মল্লিকার্জুন খাড়গে: শ্রমিক নেতা থেকে কংগ্রেস প্রধান

মল্লিকার্জুন খাড়গে। ছবি: সংগৃহীত

গত ২৪ বছরের মধ্যে গান্ধী পরিবারের বাইরে প্রথমবার কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন মল্লিকার্জুন খাড়গে। গত ১৭ অক্টোবরের নির্বাচনে খাড়গে ৯০ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। তার প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ৭ হাজার ৮৯৭, সেখানে আরেক প্রার্থী শশী থারুর পেয়েছেন ১ হাজার ৮২টি ভোট। কংগ্রেসের রাজনীতিতে এ যেন রাজকীয় উত্থান। কিন্তু, কে এই মল্লিকার্জুন খাড়গে? যার কাছে হার মেনেছেন শশী থারুর।

কর্ণাটকের ৮০ বছর বয়সী এই প্রবীণ নেতা দ্বিতীয় দলিত নেতা হিসেবে দশকের পর দশক ধরে কংগ্রেসের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।

খাড়গে ২৫ অক্টোবর দলের প্রধান হিসেবে শপথ নেবেন বলে মনে করা হচ্ছে। সভাপতি নির্বাচনের আগে থেকেই তাকে গান্ধী পরিবারের 'প্রতিষ্ঠিত প্রার্থী' হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল। এই কংগ্রেস নেতাকে প্রায়ই 'সোলিলাদা সর্দারা' বলা হয়। তিনি এমন একজন রাজনীতিক যিনি কখনো পরাজিত হতে জানেন না।

১৯৪৯ সালের ১২ জুলাই মাপান্না মল্লিকার্জুন খাড়গে কর্ণাটকের বিদারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি গুলবার্গার শেঠ শঙ্করলাল লাহোটি কলেজে আইন নিয়ে পড়ালেখা করেন। যেখানে জুনিয়র আইনজীবী হিসেবে অনেকগুলো শ্রমিক ইউনিয়নের মামলাও জিতেছিলেন। পরে কেন্দ্রে শ্রমিক নেতা হয়ে ওঠেন।

খাড়গে ১৯৬৯ সালে কংগ্রেসে যোগ দেন এবং তখন থেকেই বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৬৯ সালে গুলবারগা শহর কংগ্রেস কমিটির সভাপতি হন। মনমোহন সিং সরকারের অধীনে রেলমন্ত্রী এব শ্রমমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।

২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে এই কংগ্রেস নেতা কর্ণাটক থেকে রাজ্যসভার সদস্য। এরপর ২০২২ সালের ১ অক্টোবর পর্যন্ত সংসদে বিরোধীদলীয় নেতাও ছিলেন। খাড়গে ১৯৭২ সালে কর্ণাটক রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং গুরমিতকাল আসন থেকে নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭৩ সালে রাজ্যের পৌর ও নাগরিক সংস্থার অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে অক্ট্রোই বিলুপ্তি কমিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন।

১৯৭৬ সালে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হন। ১৯৭৮ সালে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো গুরমিতকাল কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হন। একই বছর তিনি দেবরাজ উরস মন্ত্রণালয়ে গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েত রাজ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে একই কেন্দ্র থেকে একাধিকবার নির্বাচিত হন।

১৯৮০ সালে গুন্ডু রাও মন্ত্রিসভায় রাজস্ব মন্ত্রী হন খাড়গে। ১৯৮৫ সালে তিনি কর্ণাটক বিধানসভায় বিরোধী দলের উপনেতা নিযুক্ত হন। ১৯৯০ সালে বাঙ্গারাপ্পার মন্ত্রিসভায় রাজস্ব, গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েত রাজ মন্ত্রী হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৯২ থেকে ১৯৯৪ সালে বীরাপা মইলি মন্ত্রিসভায় সমবায়, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পমন্ত্রী ছিলেন। ২০০৫ সালে তিনি কর্ণাটক প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি নিযুক্ত হন।

খাড়গে তার রাজনৈতিক জীবনে বিভিন্ন ক্যাবিনেট এবং মন্ত্রীদের অধীনে আরও বেশ কয়েকটি দায়িত্ব সামলেছেন। দলিত নেতা হিসেবে কংগ্রেস প্রধানের পদে তার উত্থানকে ২০২৩ সালের মে'তে কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনের আগে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

৮০ বছর বয়সী এই প্রবীণ নেতাকে নিয়ে ১০টি তথ্য জেনে নিন:

১. মল্লিকার্জুন খাড়গে হলেন দ্বিতীয় দলিত কংগ্রেস প্রধান। প্রথম দলিত প্রধান ছিলেন জগজীবন রাম।

২. ১৯৬৮ সালে রাষ্ট্রপতি হওয়া এস নিজালিংগাপ্পার পর কর্ণাটক থেকে দ্বিতীয় কংগ্রেস সভাপতি হলেন খাড়গে।

৩. ১৯৪২ সালে জন্ম নেওয়া মল্লিকার্জুন খাড়গে কলেজে পড়ার সময় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।

৪. এরপর তিনি শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালে তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন এবং গুলবার্গা শহর কংগ্রেস কমিটির সভাপতি হন।

৫. তিনি ১২টি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন (বিধানসভা ও লোকসভা) এবং মাত্র একটিতে হেরেছিলেন- ২০১৯ সালে। সেবার তিনি বিজেপির উমেশ যাদবের কাছে ৯৫ হাজার ৪৫২ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। উমেশ একসময় খাড়গের নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন।

৬. তিনি বেশ কয়েকবার শীর্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েও কখনো মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেননি।

৭. মল্লিকার্জুন খাড়গে মনমোহন সিং সরকারের রেলমন্ত্রী ও শ্রমমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন। তিনি রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা ছিলেন। কিন্তু, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সেই পদ ছাড়তে হয়েছিল।

৮. খাড়গের ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে রয়েছে - প্রিয়াঙ্ক, রাহুল, মিলিন্দ, প্রিয়দর্শিনী এবং জয়শ্রী।

৯. খাড়গে বেশ কয়েকবার নিজেকে বৌদ্ধধর্মের অনুসারী হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।

১০. খাড়গের অনেক ভাষায় দক্ষতা আছে। তিনি হিন্দু, উর্দু, কন্নড়, মারাঠি, তেলেগু এবং ইংরেজি বলতে পারেন।

সূত্র: আউটলুক ইন্ডিয়া, হিন্দুস্তান টাইমস

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh welcomed 20 percent US tariff

Bangladesh gains edge after US tariff cut

The Trump administration has lowered its reciprocal tariff on Bangladeshi goods to 20 percent from 35 percent, strengthening the country’s competitive standing in the US market amid intensifying regional competition.

7h ago