৪ বছর ধরে অকার্যকর কলাপাড়া রাডার স্টেশন
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার রাডার স্টেশনের কার্যক্রম ৪ বছর ধরে বন্ধ আছে। স্টেশনটির ফ্রিকোয়েন্সি ইমেজ শাখার ট্রান্সমিশন সিস্টেম ও সার্ভে সিস্টেমের যন্ত্রাংশের ত্রুটির কারণে ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল থেকে এর অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ।
স্টেশনটির পাইলট বেলুন অবজারভেটরি (পিবিও) থেকে ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ নির্ধারণ ও ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত বার্তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
আগে এ স্টেশন থেকে ৪০০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস ও ঝড়ের গতিপথ নির্ণয় করা যেত।
রাডার স্টেশন কর্তৃপক্ষ দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে, ১৯৬৯ সালে কলাপাড়া উপজেলা শহরে ১০ দশমিক ১৬ একর জমির ওপর কনভেনশনাল রাডার স্টেশনটি স্থাপন করা হয়। এটি তখন কেপিআই-গ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ছিল।
২০০৮ সালে কনভেনশনাল রাডারের প্রযুক্তিগত কার্যকারিতা কমে যায়। এরপর কেন্দ্রটির পুরনো অবকাঠামো ভেঙে এবং কনভেনশনাল প্রযুক্তি বাদ দিয়ে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে জাপান রেডিও কোম্পানি (জেআরসি) বিশ্বের সর্বাধুনিক ডপলার প্রযুক্তির রাডার স্থাপন করে। বর্তমানে এই রাডারটি কেপিআই-খ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) কলাপাড়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আছাদউজ্জামান খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উপকূলের মানুষজনকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করেই জীবনযাপন করতে হয়। সে কারণে এখানকার বাসিন্দাদের জন্য আবহাওয়া বার্তা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে আগাম সতর্কবার্তা পাওয়া গেলে দুর্যোগে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হয়।'
'রাডার স্টেশন সচল না থাকলে দুর্যোগে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি বেশি হওয়ার আশঙ্কা থাকে,' যোগ করেন তিনি।
এ রাডার স্টেশনের ইলেকট্রনিকস প্রকৌশলী আবদুল জব্বার শরীফ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ফ্রিকোয়েন্সির ইমেজ শাখায় বেশ কিছু যন্ত্রাংশে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ, শক্তি, তীব্রতা ও অবস্থান নির্ণয় করা যাচ্ছে না।'
'এ রাডার স্টেশনের অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এখন কক্সবাজার, মৌলভীবাজার ও ঢাকার আগারগাঁওয়ের রাডার স্টেশনের মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড়ের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ চলছে।'
তিনি আরও বলেন, 'বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন এ রাডার স্টেশনটি উপকূলের ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত তথ্য কাছ থেকে সংগ্রহ করার কাজ করতে পারে। এতে তথ্য-উপাত্তগুলো সঠিকভাবে পাওয়া যায়। এসব কারণে দ্রুত এ রাডার স্টেশনটির অপারেশনাল কার্যক্রম চালু হওয়া জরুরি।'
তার মতে, 'প্রায় ১৪ বছর আগে স্থাপিত ডপলার প্রযুক্তির রাডার স্টেশনটির অনেক যন্ত্রাংশ পুরনো হয়ে গেছে। এসব যন্ত্রাংশের পুনঃস্থাপন দরকার। যন্ত্রাংশ সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান জাপান রেডিও কোম্পানিকে (জেআরসি) বিস্তারিত জানানো হয়েছে।'
'যন্ত্রাংশ সরবরাহ সাপেক্ষে রাডার স্টেশনটি সচল করা সম্ভব।'
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে, চলতি বছরের ৪-৬ অক্টোবর ইশিহারা মাসাহিতুর নেতৃত্বে জাইকার ৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল এবং ৯-১১ অক্টোবর জাপান মেটেরোলজিক্যাল বিজনেস সাপোর্ট সেন্টারের ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্টের বিজ্ঞানী আর কোবায়েসির নেতৃত্বে ৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল রাডার স্টেশনটির ইমেজ শাখাসহ কেন্দ্রটির কয়েকটি উইংয়ের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন।
সূত্র আরও জানায়, স্টেশনটিতে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য ১৫০ কেভিএ ট্রান্সমিটারটি গত ২ বছরের বেশি সময় ধরে নষ্ট থাকায় রাডার স্টেশনটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাও বন্ধ ছিল। তখন আবহাওয়া খারাপ হলে নিজস্ব জেনারেটর চালিয়ে রাডার স্টেশনটির সব ধরনের কাজ পরিচালনা করতে হতো।
প্রায় ২ মাস আগে বিদ্যুতের খুঁটি ও নতুন ট্রান্সমিটার বসানো হলেও এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি।
কলাপাড়া পল্লী বিদ্যুতের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) সজীব পাল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কেন্দ্রটিতে ১৫০ কেভিএ ট্রান্সমিটার নতুনভাবে লাগানোর কাজ শেষ হয়েছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে।'
পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের সংসদ সদস্য ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. মহিব্বুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি অতি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাডার স্টেশনটির বর্তমান সমস্যা নিয়ে আমি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। সংসদীয় কমিটির সভায়ও আলোচনা করেছি। বিশেষজ্ঞ দল রাডার স্টেশনটি পরিদর্শন করে গেছেন।'
'আশা করছি, দ্রুত যন্ত্রাংশ স্থাপন করা হবে এবং রাডার স্টেশনটির অপারেশনাল কার্যক্রম চালু হবে,' যোগ করেন তিনি।
Comments