আত্রাই থেকে অবৈধভাবে বালু তোলার অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

নাটোরের সিংড়া উপজেলায় শেরকোল ইউনিয়নের ভাগনাগরকান্দি এলাকায় আত্রাই নদী থেকে বালু তোলা হচ্ছে। ছবিটি ২০২২ সালের ২২ অক্টোবর তোলা। ছবি: বুলবুল আহমেদ/স্টার

নাটোরের সিংড়ায় আত্রাই নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তোলার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফুল হাবীব রুবেলের বিরুদ্ধে।

লুৎফুল হাবীব রুবেল সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তার ম্যানেজার জাহিদ হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, হাইটেক পার্ক নির্মাণের জন্য বালু তোলা হচ্ছে।

গতকাল শনিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, শেরকোল ইউনিয়নের ভাগনাগরকান্দি এলাকায় অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। স্থানীয় শ্রমিকরা ২টি ড্রেজার দিয়ে বালু তোলার কাজ করছেন।

জানা গেছে, নদী থকে বালু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সিংড়া শহরে। সেখান থেকে অন্য ড্রেজারের মাধ্যমে পাইপ লাইনে করে হাইটেক পার্কে পাঠানো হচ্ছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, অপরিকল্পিত ও অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে মানুষের সহায়-সম্পদ, জমিজিরাত, বাজারঘাট, স্থাপনা, ব্রিজ, রাস্তা ইত্যাদি হুমকির মুখে পড়ছে।

শেরকোল ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য রঞ্জু মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রভাবশালীরা বালু তুলছেন। বছর দুয়েক আগে বালু তোলায় বাধা দিতে গিয়ে আমিসহ ৩ জন আহত হই। প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউ কথা বলার সাহস পায় না। প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই বালু তোলা হয়।'

একই গ্রামের রাজু আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বালু তোলার কারণে নদীর পাড় ভেঙে যাচ্ছে। স্থানীয়রা ভোগান্তিতে পড়েছেন। যারা বালু তুলছেন তারা খুবই প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করছেন না। কথা বললেই বিপদ।'

বালু উত্তোলনকারী ড্রেজারের মালিক আতাহার আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি এর সঙ্গে জড়িত নই। রুবেল চেয়ারম্যান আমার ড্রেজার ভাড়া নিয়েছেন। প্রতি ট্রলার বালুতে তারা আমাকে ড্রেজার ভাড়া দেন ৩ হাজার টাকা।'

প্রশাসন বা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা তাকে এ ব্যাপারে নিষেধ করেননি বলেও জানান তিনি।

শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান লুৎফুল হাবীব রুবেলের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ইউপি চেয়ারম্যানের ম্যানেজার জাহিদ হাসান বলেন, 'হাইটেক পার্কের জন্য বালু তোলা হচ্ছে। পার্কের বালু সরবরাহকারী হেলাল উদ্দিনকে বালু দেওয়া হচ্ছে।'

হাইটেক পার্কের বালু সরবরাহকারী হেলাল উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রুবেল চেয়ারম্যানের প্রতিষ্ঠান "অর্ক বালুমহল"র সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে। তারা হাইটেক পার্কে ১৫ লাখ ঘনফুট বালু সরবরাহ করবে। চুক্তি অনুযায়ী তাদেরকে টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে। তারা কোথা থেকে বালু সরবরাহ করছে তা আমার জানার বিষয় নয়।'

সিংড়া উপজেলায় কোনো 'বালুমহল' নেই উল্লেখ করে সিংড়ার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল ইমরান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নদী থেকে যারা বালু তুলছেন তারা তা অবৈধভাবে তুলছেন। ভাগনাগরকান্দি এলাকায় নদী থেকে বালু তোলার সংবাদ পেয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে সেখানে পাঠানো হয়েছে। গত শুক্রবার ড্রেজার মালিক আতাহার আলীকে বালু না তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'শেরকোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে ফোন করা হয়েছিল। তার ফোন বন্ধ পাওয়ায় চেয়ারম্যানের ম্যানেজার জাহিদ হাসানকে ফোন দিয়ে নিষেধ করা হয়েছে।'

নিষেধ করার পরও বালু তোলা হচ্ছে জানানো হলে তিনি বলেন, 'পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। প্রয়োজন হলে আমি নিজে গিয়ে ব্যবস্থা নেবো।'

নাটোরের পরিবেশ আন্দোলনকারী সাজিদ আলী ঝর্ণা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নদীর কোন জায়গা থেকে কী পরিমাণ বালু তোলা যায় তা যাচাই করে পরিকল্পিতভাবে বালু তোলা হলে তা একদিকে যেমন বালুর চাহিদা মেটায়, অন্যদিকে, নদীর নাব্যতা ফেরায়। কিন্তু, বালু ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে বালু তুলছেন। ফলে রাষ্ট্র রাজস্ব হারাচ্ছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Battery-run rickshaws allowed back on Dhaka roads for one month

SC chamber judge issues status quo on HC order

2h ago