চট্টগ্রামে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি

'সপ্তাহে একবারও বাচ্চাদের প্লেটে ডিম, মাছ বা মাংস দিতে পারি না'

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ বিপাকে পড়েছেন। ছবি: স্টার

'চালের দাম বেড়েছে, ডিমের দাম বেড়েছে, মাছের দাম-মুরগির দাম বেড়েছে। সব ধরনের সবজি এখন বাজারে ৬০ থেকে ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। চিনির কেজি ৮০ টাকা ছিল ১ মাস আগেও। এখন সেই চিনি ৯০ টাকা কেজি কিনতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে আমার পরিবারের সবাই খাওয়া কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। সপ্তাহে একবারও বাচ্চাদের প্লেটে একটি ডিম বা এক টুকরো মাংস বা মাছ দিতে পারি না।'

দ্য ডেইলি স্টারকে কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রাম শহরের রিকশাচালক বারেক মিয়া।

বরিশাল থেকে ১০ বছর আগে চট্টগ্রাম শহরে আসেন তিনি। এখানে রিকশা চালান, থাকেন বাকলিয়ায় এক বস্তিতে। তার ঘরে আছেন স্ত্রী, ২ সন্তান ও বৃদ্ধ বাবা-মা।   

শুধু বারেক মিয়াই নন, সম্প্রতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। নিত্যপণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ওষুধের দাম। বেড়েছে সাবানের মতো প্রসাধন সামগ্রীর দামও।   

বারেক মিয়া বলেন, `আমি যদি ১২ ঘণ্টা রিকশা চালাই তাহলে দিনে সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা আয় করতে পারি। আগে এই আয় দিয়ে কোনোরকমে সংসার চালাতে পারতাম। কিন্তু এখন প্রায় প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম অবিশ্বাস্যরকম বেড়ে গেছে। এই আয় দিয়ে সংসার চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।'

`আগে যে চাল ৫০ টাকা কেজিতে কিনতাম, এখন তা ৬০ টাকা কেজিতে দাঁড়িয়েছে। মুরগি কিনতে যাওয়ার সাহস পাই না কেজির দাম ১৮০ টাকা থেকে ১৯০ টাকা হওয়ার পর। এমনকি আজকাল আমি ডিমও কিনতে পারি না', যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, `আমাকে বাবা-মায়ের জন্য নিয়মিত ওষুধও কিনতে হয়। কিন্তু এই উপার্জন দিয়ে আর সামাল দিতে পারছি না।'

নিত্যপণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দামও। ছবি: স্টার

শুধু নিম্ন আয়ের মানুষের না, দ্রব্যমূল্য বাড়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চট্টগ্রামের মধ্যম আয়ের মানুষও। তাদের গল্পও প্রায় একই রকম।

এমনই একজন স্কুলশিক্ষক দীপক বিশ্বাস। আগে বেতন ও প্রাইভেট টিউশনের উপার্জন দিয়ে কোনো রকমে ৬ সদস্যের সংসার চালাতে পারতেন। এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধির পর সব খরচ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

দীপক বিশ্বাস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, `আমার মাসিক আয় প্রায় ৩০ হাজার টাকা। সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় কুলিয়ে উঠতে পারছি না এই টাকা দিয়ে। এরমধ্যেই আমার ২ সন্তানের লেখাপড়ার খরচ দিতে হচ্ছে। বাবা-মাকেও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে নিয়মিত ওষুধ কিনে দিতে হয়।'

তিনি আরও বলেন, `বাসা ভাড়া বাবদ ১০ হাজার টাকা দিই। বাকিটা দিয়ে সন্তানদের পড়াশোনার খরচ ও সংসারের বাকি খরচ মেটানো এখন প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।'

`১ মাস আগেও যে সাবান ৩৫ টাকায় কিনতাম তা এখন ৫৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। অ্যান্টি-হাইপারটেনসিভ (ব্লাড প্রেশারের) ওষুধ লোসার্টান পটাসিয়াম প্রতি স্ট্রিপ (১০ পিস) ৭০ টাকায় কিনেছি ১ মাস আগেও। কিন্তু এখন তা  ৯০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।'

জামাল খান রোডের ফার্মেসির বিক্রয়কর্মী শাহেদুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, `১ মাসের ব্যবধানে প্রায় ৫৪ ধরনের ওষুধের দাম ২৫ থেকে ৪৪ শতাংশ বেড়েছে। এমনকি যে প্যারাসিটামল সিরাপ ২০ টাকায় বিক্রি হতো, তা এখন ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।'

 

হেম সেন লেনের মুদি দোকানদার ইফতেখার হোসেন বলেন, `১ মাসের ব্যবধানে সব ধরনের প্রসাধন পণ্যের দাম ২০ শতাংশ থেকে ৬০ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু ভোক্তাদের আয় বাড়েনি। তাই বিক্রি এখন কমতির দিকে।'

যোগাযোগ করা হলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ক্যাব) এর সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, `ব্যবসায়ীদের একটি অংশ বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে পুঁজি করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। এতে ভোক্তাদের অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ এখন অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছে আর অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছে।`

`ওষুধ ও খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অবৈধ, অযৌক্তিক ও অনৈতিক মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত', যোগ করেন তিনি।

 

Comments

The Daily Star  | English
Mahdi Amin, adviser to BNP acting chairperson Tarique Rahman

‘BNP’s 31-point charter embodies public will’

Mahdi Amin, adviser to BNP acting chairperson Tarique Rahman, speaks to The Daily Star

11h ago