খুব একা হয়ে গেলাম: সোহেল রানা

সোহেল রানা। ছবি: সংগৃহীত

প্রবীণ অভিনেতা সোহেল রানা। ঢাকাই সিনেমাতে তার অবদান অনেক। দেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা ওরা ১১ জনের প্রযোজক তিনি। নিজেও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন।

সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারের মুখোমুখি হন সোহেল রানা। স্মৃতিচারণ করেন প্রয়াত বন্ধু ও সহশিল্পীদের।

সদ্য প্রয়াত পরিচালক আজিজুর রহমান বুলির কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, 'কী আর বলব? কিবা বলার আছে? ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। কোনো ভাষা নেই। কোনো অনুভূতি নেই। কেমন যেন পাথর হয়ে গেছি। সবকিছু কুয়াশার মতো লাগছে। বুলির মৃত্যুর খবর শোনার পর সত্যি মন ভালো নেই।'

'বন্ধুত্ব সবার সঙ্গে হয় না, কারো কারো সঙ্গে হয়। আজিজুর রহমান বুলি ছিলেন তেমনই ভালো বন্ধু। গভীর বন্ধুত্ব ছিল তার সঙ্গে। এরকম বন্ধু এ জীবনে আর হবে না। বন্ধু বলতে আমার কেউ রইল না। খুব একা হয়ে গেলাম। বড় একা হয়ে গেলাম,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'এখন ভয় লাগছে। অনেক ভয় লাগছে। কতজনকে হারিয়েছি। কত চেনা মানুষ চিরদিনের জন্য চলে গেছেন। যারা চলে যায় তারা আর আসে না। বুলিও আসবে না । ওর মুখটা বার বার চোখে ভাসছে। ৫০ বছর আগের কোনো স্মৃতিই আর মনে করতে পারছি না। ওর পরিচালিত ও প্রযোজিত সিনেমার নামও এখন মনে পড়ছে না।'

সোহেল রানা বলেন, 'জোর দিয়ে বলতে পারি বুলির মতো ভালো মনের মানুষ চলচ্চিত্রে আর দ্বিতীয়জন পাইনি। আর দেখব বলে মনে হয় না। সবসময় হাসিখুশি থাকতে ভালোবাসতো। রাগী চেহারার বুলিকে কখনো দেখিনি। ওর হাসিমুখটা অনেকদিন মনে থাকবে। আড্ডার স্মৃতির শেষ নেই। দিন রাত আড্ডা দিয়েছি একসঙ্গে। বুলির ভেতরে চলচ্চিত্রকে অনেক ওপরে নিয়ে যাওয়ার একটি ভাবনা সবসময় খেলা করত। সৃষ্টির নেশায় থাকত। যার জন্য এতগুলো সিনেমা করতে পেরেছিল।'

'ভীষণ কষ্ট পাচ্ছি আমি। দুই চোখ বেয়ে সমানে অশ্রু ঝরছে। আর কথা বলতে পারছি না। বুলি যেন শান্তিতে থাকে। এটুকুই আল্লাহর কাছে চাওয়া।'

তিনি বলেন, 'নায়ক ওয়াসিমও আমার কাছের বন্ধু ছিলেন। একমাত্র আমিই তাকে তুই করে বলতাম। ওয়াসিমও আমাকে তুই করে বলতেন। বছরের পর বছর দু'জনে সুন্দর সময় কাটিয়েছি। তাকে হারিয়েও খুব একলা মনে হয়েছিল। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। আমার জীবনে অসংখ্য মধুর স্মৃতি আছে ওয়াসিমকে নিয়ে। হঠাৎ করেই চলে গেল প্রিয় বন্ধুটি।'

সোহেল রানা বলেন, 'ওয়াসিমের মৃত্যুর পরও বার বার মনে হচ্ছিল একা হয়ে গেলাম, বড্ড একা হয়ে গেলাম, বন্ধু বলতে কেউ রইল না। বুলির কথাতে প্রিয় বন্ধু ওয়াসিমকেও খুব মনে পড়ছে। তার কথাও ভাবছি। কয়েক দশকের সম্পর্ক ছিল ওয়াসিমের সঙ্গে।'

'এভাবেই হঠাৎ করে চলে গেছেন আমার আরেক প্রিয় সহশিল্পী, প্রিয় মানুষ কবরী। যাকে মিষ্টি মেয়ে নামেই এদেশের সব মানুষ জানতেন। তার সঙ্গেও কী কম স্মৃতি আছে আমার? ক্যারিয়ারের শুরুতেই তাকে নায়িকা হিসেবে পেয়েছিলাম। কত মধুর স্মৃতি তার সঙ্গে। জীবনের এই সময়ে এসে কবরীর কথাও মনে পড়ছে।'

'আসলে এক এক করে প্রয়াত সবার কথাই মনে পড়ে। তাদের কতটা মিস করি বুঝিয়ে বলা কঠিন। মাঝে মাঝে মনে হয় খুব একা হয়ে যাচ্ছি। এজন্যই ভয় লাগে। জীবন তো ফুরিয়ে যাবেই। কেউ চিরদিন থাকে না। সবাইকে যেতে হবে। তারপরও পেছনে ফিরে তাকালে সোনালি দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ে। ভাবি, এত দ্রুত দিনগুলো ফুরিয়ে গেল?' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'জীবনের এই সময়ে এসে খুব করে অনুভব করছি কতকিছু। কত সহশিল্পী দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। একসময় যাদের সঙ্গে দিনের পর দিন শুটিং নিয়ে, সিনেমা নিয়ে সময় কাটাতাম, তাদের কতজনই আজ নেই। একজন করে সহশিল্পী মারা যান এবং মনে হয় সবচেয়ে প্রিয়জনকে হারালাম। সিনেমার পুরনোদের অনেককেই তো হারিয়েছি। সিনিয়রদের মধ্যে অল্প কয়েকজন এখনো বেঁচে আছি। আবার সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতারও শেষ নেই, তিনি আমার ভয়াবহ অসুখের হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন।'

Comments

The Daily Star  | English

Govt publishes gazette of 1,558 injured July fighters

Of them, 210 have been enlisted in the critically injured "B" category, while the rest fall under the "C" category of injured fighters

7h ago