গ্রিড বিপর্যয়ে নরসিংদীর টেক্সটাইল খাতে ‘১০০ কোটি টাকা’ লোকসানের আশঙ্কা

নরসিংদী বিদ্যুৎ
নরসিংদীর হাজীপুরে একটি টেক্সটাইল কারখানা। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে গত মঙ্গলবার নরসিংদীর টেক্সটাইল খাতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় অন্তত ১০০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন নরসিংদীর টেক্সটাইল শিল্প মালিক ও শ্রমিকরা।

একইসঙ্গে লোকসানের মুখে পড়েছেন জেলার ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মালিকসহ ব্যবসায়ীরা। এখনো বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়ায় আরও ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা।

প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ বার লোডশেডিং হচ্ছে বলে দাবি টেক্সটাইল মালিক ও শ্রমিকদের।

শ্রমিকরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে তাদের বেতন ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ কমেছে। জাতীয় গ্রেডের সমস্যার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহও আগের চেয়ে কমে গেছে বলে তারা অভিযোগ করছেন।

নরসিংদীর টেক্সটাইল শিল্প মালিকরা ডেইলি স্টারকে জানান, দেশীয় বস্ত্র চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ এ জেলায় উৎপাদিত হয়। টানা ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় জেলার ছোট-বড় প্রায় ১২ হাজার কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয়। এতে অন্তত ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করছেন শিল্পমালিকরা।

এ ছাড়াও, উৎপাদন করতে না পারায় শ্রমিকরা মজুরি বঞ্চিত হয়েছেন বলেও তারা জানান।

নরসিংদী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, শিল্পমালিক সমিতি ও স্থানীয়রা ডেইলি স্টারকে জানান, জাতীয় গ্রিডে সমস্যার কারণে গত মঙ্গলবার দুপুর ১২টার পর থেকে চৌয়ালা শিল্পাঞ্চল, বিসিক ও মাধবদীসহ ৬ উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। সন্ধ্যায় কয়েকটি এলাকায় ও রাত ১১টার পর শিল্পাঞ্চলগুলোয় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হয়।

কয়েকটি উপজেলায় প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ভোররাত ২টার পর বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়।

চৌয়ালার ফারুক টেক্সটাইল মিলের কর্মচারী আব্দুল কাদির মন্টু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা উৎপাদনের ভিত্তিতে কাজ করি। গত দেড় মাস ধরে বিদ্যুৎ আমাদের এখানে অনেকটা চোর-পুলিশ খেলছে। স্বাভাবিক অবস্থায় এক সপ্তাহে বেতন আসে ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। চলতি সপ্তাহে বেতন পেয়েছি ২ হাজার ৮০০ টাকা।'

নরসিংদী হাজিপুরে টেক্সটাইল মিলের কর্মচারী নুরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতি গজ কাপড় উৎপাদনে কাপড়ের কোয়ালিটির ওপর নির্ভর করে ১ দশমিক ১০ টাকা থেকে ১ দশমিক ৩৫ টাকা দেওয়া হয়। বিদ্যুৎ ঠিকমতো না থাকলে উৎপাদন করতে পারি না। সন্তানরা স্কুলে পড়ে, তাদের খরচ নিয়ে চিন্তিত। সংসার চালানো নিয়েও চিন্তা হচ্ছে।'

চৌয়ালার টেক্সটাইল শিল্প মালিক মো. তৌহিদুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিদ্যুৎ যাওয়ার পর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কিছু সময় কারখানা চালু রাখা সম্ভব হলেও পরে বন্ধ করে দিতে হয়। শ্রমিকরা বেকার সময় পার করেন। আমরাও উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হই।'

'বেশিরভাগ শ্রমিক উৎপাদনের ভিত্তিতে মজুরি পান,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে তারা মজুরি থেকে বঞ্চিত হন। রাত সাড়ে ১১টার পর বিদ্যুৎ পাওয়া গেলেও শ্রমিকরা তখন চলে যাওয়ায় উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়।'

'এতে শুধু আমার কারখানায় ৩০ লাখ টাকার মতো লোকসান হয়েছে। নরসিংদীর অন্যান্য উপজেলায় এ রকম প্রায় ১ হাজার ২০০'র মতো কারখানা আছে,' যোগ করেন তিনি।

নরসিংদীর চৌয়ালা টেক্সটাইল শিল্প মালিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক মো. নান্নু আলী খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'টানা ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। তাছাড়াও, দিনে কয়েকবার লোডশেডিং হচ্ছে।'

সমস্যা নিরসনে গত ৫ অক্টোবর পাওয়ার গ্রিড অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ৬ সদস্যের দল নরসিংদী ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শন করে। পিজিসিবির নির্বাহী পরিচালক ইয়াকুব আলী চৌধুরীর নেতৃত্বে দলটি ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে বিকালে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন পরিদর্শন করে।

পরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে বলে জানান তারা।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ আল মামুন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এর আগেও একাধিকবার বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও কমিটির কোনো প্রতিবেদনের কথা আমরা জানি না। দায়িত্বশীলদের অবহেলার কারণে যদি বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। ভবিষ্যতে এমন বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনা যেন আর না ঘটে সেদিকেও নজর রাখা দরকার।'

নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. আলী হোসেন শিশির ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নরসিংদীতে দিনে প্রায় ৫০ লাখ গজ কাপড় উৎপাদিত হয়। জাতীয় গ্রেডে সমস্যার কারণে অনেকে ক্ষতির মুখে পড়লেও আমরা আশা করি, তারা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন। কিভাবে শ্রমিক ও মালিক সমিতির পাশে দাঁড়ানো যায় তা নিয়েও কাজ করছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Public Service Act: Ordinance out amid Secretariat protests

The government last night issued an ordinance allowing dismissal of public servants for administrative disruptions within 14 days and without departmental proceedings.

8h ago