রূপগঞ্জের চনপাড়ায় বিএনপি নেতাদের বাড়িতে হামলা

বিএনপি হামলা
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র এলাকায় বিএনপি ও যুবদলের ৫ নেতার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র এলাকায় বিএনপি ও যুবদলের ৫ নেতার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১১টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত দফায় দফায় এই হামলার ঘটনা ঘটে।

হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও কায়েতপাড়া ইউপি সদস্য বজলুর রমহানের অনুসারী সিটি শাহীনের নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোটা হাতে এই হামলা করে। তারা বাড়িঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে লুটপাট চালিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

হামলায় চনপাড়া সাংগঠনিক ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হারুন মিয়াজি, যুগ্ম সম্পাদক ইউসুফ হাওলাদার, ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি মো. কামাল, ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য হযরত আলী, ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি মো. মাসুম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানান।

এর আগে শনিবার রাতেও রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা এলাকায় যুবদল ও ছাত্রদলের কয়েকজন নেতার বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে।

যুবদল নেতা মো. মাসুম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে অর্ধশতাধিক লোকজন বাড়িতে হামলা চালায়। বাড়ির প্রধান ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পরিবারের লোকজনকে মারধর করে। ঘরে থাকা আসবাবপত্র ভাঙচুর করে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে।

তিনি বলেন, 'ও বিএনপি করে এই বইলা স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজন হামলা করে। তারা সবাই বজলু মেম্বারের লোকজন। ঘরে যা আছিল পিটায়া ভাইঙা রাইখা গেছে। আমার স্ত্রীর গলায় দা ঠেকিয়ে গলার চেইন ছিনিয়ে নেয়। ঘরে থাকা ৯০ হাজার টাকাও নিয়ে যায় তারা। বৃদ্ধ বাবা আবুল হোসেন ও মা মাহফুজা বেগমকেও মারধর করে আহত করে। আমারেও মারছে তারা। আতঙ্কে কেউ চিল্লাইতেও পারি নাই।'

সপ্তাহখানেক আগেও বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত আছেন বলে তাকে পেটানো হয় বলে অভিযোগ করেন মামুস। এরপর থেকে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। রোববার দুপুরেই তিনি বাড়িতে ফেরেন। এই খবর পেয়েই ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা তার বাড়িতে হামলা চালায়। একই রাতে চনপাড়ার আরও কয়েকজন নেতার বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করেছে বলে জানান যুবদলের এই নেতা।

ভাঙচুর করা হয়েছে ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ইউসুফ হাওলাদারের বাড়িতেও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউসুফ হাওলাদারের পরিবারের এক সদস্য দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আনুমানিক রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিদ্যুৎ ছিল না। অন্ধকারের মধ্যেই বিএনপির দালালেরা হুঁশিয়ার-সাবধান, এই স্লোগান দিয়ে হামলা চালানো হয়। সবার হাতে রাম দা, লাঠিসোটা ছিল। স্থানীয়ভাবে সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত। ঘরে ভাঙচুর কইরা কিছু রাখে নাই। দুইটা মোবাইল  নিয়ে গেছে। এইগুলা পত্রিকায় প্রকাশ হলে আবারও হামলা করবো, মাইরাও ফেলতে পারে। গতরাত থেকে বাড়ির সবাই আতঙ্কে আছে। খালি বিএনপি করি বইলা এই হামলা। পুরা উপজেলায়ই এমনটা চলতেছে।'

হামলার পর স্থানীয় ইউপি মেম্বার ও আওয়ামী লীগ নেতা বজলুর রহমান বিষয়টি সমাধান করে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েছেন বলেও জানান ইউসুফ হাওলাদারের পরিবারের লোকজন।

তার বাড়িতেও হামলা হয়েছে জানিয়ে চনপাড়া সাংগঠনিক ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হারুন মিয়াজি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত একমাস যাবত রূপগঞ্জ উপজেলায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের উপর স্টিম রোলার চলতেছে। নেতা-কর্মীর কেউ নিজের বাড়িতে থাকতে পারতেছে না। সবাই পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। অন্যের বাড়িতে থাকি। তারপরও নিজের বাড়ির হামলা কেউ এড়াইতে পারে না। খালি বিএনপি করি বইলা এইরকম মানবেতর জীবনযাপন করতে হইতেছে। প্রশাসন এই ঘটনায় সম্পূর্ণ নিরব।'

তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ নেতা ও স্থানীয় ইউপি মেম্বার বজলুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এইখানে আমি ছাড়াও আরও আওয়ামী লীগের লোকজন আছে। হামলার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। কাল রাতে আমি চনপাড়াতে ছিলাম না। কারা হামলা করছে সেইটা জানি না। আমার লোকজন কেউ হামলা করছে এমনটা কেউ অভিযোগ করলে আমার সামনে আইসা বলতে বলেন।'

গত ১১ সেপ্টেম্বর স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা রফিকুল ইসলামকে (৩৫) তুলে নিয়ে টানা ৮ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে বজলুর রহমানের বিরুদ্ধে।

বিএনপি নেতাদের বাড়িতে হামলার বিষয়ে কথা বলতে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদের ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। পরে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমীর খসরুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন জানিয়ে কলটি কেটে দেন। 

Comments