স্বেচ্ছায় রক্তদান: ২৫ বছর ধরে মানুষের পাশে ‘বাঁধন’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী জসিম উদ্দিনের এক আত্মীয়ের অপারেশনের সময় ঠিক হওয়ার পর ডাক্তার জানালেন দ্রুত ২ ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করতে হবে। হঠাৎ করে রক্ত জোগাড়ের কথা শুনে চিন্তিত হয়ে পড়েন জসিম। পরিচিতদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন রক্ত সংগ্রহের জন্য। অনেক চেষ্টার পরও রক্তদাতার সন্ধান না পেয়ে অবশেষে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন 'বাঁধনের' সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সংগঠনটির সদস্যরাই সব ব্যবস্থা করে দেন।
এটাই একমাত্র ঘটনা নয়। ঢাকা শহরের বহু মানুষের প্রয়োজনে রক্তের ব্যবস্থা করেছে এই সংগঠনটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৯ লাখ ৭৭ হাজার ব্যাগ রক্তের যোগান দিয়ে সহযোগিতা করেছে বলে জানিয়েছে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সবচেয়ে বড় এ সংগঠনটি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) থেকে কার্যক্রম চালায় বাঁধন। আজ ২৪ অক্টোবর ২৫ বছর পূর্ণ হলো সংগঠনটির। ১৯৯৭ সালের এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে একদল শিক্ষার্থী সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন।
জসিম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি তার দুলাভাইয়ের একটি জরুরি অপারেশনের জন্য সময় দেওয়া হয়েছিল সোমবার সকাল ৮টায়। তাকে অপারেশনের আগের দিন সন্ধ্যায় ২ ব্যাগ রক্ত প্রস্তুত রাখতে বলা হয়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে কোথাও যখন রক্ত পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন বাঁধনের সভাপতি নাহিদুজ্জামানের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রক্তদাতা ইমজামামুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়।
'একের রক্ত অন্যের জীবন, রক্তই হোক আত্মার বাঁধন' স্লোগানে শিক্ষার্থীদের পরিচালিত এ সংগঠনটি গত ২৫ বছর ধরে স্বেচ্ছায় রক্তদানকে একটি সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে পেরেছে বলে জানান বাঁধনের সঙ্গে সম্পৃক্তরা।
প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি'র প্রবেশমুখে বাঁধনের অফিসে স্বেচ্ছায় রক্তদান কার্যক্রম পরিচালা করেন একদল বাঁধনকর্মী।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রস্তুত করা এক বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাঁধনের এই উদ্যোগের কারণে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পেশাদার ও মাদকাসক্তদের রক্ত বাণিজ্য এখন নেই বললেই চলে। বাঁধনের এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচয়পত্রে এখন রক্তের গ্রুপ লেখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করে রক্তদানের মতো মহৎ কাজে অংশগ্রহণ করানোর মধ্য দিয়ে দেশের মানুষকে এইডস, হেপাটাইটিস-বি-সহ অনেক ধরনের রক্তবাহিত রোগ থেকে রক্ষা করা গেছে।
বাঁধন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হল থেকে যাত্রা শুরু করে ২৫ বছর ধরে 'বাঁধন' এখন দেশের ৫৩টি জেলার ১৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ৫৯টি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে মোট ৭৬টি ইউনিটের মাধ্যমে আজ মানবিক কাজের বার্তা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
এ ছাড়া সংগঠনটির ২৫ বছরপূর্তী উপলক্ষে বছরজুড়ে নানা আয়োজন করা হবে। যার মধ্যে রয়েছে দেশে ৮০ হাজার মানুষকে বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য বিশেষ রক্তদান কর্মসূচি, ২৫ হাজার বৃক্ষরোপন, ১ হাজার গরীব শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ। এ ছাড়া সহজে রক্তের চাহিদা পুরণের জন্য 'বাধন অ্যাপ' তৈরি, ২০ জন সর্বোচ্চ রক্তদাতাকে সম্মাননা প্রদান ইত্যাদি।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনে বাঁধন কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাঁধনের সবগুলো ইউনিটে আনন্দ র্যালি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে বাঁধনের কেন্দ্রীয় পরিষদ আয়োজিত র্যালি। উদ্বোধন করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
এ ছাড়া উপস্থিত থাকবেন বাঁধনের প্রতিষ্ঠাতা শাহিদুল ইসলাম রিপন, বাঁধন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান রকীব আহমেদ, বাঁধনের রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক এস এম কোরবান আলী, বাঁধন কেন্দ্রীয় পরিষদের সভাপতি মো. নাহিদুজ্জামান, বাঁধন কেন্দ্রীয় পরিষদের কোষাধ্যক্ষ মো. তরুণ মিয়া, বাঁধন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জোনের সভাপতি মিনহাজ মাহমুদ হিমেল ও সাধারণ সম্পাদক গালিব আহমেদ শিশির।
Comments