নিখোঁজের ২৮ দিন পর ‘মায়ের মরদেহ’ শনাক্তের দাবি মেয়ের

রহিমা খাতুন। ছবি: সংগৃহীত

খুলনার দৌলতপুরের বণিকপাড়া থেকে নিখোঁজ রহিমা খাতুনের (৫৫) মরদেহ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা।

এ বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুক স্ট্যাটাসে রহিমা খাতুনের মেয়ে মরিয়ম মান্নান দাবি করেন, 'আমার মায়ের লাশ পেয়েছি আমি এই মাত্র।'

গত ২৭ আগস্ট রাত ১০টার দিকে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার বাসার উঠানের নলকূপে পানি আনতে যান রহিমা বেগম। এর পর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন।

এরপর গত ১০ সেপ্টেম্বর সকালে ময়মনসিংহের ফুলপুর থেকে বস্তাবন্দি অজ্ঞাতনামা এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। 

মরিয়ম তার ৩ বোন, চাচাতো ভাই ও ভাবিকে নিয়ে ফুলপুর থানায় রয়েছেন। পুলিশের উদ্ধার করা আলামতের মধ্যে- কয়েকটি কাপড় ও কালার করা চুল তার মায়ের বলে শনাক্ত করেছেন মরিয়ম ও তার পরিবারের সদস্যরা। 

আজ শুক্রবার দুপুরে মরিয়ম মান্নান তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, 'লাশটা পঁচাগলা অবস্থায় পেয়েছেন তারা। আমি অফিসিয়াল প্রমাণের জন্য অপেক্ষা করছি। আমার মায়ের কপাল, আমার মায়ের হাত, আমার মায়ের শরীর  আমি কীভাবে ভুল করি। আমি সন্দেহ করি এটা আমার মা। অফিসিয়াল কাজের পরে আমি নিশ্চিত করবো। ফুলপুর থানা, ময়মনসিংহ, ময়মনসিংহ পিবিআই এবং র‌্যাব-১৪ আমাকে সার্বিক সহোযোগিতা করছেন এই বিষয়ে। অফিসিয়াল কাজ শেষ হওয়ার পরে আমি সবার সঙ্গে কথা বলবো প্লিজ।'

এ ছাড়া মরদেহ উদ্ধার ও দাফনকারীদের বর্ণনার সঙ্গে মায়ের মিল পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন মরিয়মের বড় ভাই মোহাম্মদ মিরাজ আলী সাদি।

রহিমা খাতুন নিখোঁজের পর কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন তার মেয়ে আদরি আক্তার। মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরপর ১৪ সেপ্টেম্বর মামলাটি পিবিআইতে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। 

এ বিষয়ে ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ১০ সেপ্টেম্বর সকালে থানার বহরদার বাজার থেকে অজ্ঞাতনামা এক নারীর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই নারীর বয়স ৩০-৩২ বছর হবে। দাবিদার না থাকায় দুদিন পর ১২ সেপ্টেম্বর অজ্ঞাত হিসেবে মরদেহটি দাফন করা হয়। তবে, ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ডিএনএ টেস্ট করতে প্রয়োজনীয় আলামতও সংরক্ষণ করেছি আমরা।' ওসি আরও বলেন, 'আজ সকালে মরিয়ম এবং তার পরিবারের সদস্যরা থানায় এসেছেন।'

ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, 'বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমাকে কল করেন মরিয়ম। উদ্ধার হওয়ার ওই নারীর পোশাক ও আলামত সম্পর্কে জানতে চান। পোশাক ও উদ্ধার হওয়া আলামতের কথা শুনে নিজের মায়ের মরদেহ বলে দাবি করেন। এ অবস্থায় আমি তাকে বলেছি, শুক্রবার সকালে থানায় এসে উদ্ধার হওয়া মরদেহের সঙ্গে পাওয়া আলামত ও পোশাকগুলো দেখে তারপরই যেন লাশ শনাক্ত করে। চূড়ান্তভাবে লাশ শনাক্তে আমরা মরিয়মের ডিএনএ টেস্ট করাতে পারি।' 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিবিআইয়ের খুলনার পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, 'গত ১০ সেপ্টেম্বর ফুলপুর থানা এলাকা থেকে বস্তাবন্দি এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই থানার ওসি আমাদের জানিয়েছেন, বয়স ৩২ উল্লেখ করে ওই নারীর মরদেহ দাফন করা হয়েছে। তবে, তার ডিএনএ নমুনা সংরক্ষণ করেছে পুলিশ। ফুলপুরে যে নারীর মরদেহ পাওয়া গেছে তা মরিয়মের মায়ের। তবে, মরিয়মের মা রহিমা খাতুনের বয়স ৫৫ বছর। যদি তার মেয়ে পোশাক দেখে মরদেহ শনাক্ত করেও থাকেন এরপরও ডিএনএ টেস্ট করে প্রকৃতভাবে লাশ শনাক্ত করতে হবে। কারণ মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দিয়েছেন আদালত।'

পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান এ বিষয়ে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ পর্যন্ত পুলিশ ও র‌্যাব যৌথ অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের রিমান্ডে নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালতে বিষয়টি শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।'

দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, 'রহিমা খাতুন নিখোঁজের ঘটনায় তার স্বামী হেলাল হাওলাদারসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও র‌্যাব। তারা হলেন— খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রধান প্রকৌশল কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া, রহিমা খাতুনের দ্বিতীয় স্বামী হেলাল হাওলাদার, দৌলতপুর মহেশ্বরপাশা বণিকপাড়া এলাকার মহিউদ্দিন, পলাশ ও জুয়েল ও হেলাল শরীফ। 

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh Bank signals market-based exchange rate regime

The central bank will allow the exchange rate of the dollar to be determined by market forces

1h ago