প্রত্যাখ্যানে করণীয়

ছবি: সংগৃহীত

যখন কেউ কোনোকিছু প্রত্যাখ্যান করে এবং 'না' বলে সেটা মেনে নেওয়া সবসময়ই কঠিন। হোক ব্যক্তিগত কিংবা ব্যবসায়িক ক্ষেত্র, এই প্রত্যাখ্যান হজম করা সহজ নয়।

কখনো কখনো লজ্জিত বা বিব্রত হওয়ার আশঙ্কায় আমরা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয় করি বা আমাদের জীবনধারণ ব্যবস্থাও কোনো কোনো সম্পর্কের বা সুযোগের পথ আটকে দেয়। যা আমাদের জন্য হয়তো ভালো হতে পারতো।

তাই প্রত্যাখ্যানকে সহজে কীভাবে গ্রহণ করবেন জানার আগে, প্রথমেই প্রত্যাখ্যানকে ঠিক কী কারণে ভয় করছেন তা জানা আরও জরুরি।

বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র বিএপিটি নিবন্ধিত প্লে থেরাপিস্ট মোস্তাক আহামেদ ইমরান।

২০১৫ সাল থেকে তিনি একজন উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। প্রায় এক বছর ধরে 'সবঠিক' দলের সঙ্গে যুক্ত আছেন তিনি।

আহামেদ ইমরান যুক্তি দেন, যখন তার ক্লায়েন্টরা তাদের সঙ্গী বা পরিবারের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যানের মতো প্রতিকূল অবস্থার মুখোমুখি হন, তা আসলে ব্যক্তির স্বীকৃতি এবং অনুমোদনের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে জড়িত। এই ধরনের ভয় কিংবা আকাঙ্ক্ষার উৎপত্তি হয় শৈশবের ঘটনা আর তাদের লালন-পালনের ধরণ থেকে।

তিনি বলেন, আমাদের জীবনে প্রত্যাখ্যান গ্রহণ করা কঠিন হওয়ার পেছনে অনেকগুলো বিষয় আছে। আমাদের সমাজে এটি খুবই সাধারণ চিত্র। পিতামাতারা তাদের সন্তানদের অন্যদের সঙ্গে তুলনা করেন এবং কোনো ভালো কাজের স্বীকৃতি দিতে চান না। এর ফলে অনেকেই ব্যক্তিগত জীবনে নিজের সঙ্গে নেতিবাচক চিন্তায় অভ্যস্ত হয়ে যান। নিজেকে মনে করেন সমাজের বাইরের কেউ। অপ্রকাশিত চাপা ক্ষোভ বয়ে আনে চরম আক্রোশ, নিম্ন আত্মসম্মানবোধসহ থাকে অনুপ্রেরণার অভাব, অনিদ্রা কিংবা অতিরিক্ত ঘুম এমনকি নিজের বা অন্যের ক্ষতি করার প্রবণতাও।

আহামেদ ইমরান 'অ্যাভয়ডেন্ট অ্যাটাচমেন্ট স্টাইল' সম্পর্কে বলেন, শিশুরা যখন প্রয়োজনে তাদের সুনির্দিষ্ট প্রাথমিক তত্ত্বাবধায়ক খুঁজে না পেলে বিষয়টি ভবিষ্যতে পারস্পরিক বন্ধন এবং সম্পর্ককে প্রভাবিত করে।

তিনি আরও বলেন, তাদের মধ্যে অবচেতনভাবে একটি বার্তা উচ্চারিত হয় 'পৃথিবী আমার জন্য নিরাপদ নয় এবং কেউ আমাকে সাহায্য করবে না। আমি কাউকে বিশ্বাস করতে পারি না।'

মূলত, বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা নিজেরাই একসময় অবচেতনভাবে স্নেহ এবং ভালবাসা থেকে নিজেদের প্রত্যাখ্যান করে নেয়।

একইভাবে কিছু ব্যক্তি অল্প বয়স থেকেই এই ধারণাগুলো প্রতিহত করতে অভ্যস্ত থাকেন। ফলে যখন তারা অন্য কারো কাছ থেকে সমর্থন এবং ভালবাসা পান তখন খুবই মনোযোগী থাকেন দ্বন্দ্ব এড়িয়ে, অন্য ব্যক্তিকে প্রত্যাখ্যান না করে, অনুকূল পরিস্থিতির বাইরে এসে, এমনকি সাধ্যের বাইরে গিয়ে হলেও সম্পর্ক রক্ষা করতে। এই প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয় থেকেই নিজেকে গ্রহণযোগ্য এবং নিজের প্রতি সমর্থনের ধরে রাখতে যা প্রয়োজন মনে করেন সব কিছুই করে থাকেন।

যদি কেউ প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা পান বা অসঙ্গতিতে পৌঁছান, কিংবা যদি কেউ প্রত্যাখ্যানকে সহজভাবে ধারণ করার কৌশল শিখতে চান তাঁদের থেরাপি বা কাউন্সেলিংয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

প্লে থেরাপিস্ট মোস্তাক আহামেদ ইমরান ব্যাখ্যা করেন, 'একজন থেরাপিস্ট প্রত্যাখ্যান সহজভাবে ধারণ করতে সচেতন থাকা, ইতিবাচক অভ্যাস গড়ে তোলা, নেতিবাচক স্ব-কথোপকথন কমানো, দৃঢ় যোগাযোগের কৌশল অনুশীলনসহ এমন কিছু উপায়ের নির্দেশনা দিতে পারেন। আবার কিছু ক্ষেত্রে, থেরাপিস্ট নিজেই একধরনের নিরাপদ সম্বন্ধের ভিত্তি গড়ে তুলে এমন ভূমিকা পালন করেন, যার ফলে কেউ কেউ প্রত্যাখ্যানের ভয় জেতার রণকৌশল আয়ত্ত্ব করতে পারে।'

অনুবাদ করেছেন তানজিনা আলম

Comments

The Daily Star  | English

US cuts tariffs on Bangladesh to 20% after talks

The deal for Dhaka was secured just hours before a midnight deadline set by President Donald Trump

1h ago