পাথর উত্তোলন: অবৈধ চাপে নতিস্বীকার না করার আহ্বান ২০ নাগরিকের

জাফলংয়ে পাথর উত্তোলন। ছবি: স্টার

সিলেটের পাথর কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন প্রসঙ্গে উচ্চ আদালতের আদেশ ও পাথর উত্তোলনে সরকারি নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আন্দোলনরতদের আইনের আওতায় আনতে এবং কোনো অবৈধ চাপের কাছে নতিস্বীকার না করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সিলেটের ২০ নাগরিক।

আজ রোববার বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ সাহেদা আখতার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ২০০৫ সাল থেকে যান্ত্রিকভাবে পাথর উত্তোলনের ফলে সিলেটের জাফলংয়ের পিয়াইন ও ডাউকি নদীসহ পাথর কোয়ারি ঘোষিত এলাকার নদীগুলো সৌন্দর্য হারিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পর্যটন শিল্প। এ ছাড়াও, সিলেটে বেপরোয়াভাবে পাথর উত্তোলনের ফলে ২০০৫ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১০৬ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে আর আহত হয়েছেন ৩৫ জন।

উচ্চ আদালতের রায় ও সরকারের সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো ২০২০ সালের ৮ জুন সরকারিভাবে তালিকাভুক্ত সিলেটের ৮টি পাথর কোয়ারির ইজারা স্থগিত করে এবং পাথর উত্তোলন বন্ধ করে। এতে সিলেটের পিয়াইন ও ডাউকি, ধলাই, রাংপানি, উৎমাছড়া, লোভাছড়া ইত্যাদি নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা পর্যটন শিল্প প্রাণ ফিরে পেয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

বিবৃতিদাতারা বলেন, পাথর উত্তোলনকারীরা নিজেদের বাণিজ্যিক স্বার্থে আদালতের নির্দেশে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষিত পিয়াইন-ডাউকিসহ সিলেটের অন্যান্য স্থানে পাথর উত্তোলনের অনুমতি প্রদানে সরকারের ওপর অনৈতিক চাপ প্রয়োগ করছে। তারা সিলেটের সাম্প্রতিক বন্যার জন্য পাথর না তোলায় নদীর প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়াকে দাবি করলেও প্রকৃত সত্য হচ্ছে, তাদের বোমা মেশিনের দ্বারা পাথর উত্তোলনের কারণেই পিয়াইন-ডাউকি-ধলাই নদীর পাড় ভেঙেছে, যা সরকারিভাবে স্বীকৃত।

তারা পাথর উত্তোলনকালে শ্রমিকদের সুরক্ষায় কোনো ব্যবস্থা না নিলেও পাথর উত্তোলন বন্ধ হওয়ার পর শ্রমিকদের উস্কে দিচ্ছেন এবং পরিবহন ধর্মঘট ডেকে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছেন বলে বিবৃতিদাতারা উল্লেখ করেন।

বিবৃতিদাতারা আদালতের আদেশ ও সরকারের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আন্দোলনরত পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান এবং কোনো অবৈধ চাপের মুখে নতিস্বীকার না করার আহ্বান জানান।

অ্যাডভোকেট শাহ সাহেদা আখতার ছাড়াও বিবৃতিতে সই করেন, সিলেট-৪ আসনের সাবেক সাংসদ নাজিম কামরান চৌধুরী, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ মাহমুদ চৌধুরী, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ বিভাগের অধ্যাপক ড. সফিকুল ইসলাম, সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক তাহমিনা ইসলাম, শিক্ষাবিদ ও গবেষক ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ, মণিপুরি সাহিত্য সংসদের সভাপতি এ কে শেরাম, সনাক সিলেটের সভাপতি সমিক শহিদ জাহান, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সিলেট বিভাগীয় প্রধান সৈয়দা শিরীন আক্তার, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি মিশফাক আহমদ মিশু, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম, এফআইভিডিবি'র নির্বাহী পরিচালক বজলে মুস্তাফা রাজী, এডকোর নির্বাহী পরিচালক লক্ষ্মীকান্ত সিংহ, উদীচী সিলেট জেলা সংসদের সভাপতি এনায়েত হাসান মানিক, পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশমির রেজা, বাসদ (মাকর্সবাদী), সিলেট জেলা শাখার আহ্বায়ক উজ্জল রায়, হাওর বাঁচাও আন্দোলন সিলেট জেলার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন এবং গণজাগরণ মঞ্চ সিলেটের মুখপাত্র দেবাশীষ দেবু।

Comments

The Daily Star  | English

$14b lost to capital flight a year during AL years

Bangladesh has lost around $14 billion a year on average to capital flight during the Awami League’s 15-year tenure, according to the draft report of the committee preparing a white paper on the economy.

8h ago