‘গুমের’ অভিযোগ তদন্তে কমিশন গঠন ও গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে সইয়ের দাবি আসক’র

মায়ের ডাক
আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবসে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘মায়ের ডাক’ সংগঠন আয়োজিত আলোচনা সভায় শিশু সাবা। সাবার বাবা মাহফুজুর রহমান সোহেলকে গুম করা হয়েছে। পথ চেয়ে বাবার অপেক্ষায় আছে সাবা। সাবার কথা-কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে আলোচনার পরিবেশ! ফাইল ছবি: এমরান হোসেন/স্টার

গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে সই ও গুমের অভিযোগ তদন্তে সরকারকে নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করার দাবি জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।

গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস ২০২২ এর প্রাক্কালে সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।

'গুম' ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, একটি ন্যায় ও মানবাধিকারভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় গুমের মতো ঘৃণ্যতম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধ করা, জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা অত্যাবশ্যকীয় বলে আসক বিশ্বাস করে। গুমের অভিযোগগুলো নাকচ করে না দিয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে খতিয়ে দেখার এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার ওপর আসক সবসময় জোর দিয়ে আসছে।

জাতিসংঘ ২০১০ সালে গুম বা বলপূর্বক অন্তর্ধানসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদ অনুমোদন করে উল্লেখ করে আসক জানায়, এ সনদে বিস্তৃত ও সুশৃঙ্খল উপায়ে সংগঠিত বলপূর্বক অন্তর্ধানকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। একইসঙ্গে এ বিষয়ে সচেতনতা আর সংবেদনশীলতা তৈরির লক্ষ্যে জাতিসংঘ থেকে প্রতিবছর ৩০ আগস্টকে গুম বা বলপূর্বক অন্তর্ধানের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে পালন করার ঘোষণা দেওয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বারবার বলপূর্বক অন্তর্ধান বা গুমের ঘটনা অস্বীকার করা হয়েছে। তবে বিভিন্ন সময়ে পরিবার, স্বজন বা প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা, সাংবাদিক বা মানবাধিকার সংগঠনের তথ্যানুসন্ধানে গুমের সুস্পষ্ট অভিযোগ উঠে এসেছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে তুলে নেওয়ার কিছুদিন পর গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলেও গণমাধ্যমে সংবাদ বেরিয়েছে।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে সংগৃহীত তথ্যের বরাত দিয়ে আসক জানায়, ২০১৯-২০২২ এর মধ্যে ২৮ জন গুমের শিকার হয়েছে বলে ভুক্তভোগী পরিবার ও স্বজনরা অভিযোগ তুলেছেন। তাদের মধ্যে পরবর্তী সময়ে ১২ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এবং ৫ জন ফেরত এসেছেন। বাকিরা এখনো নিখোঁজ আছেন।

এ প্রেক্ষাপটে ৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুম বা বলপূর্বক অন্তর্ধান বিরোধী দিবসে আইন ও সালিশ কেন্দ্র বাংলাদেশ সরকার ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে কয়েকটি দাবি জানিয়েছে।
সরকারের কাছে করা দাবিগুলো হলো-

১. গুমের শিকার সব নিখোঁজ ব্যক্তিদের শিগগির খুঁজে বের করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া

২. এ সংক্রান্ত অভিযোগ করার জন্য একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা এবং তা ব্যাপকভাবে প্রচার করা

৩. গুমের ঘটনা প্রতিরোধে এবং ভুক্তভোগী ও প্রতিটি গুমের অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিতে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠন

৪. দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া এবং গুমের শিকার ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের যথাযথ পুনর্বাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা

৫. গুম সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদে সই করা

৬. গুমের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলোকে অস্বীকার না করে এ ধরণের ঘটনার বিচার নিশ্চিতে বিদ্যমান আইন কাঠামোতে পরিবর্তন আনা

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে করা দাবিগুলো হলো-

১. গুমের অভিযোগগুলোর তথ্যানুসন্ধান করা। নিখোঁজদের খুঁজে বের করা এবং ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। কোনো আইনি বাধা থাকলে তা দূর করা

২. ভুক্তভোগী বা তাদের পরিবারকে আইনি ও নৈতিক সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া

৩. গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের উত্থাপিত অভিযোগ নিয়ে একটি জাতীয় শুনানির আয়োজন করা

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh welcomed 20 percent US tariff

Bangladesh gains edge after US tariff cut

Trump admin has reduced tariffs on Bangladeshi goods from 35% to 20%, a move expected to strengthen the country’s competitiveness against rivals such as India and Vietnam

8h ago