পুষ্টিগুণে ভরা তাল

ছবি: সংগৃহীত

শ্রাবণের পর এখন চলছে ভাদ্র মাস। ভাদ্র মাস মানেই পাকা তালের মৌসুম। তাল বাংলাদেশের মানুষের কাছে খুব পরিচিত একটি ফলের নাম। ভাদ্র মাস এলেই বাংলার ঘরে ঘরে তালের পিঠা বানানোর উৎসব শুরু হয়। সাধারণত গ্রামের দিকে তালের পিঠা বানানোর প্রচলন বেশি দেখা যায়৷ এই সময় পাকা তালের রস দিয়ে বিভিন্ন রকম পিঠা পায়েস তৈরি হয়।

তবে কচি অবস্থায়ও তাল খাওয়া যায়, যাকে বলে তালের শাঁস। কচি তালের শাঁস খেতেও ভারী মজা, উপকারিতাও কম নয়। আবার শীতের শুরুতে তাল গাছের কাণ্ড থেকে রস সংগ্রহ করেও তৈরি করা পায়েস, গুড়, পাটালি ইত্যাদি।

কচি তালের শাঁস বা পাকা তালের রস, ২ অবস্থায়ই তালের পুষ্টিগুণ অনেক। পাকা তালের রস থেকে তৈরি তালমিসরি সর্দি কাশির মহৌষধ, যকৃতের দোষ নিবারক ও পিত্তনাশক।

কচি তালের শাঁসের ১০০ গ্রাম খাদ্যযোগ্য অংশে আছে, খাদ্যশক্তি ২৯ কিলোক্যালরি, জলীয় অংশ ৯২ দশমিক ৩ গ্রাম, শর্করা ৬ দশমিক ৫ গ্রাম, খাদ্য আঁশ শূন্য দশমিক ২ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৪৩ গ্রাম, ভিটামিন- সি ৪ মিলিগ্রাম।

পাকা তালের ১০০ গ্রাম খাদ্যযোগ্য অংশে আছে, খাদ্য শক্তি ৮৭ কিলোক্যালরি, জলীয় অংশ ৭৭ দশমিক ২ গ্রাম, খাদ্য আঁশ শূন্য দশমিক ৫ গ্রাম, প্রোটিন শূন্য দশমিক ৭ গ্রাম, শর্করা ২০ দশমিক ৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৯ গ্রাম।

ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েট কনসালটেন্ট পুষ্টিবিদ তাসনীম আশিক বলেন, সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে আমাদের খাদ্য তালিকা ঠিক রাখতে হবে৷ কারণ খাদ্যাভ্যাস আমাদের শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করে। তাল খাওয়ার উপকারিতা বলতে গিয়ে তিনি যেসব গুনাগুণ তুলে ধরেন তা নিচে আলোচনা করা হলো—

● কচি তালের শাঁসে আছে প্রায় ৯৩ শতাংশ জলীয় অংশ। এছাড়াও এতে আছে জেলাটিন, যা খাওয়ার পর পেট ভরে যাওয়ার মতো অনুভূতি দেয় এবং ক্ষুধাভাব কমিয়ে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে৷

● শরীরের কোষের মধ্যে ইলোকট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে কচি তালের শাঁস খুবই উপকারী। বমি ভাব বা ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের জন্য এটি বেশ উপকারী একটি খাবার।

● বাতের ব্যথা দূর করতে তালের রস বেশ উপকারী। আপনি যদি প্রতিদিন ১০০ গ্রাম তাল কোনো চিনি ও পানি না মিশিয়ে খান তবে আপনার বাতের ব্যথা ধীরে ধীরে অনেকাংশে উপশম হবে৷

● লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স হওয়ার কারণে তালের রস কৃত্রিম চিনির একটা স্বাস্থ্যকর বিকল্প হতে পারে। যা ডায়াবেটিসের সূত্রপাত প্রতিরোধে সাহায্য করে। খেজুরের গুড় খাওয়ার ফলে রক্তে খুব বেশি মাত্রায় শর্করা বৃদ্ধি পায় না বলে জানা গেছে। তবে ডায়াবেটিস এর রোগীদের কম মাত্রায় খেজুরের চিনি বা গুড় খাওয়া উচিৎ।

● তালের শাঁসে থাকে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশ। তাই এটি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সমাধানেও সাহায্য করবে।

● তালে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস আছে যা দাঁত ও হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধে সহায়তা করে।

● এন্টি অক্সিডেন্ট গুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় তাল ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম। এছাড়া স্বাস্থ্য রক্ষায় ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও তাল বেশ উপকারী।

● তালে আছে ভিটামিন-বি, তাই ভিটামিন-বি এর অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধে তাল ভূমিকা রাখে।

● লিভার সুরক্ষায় তালের শাঁস এর ভূমিকা রয়েছে। তালের শাঁস লিভারের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

● অনেকের বুক ধড়ফড়ের সমস্যা রয়েছে। ৩ বা ৪ চামচ তালের রস দুধের সঙ্গে মিশিয়ে সকাল বিকাল কয়েকদিন খেলে বুক ধড়ফড়ানি কমে যায় ।

পরিশেষে বলা যায়, আপনি যদি তাল খেতে চান তবে অবশ্যই তালের মৌসুমে সবসময় তাজা এবং পরিষ্কার ফল বাছাই করুন। পাকা তাল খুব সহজেই নষ্ট হয়ে যায় তাই চেষ্টা করবেন বাজার থেকে কিনে আনার একদিনের মধ্যেই খেয়ে ফেলতে।

সূত্র: খাদ্য পুষ্টি ও পথ্য, অধ্যাপক ডা. এ, এস, এম, এ, রায়হান

Comments

The Daily Star  | English

Enforced disappearances: Eight secret detention centres discovered

The commission raised concerns about "attempts to destroy evidence" linked to these secret cells

7h ago