ওমানে দায়িত্ববোধ দৃষ্টান্তে পুলিশের সম্মাননা পেল প্রবাসী বাংলাদেশি

পুরস্কার
প্রবাসী নুর উদ্দিন শহীদকে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন রয়্যাল ওমান পুলিশের মাস্কাট প্রদেশের সহকারী প্রধান। ছবি: আরওপি ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

৪০০ ওমানি রিয়াল বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ টাকার কিছু বেশি। পেট্রোডলারের দেশ ওমানে এই অর্থ খুব বেশি নয়। কিন্তু কোনো প্রবাসী বাংলাদেশি কুড়িয়ে পাওয়া এই অংকের অর্থ ফিরিয়ে দিয়ে সে দেশের রাষ্ট্রীয় সংস্থা থেকে সম্মানিত হলে, জাতীয় পত্রিকার খবরের শিরোনাম হলে, তা বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই গর্বের বিষয়। 

সততা ও দায়িত্ববোধের এমন উদাহরণ দিয়ে বাংলাদেশিদের মুখ উজ্জ্বল করেছেন প্রবাসী নুর উদ্দিন শহীদ। রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া ৪০০ রিয়াল পুলিশের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে এই রেমিট্যান্সযোদ্ধা সম্মানিত হয়েছেন।

দেশটির রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়্যাল ওমান পুলিশ (আরওপি) এর সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দিয়েছে নুর উদ্দিন শহীদকে। সনদের সঙ্গে নগদ ২০০ রিয়াল (বাংলাদশি মুদ্রায় ৫০ হাজার টাকা) অর্থ পুরষ্কার দেওয়া হয়েছে তাকে।

নুর উদ্দিন জানান, গত ১ আগস্ট রাজধানী মাস্কাটের মোয়েলা সবজি মার্কেটে তিনি গিয়েছিলেন বাজার করতে। ফেরার সময় পার্কিং এলাকায় নিজের গাড়ির নিচে ৪০০ ওমানি রিয়াল খুঁজে পান। উপযুক্ত দাবিদার না পেয়ে স্থানীয় আল খোদ পুলিশ স্টেশনে গিয়ে টাকাগুলো জমা দেন তিনি। 

এ ঘটনার ২৭ দিন পরে রয়্যাল ওমান পুলিশের সম্মাননার আমন্ত্রণ পান তিনি।

ওমান
আরওপির ইনস্টাগ্রাম ও সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশি শহীদের সম্মানার খবর। ছবি: সংগৃহীত

গত রোববার সকালে রাজধানীর আল কুরুম এলাকায় আরওপির সদর দপ্তরে নুর উদ্দিন শহীদকে আনুষ্ঠানিক সম্মাননা দেওয়া হয়। 

সংস্থাটির মাস্কাট প্রদেশের সহকারী পুলিশ প্রধান কর্নেল আব্দুল হাকিম বিন খালিদ আল হোসানি তার হাতে সম্মাননা সনদ ও নগদ ২০০ রিয়াল অর্থ তুলে দেন। 

আরওপির বিবৃতির বরাতে ওমানের জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় শহীদের সম্মাননার খবরটি প্রকাশ করা হয়। অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশিদের পাশাপাশি অন্য দেশের প্রবাসীরাও শহীদের প্রশংসা করছেন, অভিনন্দন জানাচ্ছেন।

তাকে এমন সম্মান জানানোর জন্য রয়্যাল ওমান পুলিশের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান অনেকে।

মাস্কাটের কুরিয়াত শহরের প্রবাসী বাসিন্দা নুর উদ্দীন শহীদের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদে। পিতা প্রবাসী ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মুছা সওদাগরের হাত ধরেই ২০ বছর আগে ওমান পাড়ি জমিয়েছিলেন। 

এখন আরও দুই ভাইকে নিয়ে পিতার রেখে যাওয়া রেস্টুরেন্ট ব্যবসা দেখাশোনা করছেন।

অনুভূতি জানাতে গিয়ে শহীদ বলেন, 'দায়িত্ববোধ থেকে কাজটা করেছিলাম। ভাবতেও পারিনি এমনভাবে সম্মানিত হবো। আমি খুবই আনন্দিত। প্রবাসী ও দেশের সম্মান বাড়াতে পেরে গর্বিত। আশা করছি, এভাবে প্রবাসীরা বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করবেন।'

টাকার অংকের চেয়ে বাংলাদেশ আর বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তির বিষয়টিকে বড় করে দেখছেন ওমানের প্রবাসীরা সংগঠকরা। তাদের মতে, নানা কারণে ও আচরণে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশিরা ইমেজ সংকটে থাকেন। শহীদের দায়িত্ববোধের উদাহরণ তা বাড়াতে সহায়ক হবে নিঃসন্দেহে। অন্যদেরও উৎসাহ দিবে।

তারা জানান, আরব বিশ্ব বিশেষ করে উপসাগরীয় দেশগুলোতে সততা, মানবিক মূল্যবোধকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে বিদেশি কর্মীদের এমন উদ্যোগে সম্মাননা জানানোর তাদের সরকারি সংস্থাগুলোর রেওয়াজ আছে। প্রবাসীদের সততা ও দায়িত্ববোধে উৎসাহ দেয়ার সঙ্গে অপরাধমুক্ত রাখতেই তারা সম্মাননা ও পুরষ্কার দিয়ে থাকে।

প্রতিবেদক: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

Make right to vote a fundamental right

The Constitutional Reform Commission proposes voting to be recognised as a fundamental right, so that people can seek legal remedies if it is violated.

14h ago