিনতে পারব না। এর সমাধান করতে হলে ভারতীয় নীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। এ বিষয়ে ভারতের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক এখনো চূড়ান্ত হয়নি।'

'ভারতের ওপর দিয়ে বিদ্যুৎ আনতে হলে প্রয়োজনে তাদের হুইলিং চার্জ (বিদ্যুতের সঞ্চালন মূল্যহার) দেওয়া হবে। আমাদের করিডোর দিয়ে তো তাদের মালপত্র চলাচলের সুবিধা দিচ্ছি। তেমনি তারাও এ সুবিধা আমাদের দিতে পারে। এ সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আমরা চাই অতি শিগগির বিষয়টি চূড়ান্ত করা হোক', যোগ করেন অধ্যাপক শামসুল আলম।

এ মুহূর্তে আমরাই বিদ্যুৎ সংকটে আছি উল্লেখ করে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ম তামিম বলেন, 'সাধারণত শীতে চাহিদা কম থাকায় আমাদের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ থেকে যায়। সেজন্য আমাদের ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়। আবার শীতে নেপালে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যায়। তাদের সেখানে ঠাণ্ডা পড়ায় হিটিংয়ের জন্য বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। বর্তমানে আমাদের যে পরিস্থিতি, তাতে তো তাদের বিদ্যুৎ রপ্তানি করা যাবে না। কিন্তু, ভবিষ্যতে পরিস্থিতি ঠিক হলে তখন দেওয়া যেতে পারে।'

নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে তিনি বলেন, 'নেপাল থেকে ভারতের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ আনতে হবে। এখন ৪০ থেকে ৫০ মেগাওয়াট তো খুব বেশি বিদ্যুৎ না। এটা আসলে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনার প্রক্রিয়া শুরুর একটা উদ্যোগ। অর্থাৎ এর মাধ্যমে এ যোগাযোগ ব্যবস্থাটা স্থাপন করা। যাতে করে ভবিষ্যতে আমরা তা আরও বাড়াতে পারি এবং সেখানে বিনিয়োগ করে আমদানি বাড়াতে পারি। ভারতের মধ্যদিয়ে নেপাল-ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আনার অনুমতি দিতে ভারত একমত হয়েছে। ইতোমধ্যে এ ধরনের সমঝোতা হয়েছে। সেটা চূড়ান্ত করতে হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago