বিনিয়োগ বাড়ছে ইস্পাত শিল্পে, বাড়বে প্রতিযোগিতা

ইস্পাত শিল্পে প্রবেশ করতে যাচ্ছে দেশের বড় কয়েকটি শিল্পগ্রুপ। আগে থেকেই ইস্পাত উৎপাদনে থাকা কিছু প্রতিষ্ঠানও তাদের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

মেঘনা গ্রুপ অব কোম্পানিজ, পিএইচপি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, বসুন্ধরা গ্রুপ ও আনোয়ার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজসহ ৬টি প্রতিষ্ঠান ইস্পাত কারখানা স্থাপন ও উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে যাচ্ছে।

মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল চলতি মাসে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা ইতোমধ্যে সিমেন্ট, সিরামিক ও ফ্যাব্রিকেটেড দালান তৈরির জন্য নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবসা শুরু করেছি। এ ছাড়া, আমাদের পোর্টফোলিও বাড়াতে ইস্পাত উৎপাদন করতে যাচ্ছি।'

সম্প্রতি মেঘনা গ্রুপ তাদের ব্যবসায় বৈচিত্র্য এনেছে। প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক টার্নওভার প্রায় ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

প্রতিষ্ঠানটি ইস্পাত কারখানায় প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে। কুমিল্লা অর্থনৈতিক অঞ্চলে তাদের কারখানা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এই কারখানা থেকে বার্ষিক ১৪ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হবে।

নতুন কারখানাগুলো উৎপাদনে এলে বাংলাদেশের ইস্পাত উৎপাদনের বার্ষিক সক্ষমতা ১ কোটি টন ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দেশে এখন প্রায় ৪০টি ইস্পাত কারখানা চালু আছে। এসব কারখানার সম্মিলিত উৎপাদন সক্ষমতা ৯০ লাখ টন। দেশে বর্তমানে বছরে ৮০ লাখ টন ইস্পাতের চাহিদা আছে।

গত মাসে পিএইচপি ফ্যামিলির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, 'মানুষের জীবনযাত্রা ও আকাঙ্ক্ষার পরিবর্তন হয়েছে। মানুষ টিনের ঘরের বদলে ইটের ঘরে থাকতে বেশি পছন্দ করছে।'

'তবে আমাদের জমির অভাব থাকায়, সবার জন্য বাসস্থান নিশ্চিত করতে উঁচু দালান নির্মাণের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে', যোগ করেন তিনি।

ইস্পাত, ফ্লোট গ্লাস, জাহাজ ভাঙা ও মোটরযান শিল্পে সংশ্লিষ্টতার পর পিএইচপি গ্রুপ চট্টগ্রাম বিভাগের মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে (বিএসএমএসএন) ইস্পাত কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। এই কারখানায় বছরে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা আছে।

মিজানুর রহমান বলেন, 'মাথাপিছু ইস্পাতের ব্যবহার বছরে ২০০ কেজিতে উন্নীত করতে আমাদের ১০ কোটি টন ইস্পাত উৎপাদন করতে হবে।'

বসুন্ধরা গ্রুপ বিএসএমএসএনে মোট ৫০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে ২টি ইস্পাত কারখানা স্থাপন করছে।

বসুন্ধরা প্রি-ফেব্রিকেটেড বিল্ডিং ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিজ এবং বসুন্ধরা মাল্টি স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ নামের এই ২ কারখানার মাধ্যমে বছরে ২০ লাখ টনেরও বেশি হট-রোলড কয়েল উৎপাদন করা হবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

কারখানাগুলো ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারবে বলে কর্মকর্তা আশাবাদ প্রকাশ করেন।

দেশের বৃহত্তম ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস (বিএসআরএম) নতুন কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। এই কারখানায় বছরে ৭ লাখ টন ইস্পাত পণ্য তৈরি হবে। নতুন কারখানা চালু হলে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন সক্ষমতা ২৪ লাখ টনে পৌঁছে যাবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমির আলিহুসাইন।

ইতোমধ্যে ইস্পাত উৎপাদনে থাকা আনোয়ার গ্রুপ ৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ করে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় নতুন কারখানা নির্মাণ করছে। এর উৎপাদন ক্ষমতা বছরে ১৬ লাখ টন হবে।

গ্রুপের চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়া।'

'তবে আমরা বর্তমান অর্থনৈতিক অস্থিরতার কথা বিবেচনা করে সতর্কতার সঙ্গে এগোচ্ছি', যোগ করেন তিনি।

গ্রুপটি এই প্রকল্পের জন্য বিদেশি অর্থায়নের আশা করছে। তাদের নতুন কারখানায় সাড়ে ৪ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

বর্তমানে ঢাকার টঙ্গীতে আনোয়ার গ্রুপের কারখানায় বছরে প্রায় ৩ লাখ টন রড উৎপাদন হয়।

আবুল খায়ের গ্রুপের আবুল খায়ের স্টিল, জিপিএইচ ইস্পাত, বিএসআরএম এবং কবীর গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের কবীর স্টিল রি-রোলিং মিলস দেশে রডের বার্ষিক চাহিদার অর্ধেকেরও বেশি পূরণ করে।

বর্তমান দর অনুযায়ী এই বাজারের আকার প্রায় ৭২ হাজার কোটি টাকা। দেশজুড়ে বিভিন্ন বড় প্রকল্প ও অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রমের কারণে ইস্পাত পণ্যের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে।

ভারতের বাজার বিশ্লেষণ সংস্থা স্টিলমিন্টের পূর্বাভাস বলছে, ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ইস্পাতের চাহিদা প্রতি বছর ৬ থেকে ৭ শতাংশ করে বাড়বে।

তবে বাংলাদেশে মাথাপিছু ইস্পাতের ব্যবহার বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে অনেক কম। বর্তমানে মাথাপিছু ব্যবহার ৪৫ কেজি, যেখানে বৈশ্বিক গড় ২০৮ কেজি।

লোহা ও ইস্পাত শিল্পের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভারতে ইস্পাতের গড় ব্যবহার ৬৫ দশমিক ২ কেজি এবং পাকিস্তানে ৪২ কেজি।

উন্নত দেশগুলোতে মাথাপিছু ইস্পাতের ব্যবহার অনেক বেশি। দক্ষিণ কোরিয়ায় এই হার ৪০০ কেজি এবং জাপানে ১ হাজার কেজি।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Economic expectations: Did govt fall short?

When an interim government was sworn into office following the ouster of the Awami League regime just 100 days ago, there was an air of expectation that the Prof Muhammad Yunus-led administration would take steps to salvage a scam-ridden financial sector and rescue an ailing economy.

7h ago