কেন গড়ে তুলবেন সন্তানের বই পড়ার অভ্যাস

ছবি: সংগৃহীত

ছোটবেলা থেকেই সন্তানকে বই পড়ানোর অভ্যাস তার বুদ্ধিদীপ্ত আচরণের এবং চিন্তার বিকাশের জন্য সহায়ক হতে পারে। অনেক সময় আপনি হয়ত সন্তানকে শেখার জন্য অনেক কিছু বলছেন, কিন্তু সন্তান তা বুঝতে চাইছে না বা প্রয়োজন মনে করছে না। কিন্তু যেটা বইয়ে লেখা আছে বা অন্য কেউ বলছে, সেটা দেখা যায় সে অনেকটাই মেনে নেয়।

ছোট থেকে বই পড়ার অভ্যাস বাচ্চাদের কল্পনাশক্তি এবং মানসিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত কার্যকরি।

ছোটবেলায় আমরা কমবেশি সবাই পিনোকিও'র গল্প শুনেছি। পিনোকিও একটু বড় হলে তার বাবা তাকে বই-খাতা কিনে দেয় স্কুলে যাওয়ার জন্য। কিন্তু পিনোকিও ছিল দুষ্টু প্রকৃতির এবং খুব মিথ্যা বলত। এজন্য পিনোকিওকে নীল পরী একটি  শাস্তি দিয়েছিল। যখনই পিনোকিও মিথ্যা বলত, তার নাক লম্বা হয়ে যেত। এরপর নানা ঘটনা ঘটতে থাকে পিনোকিওর সঙ্গে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে তার ভুল বুঝতে পারে। শপথ করে আর কখনো মিথ্যা বলবে না এবং প্রতিদিন স্কুলে যেতে থাকে। দি অ্যাভেঞ্জারস অব পিনোকিও শিরোনামে এ রূপকথার গল্পটি লিখেছিলেন ইতালিয়ান শিশু সাহিত্যিক কার্লো কলোডি। গল্পটিকে সামাজিক ও শিশুদের জন্য শিক্ষণীয় বলে মনে করা হয়। এমন অনেক অসংখ্য গল্পের ভাণ্ডার রয়েছে সাহিত্যে। এতে একদিকে যেমন একসময় বইয়ের প্রতি, গল্পের আসক্তি তৈরি হবে, অন্যদিকে সাধারণ মানবীয় গুণাবলি রপ্ত করতে শিখবে ছোট থেকেই।

* ছোট বাচ্চাদের বিভিন্ন রকমের ছবি সম্বলিত বই তাদের দেশীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, প্রজাতি এবং সমাজকে চিনতে সাহায্য করবে। লেখা এবং ছবির মাধ্যমে পরিচিত করবে বিভিন্ন সমাজ কাঠামোর বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে।

* কৈশোরে তিন গোয়েন্দা, শার্লক হোমস, ফেলুদা না পড়লে হয়ত অসম্পূর্ণ থেকে যায় দুরন্ত কৈশোর।

তিন গোয়েন্দার কিশোরের মতো ক্ষুরধার চিন্তাভাবনা, রবিনের মতো কোনো বিষয়ের গভীরে গিয়ে গবেষণা করা কিংবা মুসার মতো সাহসিকতা দেখানো এসব চরিত্রের প্রতিফলন ঘটবেই।

কালজয়ী চরিত্রগুলো সাহিত্যের পাতা থেকে মানুষের মস্তিষ্কে ঘুরে ফেরে, ঘুরে বেড়ায় এ-শহরে থেকে ও-শহরে। কখনো বা চলতি পথে বাস্তব জীবনেও দেখা মেলে এসব চরিত্রের।

* সমাজের বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বুদ্ধিদীপ্ত আচরণ, সমস্যা সমাধানের মানসিকতা, বয়স্কদের সম্মান করাসহ অনেক জীবনঘনিষ্ঠ বিষয়ের শিক্ষাই হয়ে যায়। এছাড়াও বইয়ে ব্যস্ত থাকায় অন্যদিকে নেতিবাচক কাজে জড়িয়ে নিজের ক্ষতি করার সম্ভাবনা কমে যায়।

* যদি এতে সন্তানের লেখালেখির ইচ্ছেও হয়, কিংবা কার্টুন দেখে আঁকার ইচ্ছে হয়, ছোট থেকেই তাহলে নিজেকে গড়ে তুলতে পারবে।

* নিজস্ব ভাবনার জায়গা তৈরি হলে সে ভবিষ্যতে কী হতে চায়, কী করতে আগ্রহী এ সম্পর্কে একটি সম্যক ধারণা তৈরি হয়ে যাবে। তাতে ক্যারিয়ারের লক্ষ্য নির্ধারণের সে অনেকটা এগিয়ে থাকবে।

* একটা বয়সে বই পড়লে মা-বাবারা কেন যেন খুব বিরক্ত হয়ে যান, মনে করেন এতে একাডেমিক শিক্ষা কার্যক্রমের ব্যাঘাত ঘটছে। অথচ সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে সন্তানকে বইয়ের জগতে প্রবেশ করাতে পারলে একসময় বই-ই হবে তার প্রিয় এবং বিশ্বস্ত বন্ধু।

জ্ঞান চিন্তাকে আরো শাণিত করে, চিন্তার জায়গাগুলোকে আরো প্রশস্ত করে। কোনো বিষয়ে তার নিজস্ব একটি ধারণা মজবুত করে, বিতর্ক কিংবা তর্কের জায়গা তৈরি হয়, ব্যক্তিগত চিন্তাধারা উন্নত হয়।

তবে সন্তান কী বই পড়ছে না পড়ছে এবং তা নিয়ে তার চিন্তা ধারা কী রকম হচ্ছে সেটা নিয়েও কিন্তু প্রায়শই সন্তানের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত। কখনো কখনো আপনার জানা একটি গল্পের মাঝের কিছু অংশ সন্তানের সামনে একটু ভুলভাবে উপস্থাপন করতে পারেন, দেখতে পারেন সে শুধরে দেয় কিনা। পক্ষে কিংবা বিপক্ষে কোনো জোরালো বক্তব্য আছে কিনা। তখনই বুঝতে পারবেন সন্তান বইয়ে কতটুকু মনোনিবেশ করছে আর কতটা ধারণ করছে।

এই বৃহৎ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের পুরোটাকেই দেখার সুযোগ হয়ত খুব কম। কিন্তু বইয়ের মাধ্যমে অধরা এই পৃথিবীর কিছুটা হলেও জয় করা যায়। কারণ যারা বই পড়েন, নিশ্চিতভাবেই বলা যায় তারা কখনো সংকীর্ণমনা হতে পারেন না।

প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় বই যেন নিজেই বাক্সবন্দী উপন্যাস। প্রযুক্তির প্রয়োজন, একই সঙ্গে প্রয়োজন জ্ঞান আহরণের জন্য, বিনোদনের জন্য এমনকি জীবনের জন্য, 'বই'। কেবল আপডেটেড ডিজিটাল ডিভাইস আর গ্যাজেট উপহার না দিয়ে, একটি নির্দিষ্ট সময় পর বয়স অনুযায়ী যে বইগুলো পড়া উচিত, সন্তানকে সেগুলো দেওয়াই বরং জরুরি ও অনস্বীকার্য।

Comments

The Daily Star  | English

UK-based lawyer files complaint against Hasina, her cabinet with ICC

A UK-based lawyer has filed a complaint against former prime minister Sheikh Hasina, her cabinet and associated state actors with the Hague-based International Criminal Court, accusing them crimes against humanity

25m ago