কক্সবাজার

রক্ষিত বনের ভেতর কারাগার বানাতে চায় কারা অধিদপ্তর

উখিয়া উপজেলার পাগলীবিল রক্ষিত বন। ছবি: স্টার

দখল-বেদখলে উজাড় হতে থাকা কক্সবাজারের বনাঞ্চলের ভেতর উন্মুক্ত কারাগার বানাতে চায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের অধীনে থাকা কারা অধিদপ্তর। এ লক্ষ্যে কারা অধিদপ্তরকে উখিয়া উপজেলার পাগলীবিল এলাকায় রক্ষিত বনের ১৬০ একর বনভূমি বরাদ্দ দিয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।

বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন, জাতীয় বননীতি, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পরিপত্র ও উচ্চ আদালতের রায়কে ভঙ্গ করা হয়েছে বলে অভিযোগ বন বিভাগের।

১৯৩৫ সালে জারি করা গেজেট নোটিফিকেশনের মধ্যদিয়ে বনটিকে রক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। তখন থেকে এ বনের ব্যবস্থাপনায় রয়েছে বন বিভাগ।

গত জুনে পাগলীবিল এলাকায় কারা অধিদপ্তরের দেওয়া সীমানা পিলার অপসারণ করেছে বন বিভাগ। এ বিষয়ে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে জেলা পুলিশকে।

অন্যদিকে, বন আইনে সরকারের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় বনভূমি বৃদ্ধি করার বাধ্যবাধকতা ও বনরক্ষায় আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করে এ বনভূমি বরাদ্দ বাতিলের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে বন বিভাগ।

ইতোমধ্যে কাজ বন্ধ করার জন্য কারা অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়েছে বন বিভাগ। চিঠিতে বলা হয়েছে, বনভূমি বরাদ্দ নেওয়ার ক্ষেত্রে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তিপত্র নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। রক্ষিত বনটিতে নানা ধরনের বিপন্নপ্রায় গাছ, বন্যপ্রাণীর বসবাস। এ কারাগার নির্মাণের ফলে বনের জীববৈচিত্র্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

১৯৯৫ সালে ভূমি মন্ত্রণালয়ের এক স্মারকে রক্ষিত বনের ব্যবস্থাপনা বনবিভাগের থাকলেও বনভূমির রেকর্ড থাকে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসকের নামে। স্মারকে রক্ষিত বনের অংশ বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে বনবিভাগের মতামত গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।

২০১৫ সালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা এক পরিপত্রে বনের ভেতর কোনো স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে বনবিভাগের অনাপত্তিপত্র গ্রহণের কথাও বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলার জেল সুপার মো. শাহ আলম খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জায়গাটি জেলা প্রশাসকের নামে রেকর্ডভুক্ত। তাই বনবিভাগ থেকে অনাপত্তি নেওয়ার প্রয়োজন নেই।'

'জেলা প্রশাসক, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সব নিয়মনীতি মেনেই আমাদের জায়গাটি বরাদ্দ দিয়েছেন। এখানে বনবিভাগের আপত্তি তোলার কোনো সুযোগ নেই। ১৯৩৫ সালের গেজেট নোটিফিকেশনের কোনো কার্যকারিতা এখন আর নেই। এ জায়গাটি আমাদের নামে নামজারি ও খতিয়ান হয়ে গেছে', বলেন তিনি।

জেল সুপার জানান, বন বিভাগের বাধার কারণে তাদের কাজ বন্ধ রয়েছে।

মালয়েশিয়ার সিআরপি'র (সেন্ট্রাল রিহেবিলিটেশন প্রিজন) আদলে এ কারাগারটি নির্মাণ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, 'এখানে লঘুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হবে। তাদের জন্য বিভিন্ন হস্তশিল্পের কাজ, মাছ চাষ ও চাষাবাদের ব্যবস্থা থাকবে।'

প্রধান বন সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আমীর হোসাইন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি ১৯৩৫ সালের গেজেটে রক্ষিত বন। এ বনভূমি বরাদ্দ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা ইতোমধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়কে এটি বাতিলের জন্য চিঠি দিয়েছি।'

জানতে চাইলে কক্সবাজার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (দক্ষিণ) সরওয়ার আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যেহেতু এটা সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প। এতে আমাদের কোনো অভিযোগ বা আপত্তি নেই। আমরা শুধু বিদ্যমান নিয়মনীতি মেনে চলতে তাদের অনুরোধ করেছি।'

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নৃশংসতা থেকে পালিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া অঞ্চলের বনভূমিতে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নেওয়ায় প্রায় ৮ হাজার একরের মতো বনভূমি ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়াও, সরকারের নানা সংস্থার বরাদ্দ নেওয়া, বেদখলে কক্সবাজারের বনভূমি প্রায় এক তৃতীয়াংশ হ্রাস পেয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Stop destroying nature, plant trees instead of cutting: Yunus

Protecting the environment should be a citizen-led movement, he says

2h ago