সহজ সরল জীবনযাপন এই আমার জীবন দর্শন: জন্মদিনে আবুল হায়াত
বরেণ্য অভিনয়শিল্পী ও নাট্যকার আবুল হায়াত। নাট্যপরিচালক হিসেবেও সফল তিনি। এদেশের মঞ্চ নাটকে তার পথচলা ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। অসংখ্য আলোচিত নাটকে অভিনয় করেছেন। সিনেমায় অভিনয় করেও প্রশংসা কুড়িয়েছেন, পেয়েছেন একুশে পদক।
আজ ৭ সেপ্টেম্বর দর্শক নন্দিত অভিনেতা আবুল হায়াতের ৭৮তম জন্মদিন।
এ উপলক্ষে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।
একজীবনে আপনার অর্জন অনেক, তারপরও আফসোস কিংবা অপূর্ণতা কাজ করে কি?
আবুল হায়াত: না । কখনোই মনে হয়নি অপূর্ণতা আছে আমার জীবনে। যতটুকু চাওয়া ছিল, তার চেয়েও বেশি পেয়েছি। আমার জীবনে কোনো অপূর্ণতা নেই। মানুষের ভালোবাসা এত বেশি পেয়েছি যা কোনোকিছুর সঙ্গে তুলনা করে হবে না। জীবন নিয়ে আমি তৃপ্ত। নিজেকে সুখী মানুষ মনে করি। একটা কাজ বাকি রয়ে গেছে, তা হচ্ছে লেখালেখি। আত্নজীবনী শেষ করতে চাই। অর্ধেক লেখা হয়ে গেছে।
আপনার জীবনের দর্শন কী?
আবুল হায়াত: জীবনের একটাই দর্শন সহজ সরল জীবনযাপন করবো। হাসিখুশি জীবনযাপন করবো। সুন্দরভাবে জীবন কাটাবো। সৃষ্টিকর্তার দয়ায় এবং মানুষের ভালোবাসায় সুন্দর একটা জীবন পার করেছি। অনাগত দিনগুলিতেও এভাবেই থাকতে চাই।
কোন কথাটি আপনাকে বেশি প্রভাবিত করেছে?
আবুল হায়াত: আমার বাবাকে দিয়ে আমি ভীষণভাবে প্রভাবিত হয়েছি। বাবার কাছ থেকে অনেককিছু শিখেছি। বাবা সৎ একটা জীবন পার করে গিয়েছেন। ওটা আমাকে প্রবলভাবে টেনেছে। বাবা একটি কথা বলতেন, 'চাইবে কম পাবে বেশি'। এটা আমি আমার জীবনে দেখেছি এবং মিলেও গেছে। আসলেই চেয়েছি কম, কিন্ত পেয়েছি বেশি। ছোটবেলা থেকেই বাবার কথা ও জীবন দ্বারা প্রভাবিত আমি।
মঞ্চে আপনি অনেকগুলো বছর সরব ছিলেন, আবারো মঞ্চে ফেরার ইচ্ছে আছে কি ?
আবুল হায়াত: আমি মঞ্চেরই শিল্পী। মঞ্চ থেকে উঠে এসেছি। মঞ্চ আমার প্রাণ। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান একটি নাটকের দলের সঙ্গে সুদীর্ঘকাল সময় কাটিয়েছি, অভিনয় করেছি। মঞ্চের প্রতি আমার আলাদা দরদ ও মায়া আছে। জীবনের প্রথম পুরস্কার মঞ্চে অভিনয় করে পেয়েছি। মঞ্চ আমাকে অনেক দিয়েছে।
মঞ্চে ফেরার ইচ্ছে কাজ করে এখনো। কিন্ত শারীরিকভাবে অনেক শক্তির প্রয়োজন। ওটা না হলে সম্ভব নয় । কয়েকদিন পর আমার লেখা নতুন নাটক মঞ্চে আসছে। ওই নাটকে অভিনয় করতে চেয়েছিলাম। কিন্ত পারলাম না। তারপরও আশাবাদী মানুষ আমি। স্বপ্ন দেখি মঞ্চে ফেরার।
মঞ্চ নাটক নিয়ে যেরকম স্বপ্ন দেখেছিলেন তা কি পূরণ হয়েছে?
আবুল হায়াত: হয়েছে। বহু আগেই হয়েছে। বাংলাদেশের মঞ্চ নাটক অনেকদূর এগিয়েছে। এদেশের মঞ্চ নাটক অনেক দেশে প্রশংসিত হয়েছে। দর্শনীর বিনিময়ে আমরাই প্রথম নাটক করেছি। অনেক ভালো ভালো নাটক আছে আমাদের। আমার নিজের দল নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের অনেকগুলো সাড়া জাগানো ও প্রশংসিত নাটক হয়েছে। সেসব নাটকে আমিও অভিনয় করেছি।
কেউ কেউ বলছেন এখন ওটিটির যুগ, এই ব্যাপারে আপনি কি মনে করেন?
আবুল হায়াত: বিষয়টিকে আমি ওভাবে দেখি না। নতুন একটি ধারা এসেছে, অবশ্যই তাকে স্বাগতম জানাই। আমার একটাই চাওয়া এই মাধ্যমে রুচির বিষয়টা যেন বেশি করে লক্ষ্য রাখা হয়। রুচিশীল কাজ যেন বেশি হয়। আমরা যে সংস্কৃতিকে লালন করি, ধারণ করি তা যেন থাকে।
শিল্পের সঙ্গে বসবাস আপনার, শিল্প আপনাকে কতটা দিয়েছে?
আবুল হায়াত: শিল্পের সঙ্গে বসবাস, এটাকে খুব ইতিবাচকভাবে দেখি। শিল্পের সঙ্গে বসবাস করেছি বলেই জীবন আরো সুন্দর হয়েছে । শিল্পভাবনা, শিল্পের প্রতি ভালোবাসা, শিল্পের সাথে উঠাবসা এইসব তো জীবনকে সমৃদ্ধ করে। শিল্পচর্চা যত বেশি হবে সবকিছু তত বেশি সুন্দর হবে।
৭ সেপ্টেম্বর আপনার ৭৮তম জন্মদিন, বিশেষ দিনটিকে কীভাবে দেখেন?
আবুল হায়াত: জন্মদিনে মনে হয় আরেকটি বছর জীবন থেকে শেষ হয়ে গেল। এভাবেই জীবনের ইতি ঘটে। বিশেষ দিনটিতে সবার ভালোবাসায় সিক্ত হই। এটাও বিরাট প্রাপ্তি। মানুষের ভালোবাসা জীবনকে আরও আনন্দময় করে তুলে।
Comments